বেনজেমার মাথায় চড়ে পার পেল রিয়াল

হেডে গোলের পর বেনজেমার উল্লাস। জোড়া গোল করেন ফরাসি তারকাছবি: এএফপি

রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপা লিগে নেমে যাবে কি না, তা নিয়ে হিসাব–নিকাশের সঙ্গে রসিকতাও চলেছে। চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ পর্ব থেকে যে দল কখনো ছিটকে পড়েনি, তাদের ইউরোপায় নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

কাল রিয়ালের বাঁচা–মরার ম্যাচে হিসাব ছিল সহজ—বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে জিততেই হবে। নইলে রিয়াল তো গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়বেই, এর সঙ্গে কোচের চাকরি যেতে পারে জিনেদিন জিদানের।

ফরাসি কিংবদন্তির এই শঙ্কা আপাতত উড়িয়ে দিলেন আরেক ফরাসি—করিম বেনজেমা। তাঁর জোড়া গোলে মনশেনগ্লাডবাখকে ২–০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয় উঠেছে রিয়াল।

আলফ্রেডো ডি স্টেফানো স্টেডিয়ামে কাল রাতে বেশ ঠান্ডা পড়েছিল। কিন্তু রিয়ালের খেলায় জমে যাওয়ার লেশমাত্র ছিল না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছিল জিদানের দল।

রক্ষণে ফিরেছেন সার্জিও রামোস, বেনজেমা, রদ্রিগো ও ভিনিসিয়ুসকে দিয়ে আক্রমণভাগ সাজিয়েছিলেন রিয়াল কোচ জিদান। পেছনে লুকা মদরিচ, কাসেমিরো, টনি ক্রুস ও ভাসকেজ। শুধু ভিনিসিয়ুস প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি।

৭৪ মিনিটে তাঁর জায়গায় সার্জিও আরিবাস নেমে তাঁর চেয়ে ভালো খেলেছেন। তবে রিয়াল এই ম্যাচটা যে জিততে মরিয়া সেটি টের পাওয়া গেছে প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যে।

বেনজেমার হেড। ভরসার প্রতিদান দিয়েছে তিনি
ছবি: এএফপি

ডান প্রান্ত থেকে লুকাস ভাসকেজের বাতাসে ভাসানো বলে হেড করে রিয়ালকে প্রথম গোলটি এনে দেন বেনজেমা। ৩১ মিনিটে করা গোলটিও এসেছে হেড থেকে।

তবে বেনজেমার দ্বিতীয় গোলের উৎস রদ্রিগোর ক্রসটি ছিল দেখার মতো। বাতাসে ভেসে টুপ করে মাথায় এসে পড়ার মতো ক্রস করেছিলেন ব্রাজিলিয়ান।

ম্যাচে প্রায় পুরো সময়ই দাপট দেখিয়েছে রিয়াল। ২ গোল ব্যবধানে জিতলেও সবগুলো সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তা পাঁচ, ছয় এমনকি সাত গোলও হতে পারত!

বিরতির আগেই আরও এক গোল পেতে পারত রিয়াল। লুকা মদরিচের শটে আঙুল ছুঁয়ে বিপদমুক্ত করেন মনশেনগ্লাডবাখ গোলরক্ষক সোমার। টনি ক্রুসের শটও দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন তিনি। এ ছাড়া রামোসের হেডও জাল খুঁজে পায়নি তাঁর দক্ষতায়।

একের অধিকসংখ্যকবার জার্মান ক্লাবটির গোলপোস্টও কাঁপিয়েছে রিয়াল। তাদের গোলপোস্টে মোট ৭টি শট রাখতে পেরেছে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৩ বার শিরোপাজয়ীরা। মুনশেনগ্লাডবাখ রাখতে পেরেছে মাত্র ১টি শট। ম্যাচের ৬৪ শতাংশ সময় বল দখলে রেখেছিল রিয়াল।

দুর্দান্ত খেলা মদরিচ শুধু গোলটাই পাননি
ছবি: টুইটার

তবে মদরিচের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। কাল রাতে গোল না পাওয়াটা তাঁর দুর্ভাগ্য। প্রতিপক্ষের অর্ধে ৫৪টি পাস দিয়েছেন এই ক্রোয়াট, যা অন্য সব খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি।

মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগকে একসূত্রে গেঁথেছিলেন মদরিচ। অফসাইডের জন্য তাঁর একটি গোল বাতিল হয়। কাঁপিয়েছেন মনশেনগ্লাডবাখের পোস্টও।

যে রিয়ালের বাদ পড়া নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অনেকে, কাল রাতের পর সেই দলই ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে। ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলোয় উঠল বি গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় দল রিয়াল।

তাদের সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের রানার্সআপ দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠেছে মনশেনগ্লাডবাখ। একই গ্রুপ থেকে ইন্টার মিলানের মুখোমুখি হয়েছিল শাখতার দোনেৎস্ক।

শেষ ষোলোয় উঠতে হলে জয়ের বিকল্প ছিল না দুই দলের। কিন্তু ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র করায় বাদ পড়েছে দুই দলই।