বিশ্বকাপে আরব হসন্ত

মিসরের এমন বাজে পারফরম্যান্সে হতাশ হয়েছেন সবাই। ছবি: এএফপি
মিসরের এমন বাজে পারফরম্যান্সে হতাশ হয়েছেন সবাই। ছবি: এএফপি
>এবারের বিশ্বকাপে আরব দেশগুলোর মধ্যে অংশ নিয়েছে মিসর, সৌদি আরব, তিউনিসিয়া ও মরক্কো। চারটি দলই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছে, সেটিও মিসরকে হারিয়েছে সৌদি আরব। তিউনিসিয়া আজ শেষ ম্যাচ খেলবে পানামার বিপক্ষে

রাশিয়া বিশ্বকাপের পরতে পরতে যেন চমক সাজানো। বিশ্বকাপে আলো ছড়াচ্ছে মেক্সিকো, জাপান, সেনেগালের মতো দলগুলো। এমন চমকজাগানিয়া বিশ্বকাপেও আরব দলগুলো কিছু করতে পারেনি। বিশ্বকাপ হতে পারত আরব ফুটবলের বসন্তের উপলক্ষ। কিন্তু এবারের আসরে আরব দেশগুলো দাগ কেটেছে সামান্যই। যেন হসন্তের মতো, কোনো বর্ণের শেষে প্রায় দেখাই যায় না এমন উপস্থিতি! হতাশ করেছে মিসর, সৌদি আরব ও তিউনিসিয়া। সাহসী ফুটবল খেললেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মরক্কোকে।

উদ্বোধনী ম্যাচ থেকেই আরবদের বাজে পারফরম্যান্সের যাত্রা শুরু। গ্রুপ পর্বের শেষ পর্যন্ত তাদের এ যাত্রা অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাই এবার কোনো আরব দেশ থাকছে না। মোহাম্মদ সালাহর জন্য এবার মিসরের ওপর বাড়তি প্রত্যাশা তো ছিলই। কিন্তু আশায় গুড়েবালি, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বাজে খেলা দলগুলোর মধ্যে এবার মিসরই সবচেয়ে এগিয়ে। গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচের একটিতেও জয় পায়নি তারা। কিন্তু আরবদের এমন করুণ দশার কারণ কী? বাকি দলগুলো মাঝারি সারি থেকে যেখানে এগিয়ে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে, কেন এখনো আরব দেশগুলো পড়ে আছে সেই তিমিরেই?

এর উত্তর মিলেছে সৌদি আরবের সাবেক কোচ নেলো ভিনগাদার একটি কথায়। আরব দেশগুলোর খুব বেশি খেলোয়াড় ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোতে খেলে না। ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে না খেলে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করার উপায় নেই। আর তিউনিসিয়ার কোচ নাবিল মালৌল মনে করেন, খেলায় উন্নতি করতে হলে আরবদের জীবনধারা পাল্টাতে হবে, ‘আমাদের কিছু সাধারণ সমস্যা আছে। তা ছাড়া তেমন কোনো আহামরি পারফরম্যান্স নেই। যদি ভালো কিছু করতেই হয়, তাহলে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের অনুশীলনেও পরিবর্তন আনা উচিত। সত্যি বলতে, বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে আরও দুই প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হবে।’

বিশ্বকাপে মিসরের বাজে পারফরম্যান্স সবচেয়ে চোখে লেগেছে। মোহাম্মদ সালাহদের ঘিরে এবার প্রত্যাশার বুদ্‌বুদ তৈরি হয়েছিল। মিসরের বাজে খেলার ব্যাখ্যা দিয়েছেন কোচ হেক্টর কুপার, ‘বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আমরা এ রকম খেলেই চূড়ান্ত পর্বে এসেছি। তাই গ্রুপ পর্বে নতুন কৌশলে খেলা আমাদের জন্য কঠিন ছিল। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা এক ধাঁচে খেলে আসছি, এভাবে খেলে সাফল্যও পেয়েছি। এত কম সময়ে খেলার ধাঁচ পাল্টে ফেললে আমাদের বিশ্বকাপে আরও বিপদে পড়তে হতো।’

মরক্কোর খেলা নজর কেড়েছিল এবার। ছবি: এএফপি
মরক্কোর খেলা নজর কেড়েছিল এবার। ছবি: এএফপি

এই হতাশার মধ্যে যা একটু আশার ফুল ফুটিয়েছে মরক্কো। ভাগ্য সাহসীদের পাশে থাকে, কথাটা তাদের বেলায় খাটেনি। ইরান, স্পেন ও পর্তুগালের সঙ্গে ভালো খেলেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিশ্বকাপকে বিদায় জানাতে হয়েছে দলটিকে। রেফারিও তাদের সঙ্গে বিমাতা আচরণ করেছে বলে অভিযোগ মরক্কো কোচ হার্ভে রেনার্ডের, ‘অনেকে হতাশ হলেও এটি সত্যি যে তৃতীয় ম্যাচের আগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আমাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে পর্তুগালের সেন্টার ব্যাক পেপে অনেকগুলো ফাউল করেছিল। তা রেফারির চোখেই পড়েনি। ওই ম্যাচ জিতলে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারত। তবে আমরা শিখেছি কীভাবে বড় ম্যাচগুলো খেলতে হয়।’

পরের বিশ্বকাপের স্বাগতিক আরব। ২০২২ বিশ্বকাপ হবে কাতারে। প্রথমবারের মতো আরব কোনো দেশ বিশ্বকাপের আয়োজক। ফুটবল নিয়ে আরবের সাধারণ মানুষের মধ্যেও আবেগের কমতি নেই। মাঠেও কি দেখা যাবে কোনো চমক? চার বছর অপেক্ষা করতে হবে উত্তরটার জন্য। তবে ২০১৮ হতে পারে তাদের জন্য শিক্ষার, বিশ্ব ফুটবলের সেরা শক্তি হওয়ার দৌড়ে আরব দেশগুলো কোথায় আছে, আর কোথায় আছে বাকিরা!

এবারের আসরে আরব দেশগুলো

দল

ম্যাচ

জয়

হার

ড্র

গোল দিয়েছে

গোল খেয়েছে

সৌদি আরব

২ গোল

মিসর

মরক্কো

তিউনিসিয়া

ইরান

৩