বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামে একদিন

২০২২ কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম ভেন্যু আল–রাইয়ান স্টেডিয়াম।ছবি: লেখক

দোহার প্রাণকেন্দ্র থেকে সড়কপথে ২০ কিলোমিটার পেরোলেই দৃষ্টি কাড়ে বিশাল এক স্টেডিয়াম। মূল সড়ক থেকে নেমে এর ভেতর ঢুকলে শুধুই মুগ্ধতা। ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের অন্যতম ভেন্যু এই আল–রাইয়ান স্টেডিয়াম।

দোহার কাছাকাছি আল–রাইয়ান এলাকার অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামটিতে ২০২২ বিশ্বকাপের ৫টি গ্রুপ ম্যাচ ও ১টি সেমিফাইনাল হবে। কাতার ভ্রমণে আসা মানুষদের কাছে এই স্টেডিয়াম এখন অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। কদিন আগে দোহায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ-কাতার ম্যাচ কাভার করতে গিয়ে স্টেডিয়ামটি দেখার সুযোগ হয় এই প্রতিবেদকের।

আল রাইয়ান স্টেডিয়াম, দোহা।
ছবি: রয়টার্স

স্টেডিয়ামের ভেতর ঢুকতেই এক নিরাপত্তাকর্মী এগিয়ে আসেন। স্টেডিয়াম দেখার ইচ্ছার কথা জানালে ভেতরে স্বাগত জানান। একটু ভেতরে যেতেই বড় খোলা জায়গা। এদিক-ওদিক কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। দুজন বাংলাদেশি শ্রমিকের সঙ্গেও দেখা। শ্রমিক সুপারভাইজারের অনুমতি নিয়ে স্টেডিয়ামের ভেতরে যেতেই চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। এত সুন্দর সবুজ ঘাসের মাঠ আর নান্দনিক গ্যালারি! গ্যালারিতে বসানো চেয়ারগুলো যেন খেলা দেখার জন্য আগাম আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। গ্যালারির এক পাশে কাঠের কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। এটুকু বাদ দিলে জনমানব তেমন চোখে পড়ল না।

ক্ষণিকের জন্য মনে পড়ে গেল ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের কথা। স্টেডিয়াম এলাকায় দোকানপাটের গাদাগাদি। ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব চারপাশ। নাক-মুখ চেপে যেতে হয় ভেতরে। আর এখানে? স্টেডিয়ামের সামনে বিশাল খোলা জায়গা। বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় এখানেই হবে ফ্যান জোন। স্টেডিয়ামের অদূরে কাতারের অন্যতম বৃহৎ বিপণিবিতান মল অব কাতার। বিশ্বকাপের সময় যাতায়াতের সুবিধার জন্য স্টেডিয়ামের গা ঘেঁষে করা হয়েছে মেট্রোরেলের স্টেশন।

গত ১৮ ডিসেম্বর কাতারের জাতীয় দিবসে আল–সাদ ও আল–আরাবি ক্লাবের মধ্যে কাতার আমির কাপের ফাইনাল দিয়ে উদ্বোধন হয়েছে আল-রাইয়ান স্টেডিয়ামের। এখন বিশ্বকাপের অপেক্ষা। বাংলাদেশের মতো কাতারও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পেয়েছে। তবে দুই দেশের পার্থক্য যোজন যোজন। মাত্র সাড়ে ১১ হাজার বর্গকিলোমিটারের কাতার নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে সারা বিশ্বই মেতে উঠবে। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বকাপ ফাইনাল। এর ঠিক ২ বছর আগে ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার আল-রাইয়ান স্টেডিয়ামটি নতুনভাবে যাত্রা শুরু করল।

আল রাইয়ান স্টেডিয়ামের পিরবেশ মুগ্ধতা ছড়াবেই।
ছবি: লেখক

আল-রাইয়ান হচ্ছে ২০২২ বিশ্বকাপ সামনে রেখে উদ্বোধন করা চতুর্থ স্টেডিয়াম। বাকি ৩টি স্টেডিয়াম আল–খলিফা, আল–জানোব ওয়াকরা ও দোহা এডুকেশন সিটি। খলিফা স্টেডিয়াম আগে থেকেই ছিল, এখন আরও আধুনিক করা হয়েছে। এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামটি নতুন। নতুন তৈরি হয়েছে আল–জানোব স্টেডিয়ামও।

বিশ্বকাপের জন্য বানানো বা সংস্কার করা স্টেডিয়ামগুলোর নকশা হয়েছে আরব সংস্কৃতির আদলে। আল-রাইয়ানে যেমন মরুভূমির সৌন্দর্য, উদ্ভিদ-প্রাণীর ছাপ আছে। রাতের বেলায় আলো ঝলমলে স্টেডিয়ামটির সৌন্দর্য যায় আরও বেড়ে। স্টেডিয়ামের মূল নাম আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়াম। এটি আল-রাইয়ান স্পোর্টস ক্লাব এবং আল-খারিতিয়থ স্পোর্টস ক্লাবের হোম ভেন্যু। ২০০৩ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়ামে দর্শক ধারণক্ষমতা ২১ হাজার।

কিন্তু এই যে বিশাল সব স্টেডিয়াম, অবকাঠামো—বিশ্বকাপের পর এগুলো কী করবে কাতার? সে সিদ্ধান্তও নাকি হয়ে আছে। বিশ্বকাপের পর কিছু অনুন্নত ফুটবল দেশকে প্রতিটি স্টেডিয়ামের ১৫-২০ হাজার করে আসন দিয়ে দেবে কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

কাতারপ্রবাসী প্রকৌশলী আবদুর রহিম জানালেন, স্টেডিয়ামগুলোতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ অন্য দেশের অনেক শ্রমিক কাজ করছেন। শোনা যাচ্ছে, ২০২২ বিশ্বকাপের সময় কাতারে লোকজন কমাতে এই শ্রমিকদের যাঁর যাঁর দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। যদি সেটাই হয়, তবু ঐতিহাসিক উদ্যোগের সাক্ষী হতে পেরেই সন্তুষ্ট থাকবেন বলে জানালেন বাংলাদেশি শ্রমিকেরা।