‘বিশ্বকাপ’ও দেখে এল বাংলাদেশ

আফিফের খেলা দেখে মুগ্ধ বাংলাদেশের ফুটবলারেরা।ছবি: টুইটার

গত শুক্রবার রাতে যাঁরা কাতারের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের ফুটবল ম্যাচ দেখতে টিভির সামনে বসেছিলেন, জামাল ভূঁইয়াদের পারফরম্যান্সে নিশ্চয় হতাশ–ই হয়েছেন তাঁরা। তবে কাতার দল সম্পর্কে যাঁদের ন্যূনতম ধারণা আছে, তাঁদের হতাশাটা কম হওয়ার কথা। কারণ, বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাই ম্যাচে বাংলাদেশ যে খেলতে নেমেছিল এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে!

কাতার দলটিকে শুধুমাত্র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নের ব্রাকেটবন্দী করেই রাখা যাবে না। ঘরের মাঠে ২০২২ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বার্সেলোনার যুব দলের সাবেক কোচ অ্যালেক্সিস সানচেজের অধীনে ঢেলে সাজানো হয়েছে দলটিকে। শুধু বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবেই সন্তুষ্ট খাকতে চায় না মরুর দেশটি, চায় আরও কিছু। সানচেজের অধীনে ২০১৯ এশিয়ান কাপে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়া যেন তাদের সে ইচ্ছাটাকেই ফুটিয়ে তুলেছে।

বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন জাভিও।
ছবি: সংগৃহীত

ফিরতি পর্বের ম্যাচটির জন্য প্রায় দুই সপ্তাহ কাতারে থেকেছে বাংলাদেশ দল। সেখানে অনুশীলনের সুবাদে বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের অভিজ্ঞতা হয়েছে ২০২২ বিশ্বকাপের অনুশীলন ভেন্যুতে অনুশীলন করার। বাংলাদেশের ম্যাচটি আবার মাঠে বসেই দেখেছেন বার্সেলোনার সাবেক মিডফিল্ডার জাভি হার্নানদেজ, যিনি বর্তমানে একই সঙ্গে কাতার বিশ্বকাপের দূত এবং আল–সাদ ক্লাবের কোচ। ৫–০ গোলের হারটিকে এক পাশে সরিয়ে রাখলে তপু বর্মন–বিশ্বনাথ ঘোষদের কাতার–অভিজ্ঞতায় তাই মুগ্ধতা কম নয়।

কাতারের মতো দলের বিপক্ষে জাতীয় দলের জার্সিতে এই প্রথম খেলেছেন রাইটব্যাক বিশ্বনাথ। ম্যাচে দুই গোল করা কাতারের ফরোয়ার্ড আকরাম আফিফকে ঠেকানোর মূল দায়িত্বটা ছিল তাঁর কাঁধেই। কিন্তু স্প্যানিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব সেভিয়া যুব দলে খেলা আকরাম বিশ্বনাথকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁকে কেন এশিয়ার ভবিষ্যতের সেরা তারকা ভাবা হচ্ছে। ২৪ বছর বয়সী আফিফের দ্রুতগতি ও বলের নিয়ন্ত্রণের ঘোর থেকেই যেন বের হতে পারছেন না বিশ্বনাথ, ‘আমি এই প্রথম কাতারের মতো এশিয়ার সেরা দলের বিপক্ষে খেললাম। ওদের সঙ্গে আমাদের রাত–দিন পার্থক্য। আমার পাশে খেলেছেন ১১ নম্বর (আফিফ)। প্রথম স্পর্শেই বল নিয়ে বের হয়ে যায়। অনেক উঁচুমানের খেলোয়াড়।’

কাতারের মতো শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ হয় না বাংলাদেশের ফুটবলারদের।
ছবি: টুইটার

বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ছাড়া সাধারণত কাতারের মতো শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ হয় না বাংলাদেশের ফুটবলারদের। দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা পর্যন্তই তাঁদের অভিজ্ঞতা। তাদের সঙ্গে খেলে হঠাৎ মখমলের মতো মাঠে কাতারের মতো দলের বিপক্ষে নামলে কী হয়, তা বোঝা যায় লেফটব্যাক রহমত মিয়ার কথায়, ‘নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলোর বিপক্ষে ভুল করলে পুষিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু ওদের (কাতার) বিপক্ষে ভুলের কোনো সুযোগ নেই। ভুল হলে সেটার মাশুল দিতে হবে গোল হজম করে। আর আমরা তো এই রকম দ্রুতগতির মাঠে খেলেও অভ্যস্ত নই। বল মনে হয় দৌড়ায় ওখানে!’

কাতার দলের ৯ জন খেলোয়াড় ছিলেন আল–সাদের। শিষ্যদের খেলা দেখতেই মূলত সেদিন গ্যালারিতে ছিলেন কয়েক বছর আগেও বার্সেলোনা দলের মাঝমাঠের প্রাণভোমরা থাকা জাভি। জাভি আসবেন বা গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগ করছেন, বিষয়টি জানা ছিল না বাংলাদেশের ফুটবলারদের। খেলা শেষে জাভির উপস্থিতি জানতে পেরে অবাক হয়েছেন মিডিফিল্ডার সোহেল রানা, ‘খেলার সময়ও জানতাম না জাভি খেলা দেখছেন। খেলা শেষে শুনে অবাক হয়েছি তাঁর মতো বিশ্বমানের একজন ফুটবলার আমাদের খেলা দেখেছেন!’

দোহায় বাংলাদেশ দল অনুশীলন করেছে আল আজিজিয়াহ বুটিক ক্লাবের মাঠে। সাজানো–গোছানো মাঠটাতে অনুশীলনের সময় স্ট্রাইকার তৌহিদুল আলমের বারবার মনে হয়েছে, এখানেই হয়তো বিশ্বকাপের সময় বড় কোনো দল অনুশীলন করবে! তৈাহিদুল বলেন, ‘ওদের সব চিন্তা এখন বিশ্বকাপ নিয়ে। মাঠগুলো এত সুন্দর! আমরা যেখানে অনুশীলন করেছি, বিশ্বকাপের সময় সে মাঠেই হয়তো ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার মতো দলগুলো অনুশীলন করবে।’ তপু বলছিলেন, ‘আসলে ফুটবল খেলার জন্য এ ধরনের সুযোগ–সুবিধা থাকা প্রয়োজন। ভালো মাঠ, আধুনিক জিম, সুইমিংপুল...। এমনি এমনি তো আর ওরা এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়নি।’

কাতারেও দেশকে সমর্থক দিতে এসেছিলেন ফুটবল পাগল বাংলাদেশিরা।
ছবি: বাফুফে

আর কারও না হোক, ৪ ডিসেম্বরের ম্যাচে বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমানের খেলা নিশ্চয়ই জাভির চোখেও পড়েছে। ৫ গোল খেলেও অবিশ্বাস্য সব সেভে যে বাঁচিয়েছেন আরও কত গোল থেকে! কাতারে আগে গেলেও এবার যেন সেখান থেকে বিশ্বকাপটাই দেখে এলেন আনিসুর, ‘সবকিছু অবিশ্বাস্য! বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কত কিছু যে সাজাতে হয়, তা এবার কাতারে দেখেছি।’

এশিয়ার সেরা দল আর ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগিতকদের বিপক্ষে বাংলাদেশের হারটা অবধারিতই ছিল। ব্যবধান ৫–০ হয়ে যাওয়ায় কষ্টটাই যা একটু বাড়ল। তবে বিশ্বনাথ–আনিসুরদের ‘বিশ্বকাপ’ দর্শনের অভিজ্ঞতাও তো কম নয়!