বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ম্যাচ

আবারও বিশ্বকাপের লড়াইয়ে বাংলাদেশ। ৩ জুন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাছাইপর্বের শেষ পর্ব শুরু করবে বাংলাদেশ দল। ফুটবল আর বিশ্বকাপ—বাংলাদেশের জন্য দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুটি শব্দ। ফুটবলের মান বিচারে বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্ব বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এক অলীক স্বপ্ন হলেও সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার লড়াইটা আমাদের জন্য একেবারে নতুন কিছু নয়। সেই ১৯৮৫ থেকে শুরু। এরপর থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপের বাছাইতে ছিল বাংলাদেশের উপস্থিতি। এশিয়ার বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে এ লড়াইগুলো সম্মান বাঁচানোর হলেও অনেক সময় বাংলাদেশ ঝলক দেখিয়েছে। জয়ের আনন্দে মাতিয়েছে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। দোহায় ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ ‘ই’তে তিনটি ফিরতি ম্যাচের আগে অতীত দিনের মধুর স্মৃতি রোমন্থন মন্দ লাগবে না নিশ্চয়ই...।

১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ খেলেছিল আশীষ ভদ্রের নেতৃত্বে।
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া, ১৯৮৫, ঢাকা

আশীষ ভদ্রের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। খেলাগুলো হয়েছিল ১৯৮৫ সালের মার্চ-এপ্রিলে। গ্রুপসঙ্গী ছিল ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত। প্রথমবারের আবির্ভাবেই দুটি জয় তুলে নিয়েছিলেন আশীষ-জনি-চুন্নু-আসলাম-ওয়াসিমরা। সে সময়ের বিচারে সমশক্তির থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ের পর ঢাকা স্টেডিয়ামে ইন্দোনেশিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। স্মরণীয় সে ম্যাচে আশরাফউদ্দিন চুন্নু ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত এক গোল করেছিলেন। অন্য গোলটি এসেছিল কায়সার হামিদের কাছ থেকে।

বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড, ১৯৮৯, ঢাকা

১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ পড়েছিল কঠিন গ্রুপে। চীন, ইরানের সঙ্গে থাইল্যান্ড। ইরান-চীন সব সময়ই এশীয় ফুটবলের শীর্ষ শক্তি। নাগালের মধ্যে থাকা থাইল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ব্যাংককে ১-০ গোলে হেরে বসেছিল বাংলাদেশ। সেই দুঃখ বাংলাদেশ ভুলেছিল দেশের মাটিতে ফিরতি ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে। ঢাকা স্টেডিয়ামের সে ম্যাচে রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বিরের একটি গোল মনে রাখবেন অনেকেই। প্রায় মাঝমাঠ থেকে একটি বল নিয়ে চার থাই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোল করেছিলেন দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই প্লে মেকার। অন্য দুটি গোল সত্যজিৎ দাস রূপু ও ওয়াসিম ইকবালের। এ ম্যাচটি আলাদা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের দাপুটে পারফরম্যান্সের কারণে।

বাংলাদেশের প্রথম ‘বিশ্বকাপ’ দল। দাঁড়ানো (বাঁ দিক থেকে) জনি, ইলিয়াস, বাতেন, চুন্নু, আজমত, অলোক। বসা (ডান দিক থেকে) মহসিন, ওয়াসিম, খুরশিদ বাবুল, আসলাম, আশীষ ভদ্র।
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-ইরান, ১৯৮৯, তেহরান

এ ম্যাচ বাংলাদেশের ফুটবলে স্মরণীয়। ১৯৯০ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের গ্রুপে থাকা ইরান ছিল শক্তিধর দল। সেবার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার অন্যতম বড় দাবিদার ছিল তারা। কিন্তু তেহরানের আজাদি স্টেডিয়ামে ৬০–৭০ হাজার দর্শকের সামনে বাংলাদেশ সেই ইরানকেই চেপে ধরেছিল। মরিয়া ইরান ম্যাচটা জিতেছিল একেবারে শেষে যোগ করা সময়ের গোলে। ম্যাচটা ইরান জিততে না পারলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নস হওয়াই কঠিন হয়ে যেত তাদের জন্য। একেবারে শেষ মুহূর্তে হজম করা সেই গোল ছিল দুর্ভাগ্যজনক। ডান প্রান্তে একটি ফ্রি কিক ক্লিয়ার করতে পারেননি কায়সার হামিদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের রক্ষণ। চার ডিফেন্ডারের মাঝখানে দিয়ে হেড করে বলটি জালে পাঠিয়ে দেন ইরানি ফরোয়ার্ড। ঢাকার প্রথম লেগে ইরানের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।

২০০১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের গোলকিপার আমিনুল হক
ছবি: এএফপি

বাংলাদেশ-মঙ্গোলিয়া, ২০০১, দাম্মাম

এই ম্যাচে জয় প্রত্যাশিতই ছিল। এর ওপর প্রথম লেগে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে সমালোচিত হয়েছিল বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় লেগে তাই জয়ের জন্য মরিয়া ছিলেন আলফাজ-হাসান আল মামুন-মতিউর মুন্নারা। শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলে জেতে বাংলাদেশ। তবে এ ম্যাচ আলাদা হয়ে গেছে আলফাজ আহমেদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে। মঙ্গোলিয়ার বক্সের বাইরে থেকে চার-পাঁচজন ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণ করে উল্টো ঘুরে দারুণ এক শটে প্রথম গোলটি করেছিলেন আলফাজ। দ্বিতীয় গোলটিও একক প্রচেষ্টায়। ডান প্রান্ত দিয়ে একাই বল নিয়ে মঙ্গোলিয়ান ডিফেডারদের গতিতে পেছনে ফেলেন আলফাজ। তৃতীয় গোলটি আসে রোকনুজ্জামান কাঞ্চনের পা থেকে।

১৯৮৯ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের এ দলটি খেলেছিল দারুণ।
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-লেবানন, ২০১১, ঢাকা

এ ম্যাচ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের সেরা ম্যাচ হিসেবেই গণ্য হবে যেকোনো বিচারে। লেবাননের মতো শক্তিশালী দলকে ২-০ গোলে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন জাহিদ হাসান এমিলিরা। তবে এ জয় বড় একটা আক্ষেপও তৈরি করেছিল। বৈরুতে প্রথম পর্বে লেবাননের কাছে ৪-০ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ। গোলের ব্যবধানটা সে ম্যাচে কম রাখতে পারলে বাছাইপর্বে হয়তো আরও ওপরের স্তরে খেলার সুযোগ হতো বাংলাদেশের। পরের স্তরে যেতে পারলে বাংলাদেশ হতো এশীয় ফুটবলে সে সময়ের শীর্ষ ১৫ দলের একটি। সে ম্যাচে মিঠুন চৌধুরীর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় গোলটি করেন জাহিদ হাসান এমিলি নিখুঁত এক হেডে।