বেলফোর্টের ৩-এ আবাহনীর ৬

বেলফোর্টের গোল উদ্‌যাপনে সঙ্গী সতীর্থরা।ছবি: প্রথম আলো

এমন দুর্বার কারভেন্স বেলফোর্টকেই তো শুরু থেকে দেখতে চেয়েছিলেন আবাহনী কোচ মারিও লেমোস। দুর্ভাগ্য আবাহনীর, প্রথম লেগে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি হাইতিয়ান স্ট্রাইকার। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে ১২ ম্যাচে গোল করেছিলেন ৫টি, আবাহনীও ভুগেছে গোলখরায়। শিরোপাদৌড় থেকেও বলতে গেলে অনেকটা ছিটকে পড়েছে আবাহনী।  

তবে দ্বিতীয় লেগে পুরো অন্য চেহারায় আকাশি-নীল দলটি, অন্য চেহারায় বেলফোর্টও। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ বেলফোর্টের হ্যাটট্রিকে আবাহনী ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে রহমতগঞ্জকে। দ্বিতীয় লেগের তিন ম্যাচেই বেলফোর্ট পেলেন ৪ গোল। এবারের লিগে এটা আবাহনীর সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়।  

আজ বেলফোর্ট ছাড়াও ১টি করে গোল করেছেন মামুন মিয়া ও মাসিহ সাইঘানি। অন্য গোলটি আত্মঘাতী।

লিগের শুরুতে বেলফোর্ট পরপর দুই ম্যাচে গোল পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে করেন ১টি করে গোল। কিন্তু এরপর রহমতগঞ্জ, মোহামেডান, চট্টগ্রাম আবাহনী ও মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষে টানা চার ম্যাচে গোল ছিল না বেলফোর্টের। পরের ছয় ম্যাচে মাত্র ৩ গোল! ১টি করে গোল করেন শেখ জামাল, সাইফ স্পোর্টিং ও বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে।

১৫ ম্যাচে ৯ জয়, ৫ ড্র ও ১ হারে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুই নম্বরে উঠে এল আবাহনী।

যদিও দ্বিতীয় লেগের প্রথম ম্যাচে পুলিশের বিপক্ষে ২-২ গোলের ড্রয়ের ম্যাচে বেলফোর্টের কোনো গোল নেই। তবে ব্রাদার্সের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ১টি গোল। এরপর আজ রহমতগঞ্জের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক। লিগে এটি বেলফোর্টের প্রথম হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে এবারের প্রিমিয়ার লিগে হ্যাটট্রিক হয়েছে ৫টি।

প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে রহমতগঞ্জকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল আবাহনী। কিন্তু কে জানত আজ এভাবে সেই রহমতগঞ্জকে উড়িয়ে দেবে প্রিমিয়ার লিগের ছয়বারের চ্যাম্পিয়নরা? রহমতগঞ্জের ফরোয়ার্ড মেহবুব হাসান আর চিডি ফেলিক্স দু–একবার আক্রমণে উঠেছেন। কিন্তু ম্যাচে রহমতগঞ্জের দুই ডিফেন্ডার খোরশেদ বেকনাজারভ ও আলা নাসের ছিলেন একেবারেই অনুজ্জ্বল। এমন দুর্বল রক্ষণ ভেঙে যে কবার বক্সে ঢুকেছে আবাহনীর ফরোয়ার্ডরা, বেশির ভাগ সময়ই সফল হয়েছেন।

ম্যাচের শুরু থেকেই অবশ্য আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলেছে আবাহনী। আর সেই আক্রমণের ফল, ২৭ মিনিটে প্রথম গোল। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বেলফোর্টের বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে রায়হান হাসান বক্সে ঢোকেন। কিন্তু রায়হানের শট রহমতগঞ্জ ডিফেন্ডার বেকনাজারভের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢোকে জালে। এরপর ম্যাচের ৩৭ মিনিটে বেলফোর্ট ‘শো’ শুরু। বক্সের মধ্যে একেবারে অরক্ষিত বেলফোর্ট বাঁ পায়ের জোরালো শটে করেন ২-০। গোলের জোগানদাতা ছিলেন রাফায়েল অগাস্তো।

বেলফোর্ট মৌসুমে নিজের ও আবাহনীর প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন।
ছবি: প্রথম আলো

বেলফোর্ট শুরুতে ডান প্রান্তে খেললে দিদারুল তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রান্ত বদলে বেলফোর্ট হয়ে ওঠেন আরও ভয়ংকর। ম্যাচের ৪৩ মিনিটে রাফায়েলের ক্রসে দারুণ হেডে বেলফোর্ট করেন ৩-০। আর ৬২ মিনিটে মামুন মিয়ার বাড়ানো বলে আলতো টোকায় হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন বেলফোর্ট। এর আগে লিগের চারটি হ্যাটট্রিক করেছিলেন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের ওবে মনেকে, শেখ জামালের ওমর জোবে, বসুন্ধরা কিংসের রবসন ও রাউল বেসেরা। হ্যাটট্রিক পূর্ণ হতেই বেলফোর্টকে অভিনন্দনবৃষ্টিতে ভিজিয়েছেন সতীর্থরা।

একের পর এক গোল হজম করে রহমতগঞ্জ ততক্ষণে কোনো রকমে রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত। এরই ফাঁকে ৬৫ মিনিটে ডিফেন্ডার মামুন মিয়া বক্সে ঢুকে যেভাবে আবাহনীর পঞ্চম গোলটি করেছেন, তা দেখে কে বলবে তিনি একজন ডিফেন্ডার! বক্সের সামনে বেলফোর্টের সঙ্গে দেওয়া-নেওয়ার পর বুলেটগতির শটে বল জড়ালেন জালে। ষষ্ঠ গোলটিও এক ডিফেন্ডারের, গোল করায় তাঁর অবশ্য খ্যাতি-ট্যাতি আছে—মাসিহ সাইঘানি। ৮৫ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে বক্সের বাইরে দাঁড়ানো মাসিহ সাইঘানি দূরপাল্লার শটে করেন গোলটি।

১৫ ম্যাচে ৯ জয়, ৫ ড্র ও ১ হারে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুই নম্বরে উঠে এল আবাহনী। সমান ম্যাচে ৩ জয়, ৫ ড্র ও ৭ হারে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে আটেই রইল রহমতগঞ্জ।