বিশ্বের সেরা ফুটবলারের চোখে ‘খারাপ শিক্ষক’ তিনি

রবার্ট লেফানডফস্কির চোখে ‘খারাপ শিক্ষক’ ইয়ুর্গেন ক্লপছবি: রয়টার্স

লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো— বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় এখন দুজনের কেউই নন। দু'বছর আগে রিয়াল মাদ্রিদের তারকা মিডফিল্ডার লুকা মদরিচ যা করে দেখিয়েছিলেন, সেটাই এবার করে বিশ্বকে করে দেখিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেফানডফস্কি। মেসি-রোনালদোর দ্বৈত রাজত্বে হানা দিয়েছেন। হয়েছেন বিশ্বের সেরা ফুটবলার। সেই ফুটবলারই যখন কাউকে ‘খারাপ শিক্ষক’ বলেন, নড়েচড়ে বসতেই হয়!

কিন্তু কে লেফানডফস্কির চোখে খারাপ শিক্ষক? উত্তরটা অনেকের কাছেই চমক হিসেবে আসতে পারে। খারাপ শিক্ষক হিসেবে তিনি যে লিভারপুলের সদা হাস্য কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের নাম নিয়েছেন! নিজের বর্তমান ও সাবেক সকল শিষ্যের কাছেই যিনি সমান জনপ্রিয়।

লেফানডফস্কি যখন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলতেন, তখন ম্যানেজার হিসেবে পেয়েছিলেন ক্লপকে। দুজন মিলে জিতেছেন অনেক কিছুই। পরে দুজনের পথই আলাদা হয়ে যায়। লেভা চলে যান বায়ার্ন মিউনিখে, ক্লপের গন্তব্য হয় লিভারপুল। ক্লপের ছোঁয়ায় বৈশ্বিক তারকা হওয়ার স্বাদ পাওয়া লেভা পরে কাজ করেছেন পেপ গার্দিওলা, কার্লো আনচেলত্তি, ইয়ুপ হেইঙ্কেস, নিকো কোভাচের মতো কোচের অধীনেও।

ক্লপ লেভার কাছে ‘খারাপ শিক্ষক’ অন্যঅর্থে!
ছবি: রয়টার্স

সবাইকে বাদ দিয়ে ক্লপকে ‘খারাপ শিক্ষক’ বললেও লেফানডফস্কি সেটার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভালোভাবেই। তাঁর চোখে খারাপ শিক্ষক সে-ই, যিনি বরাবরই তাঁর ছাত্রকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দিতে ভালোবাসেন। ছাত্রকে সেরা বানানোর জন্য সব সময় নতুন নতুন জিনিস শেখানোর চেষ্টা করেন, ‘ইয়ুর্গেন আমার কাছে বাবার মতো। তবে কোচ হিসেবে, ওকে আমি খারাপ শিক্ষক বলব। কিন্তু খারাপ বলতে যে আমি আক্ষরিক অর্থেই খারাপ বলছি তাঁকে, তা কিন্তু নয়। আমি ব্যাখ্যা করতে দিন। ছোটবেলায় যখন আপনি স্কুলে পড়তেন, তখন কোন শিক্ষক আপনার মধ্যে দাগ কেটেছিল? সেই শিক্ষক, যে সব সময় আদর-সোহাগ দিয়ে আপনাকে মাথায় তুলে রাখত এবং আপনার কাছ থেকে কিছুই প্রত্যাশা করত না? নাকি সে, যে সব সময় আপনার সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দিত, আপনাকে আরও ভালো হওয়ার সুযোগ করে দিত— সে? আপনি সব সময় ওই “খারাপ শিক্ষক”দেরই মনে রাখবেন, যিনি আপনাকে সব সময় পরিশ্রম করাতেন, যিনি আপনাকে সেরা হতে সাহায্য করতেন। ইয়ুর্গেন ঠিক অমন শিক্ষকই ছিল।'

ছাত্ররা যাতে ক্রমাগত উন্নতি করেন, ক্লপের লক্ষ্য ছিল সেটাই, ‘ইয়ুর্গেন কখনই আপনাকে ছাত্র হিসেবে 'বি' ক্যাটাগরির থাকতে দেবেন না। উনি সব সময় 'এ প্লাস' ক্যাটাগরির ছাত্র চাইতেন। সবাইকে পরিশ্রমের মাধ্যমে “এ প্লাস” ক্যাটাগরির হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। সেটা যে তিনি নিজের জন্য চাইতেন তা নয়, সেটা তিনি তাঁর খেলোয়াড়দের ভালোর জন্যই চাইতেন।’

লেফানডফস্কি বেশ ভালোই বোঝেন, আজ তিনি যে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হতে পেরেছেন, তা ক্লপের ওসব শিক্ষার জন্যই, ‘তিনি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। আমি যখন ডর্টমুন্ডে এলাম, আমি তখন সবকিছু তাড়াতাড়ি করতে চাইতাম। এক পাসে করতে চাইতাম। পাস দেওয়া, শট নেওয়া। ইয়ুর্গেন আমাকে শেখালেন, দরকার হলে আরও বলে আরও দুই-একটা স্পর্শ করে পাস দাও, আরও সময় নাও। আমার কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগেনি, কিন্তু আমি বেশি বেশি গোল করা শুরু করলাম।’

ক্লপের কথামতো লেভা যখন সে কাজ ভালোভাবে করা শুরু করলেন, তখন শিষ্যর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন ক্লপ, ‘আমি যখন সে কাজটা করা শিখে গেলাম, তখন তিনি আমাকে আবারও চ্যালেঞ্জ করলেন তাড়াতাড়ি পাস-শট নেওয়ার জন্য। এক স্পর্শেই। তিন আমার ভালোই জন্যই করেছিলেন এটা।’

লেফানডফস্কির এ কথাগুলোই হয়তো প্রমাণ করে এখন লিভারপুল কেন এত সফল