ব্যর্থতার সাতকাহন
>অস্কার রুগেরির হাতে ১৯৯৩ কোপা আমেরিকার ট্রফি। ফুটবলের বড় আসরে আর্জেন্টাইনদের সর্বশেষ সুখস্মৃতি। এরপর সর্বশেষ ২৩ বছরে আরও সাতটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে আর্জেন্টিনা, হেরেছে সাতবারই। এক নজরে সেই ব্যর্থতার এই সাতকাহন
১৯৯৫
কনফেডারেশনস কাপ
ডেনমার্ক ২-০ আর্জেন্টিনা
১৯৯৩ কোপা আমেরিকার পর ওটাই ছিল আর্জেন্টিনার প্রথম ফাইনাল। তখন অবশ্য ফিফা কনফেডারেশনস কাপ নয়, টুর্নামেন্টের নাম ছিল কিং ফাহাদ কাপ। তাতে ড্যানিয়েল পাসারেলার দল খেলতে গিয়েছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। খেলছিলও শিরোপা ধরে রাখার মতোই। কিন্তু ফাইনালে তালগোল পাকিয়ে ফেললেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা আর হার্নান

ক্রেসপোরা। মাইকেল লাউড্রপ আর পিটার রামুনসেনের গোলে ২-০ ব্যবধানে জিতল ডেনিশরা।
২০০৪
কোপা আমেরিকা
ব্রাজিল ২ (৪)-২ (২) আর্জেন্টিনা
পেরুর লিমায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে সেই ফাইনালে দুবার এগিয়ে গিয়েও ম্যাচ জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। দুবারই সমতা ফেরায় ব্রাজিল। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে খেলা ২-২ সমতায় শেষ হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানে আন্দ্রেস ডিআলেসান্দ্রো ও গ্যাব্রিয়েল হেইঞ্জ আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম দুটি শটই নষ্ট করেন। পরের দুটি শটে গোল হলেও ব্রাজিল প্রথম চারটি শটেই গোল করে ম্যাচ জিতে নেয়।
২০০৫
কনফেডারেশনস কাপ
ব্রাজিল ৪-১ আর্জেন্টিনা
আবারও প্রতিপক্ষ ব্রাজিল, আবারও আর্জেন্টিনার স্বপ্নভঙ্গ। এবার অবশ্য হোসে পেকারম্যানের আর্জেন্টিনাকে দাঁড়াতেই দেয়নি কার্লোস আলবার্তো পাহেইরার ব্রাজিল। কাকা আর আদ্রিয়ানোর গোলে প্রথমার্ধেই এগিয়ে গিয়েছিল ব্রাজিল, দ্বিতীয়ার্ধে রোনালদিনহো আর আদ্রিয়ানোর আরও একটি করে গোলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় আর্জেন্টিনা। পরে পাবলো আইমার একটা গোল শোধ করেছেন, কিন্তু সেটি শুধু হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।
২০০৭
কোপা আমেরিকা
ব্রাজিল ৩-০ আর্জেন্টিনা
ভেনেজুয়েলায় হওয়া ওই টুর্নামেন্টে শিরোপার বড় দাবিদার ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে কার্লোস দুঙ্গার ব্রাজিলের সামনে আলফিও বাসিলের আর্জেন্টিনাকে দেখাল ছন্নছাড়া। হুলিও ব্যাপতিস্তার গোলে ব্রাজিল এগিয়ে যাওয়ার পর রবার্তো আয়ালার আত্মঘাতী গোলে আরও পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। ঘুরে আর দাঁড়াতে পারেনি তারা, উল্টো দ্বিতীয়ার্ধে দানি আলভেজের গোল ব্রাজিলের শিরোপা নিশ্চিত করে দেয়। কোপায় ওটাই ব্রাজিলের সর্বশেষ শিরোপা, ওই হার দিয়েই শুরু জাতীয় দলের হয়ে লিওনেল মেসির স্বপ্নভঙ্গের গল্প।
২০১৪
বিশ্বকাপ
জার্মানি ১-০ আর্জেন্টিনা
বলতে গেলে একাই আর্জেন্টিনাকে ফাইনাল পর্যন্ত তুলে এনেছিলেন মেসি। কিন্তু ফাইনালে একেবারে অচেনা হয়ে রইলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। নিজে সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন। সঙ্গে গঞ্জালো হিগুয়েইনের নিদারুণ ব্যর্থতা, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার অনুপস্থিতি আরও একবার কাঁদাল আর্জেন্টিনাকে। নির্ধারিত সময় গোলশূন্য সমতায় শেষ হওয়ার পর ১১৩ মিনিটে মারিও গোটশের গোল ট্রফি এনে দিল জার্মানিকে।
২০১৫
কোপা আমেরিকা
চিলি ০ (৪)-০ (১) আর্জেন্টিনা
বিশ্বকাপ জেতা হয়নি, হলো না মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইটাও। লিওনেল মেসির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার মাশুল আবারও গুনতে হলো আর্জেন্টিনাকে। ফাইনালে তাঁকে আটকে দিলেন চিলির কোচ হোর্হে সাম্পাওলি, আর গোলের পথ ভুলে গেলেন অন্য আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডরা। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোলশূন্য সমতার পর টাইব্রেকার। মেসির গোলে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন টিকে ছিল কিছুক্ষণ। কিন্তু হিগুয়েইন ও এভার বানেগা পরপর দুটি শট নষ্ট করে ভেঙে দেন সেই স্বপ্ন। টানা চার শটে গোল করে প্রথমবার কোপা জিতল চিলি।
২০১৬
কোপা আমেরিকা
চিলি ০ (৪)-০ (২) আর্জেন্টিনা
আরও একটা ফাইনাল, প্রতিপক্ষ সেই চিলি এবং প্রায় একই চিত্রনাট্য। শুধু এবার ব্যর্থতার দায়টা মেসির নিজের একটু বেশি। টাইব্রেকারে আর্তুরো ভিদাল চিলির প্রথম শট নষ্ট করার পর আর্জেন্টিনার খুব ভালো সুযোগ ছিল এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু মেসি নষ্ট করলেন আর্জেন্টিনার প্রথম শট। মাচেরানো ও আগুয়েরো পরের দুটি শটে গোল করলেও লুকাস বিলিয়ার চতুর্থ শটটা ফিরিয়ে দিলেন চিলির নায়ক গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো। আর্জেন্টিনার ফাইনাল-ট্র্যাজেডিতে যোগ হলো নবতম অধ্যায়।