ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় বসুন্ধরার জয়

দুই ব্রাজিলিয়ানের রসায়ন বসুন্ধরাকে ফাইনালে তুলে নিয়েছে।ছবি: প্রথম আলো

শিরোপা প্রত্যাশী দুই দলের মুখোমুখিতে লাতিন লড়াইয়ের আবহ ছিল। গোল করে আবাহনীকে এগিয়ে নিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফ্রান্সিসকো তোরেস। তোরেসের পাল্টা দিয়ে বসুন্ধরাকে সমতায় ফিরিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান জোনাথন ফার্নান্দেজ। বসুন্ধরার শেষ গোলটিও তাঁর। দুই ব্রাজিলিয়ানের গোলের সন্ধ্যায় আর্জেন্টিনার নামই-বা বাদ যাবে কেন! মাঝে বসুন্ধরার হয়ে ব্যবধান বাড়িয়েছেন আর্জেন্টাইন রাউল বেসেরা।

সবকিছু মিলিয়ে কী দুর্দান্ত এক ম্যাচ। প্রথমার্ধে আবাহনীর এগিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ার্ধে বসুন্ধরার সমতায় ফেরা। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে সমতায় থাকা ম্যাচটি গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। প্রস্তুতিতে এগিয়ে থাকায় অতিরিক্ত সময়ে শুধুই বসুন্ধরার দাপট। দু-দুটি গোল সে স্বাক্ষরই তো হয়ে রইল। আবাহনীকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা তিনবার ফেডারেশনের কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা।

আবাহনী ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে বসুন্ধরা কিংসের রোমাঞ্চকর জয়ের ম্যাচের শেষ দিকে দৃষ্টিকটু একটি বিষয়ও থাকল। আবাহনীর খেলোয়াড়দের সহকারী রেফারিকে তাড়িয়ে বেড়ানো ও ম্যাচ পুনরায় শুরু করার ক্ষেত্রে বেলফোর্টের অনাহূত বাধা দেওয়ার দৃশ্য বাদ দিলে দারুণ এক ম্যাচ দেখার স্মৃতি নিয়েই স্টেডিয়াম ছেড়েছেন দর্শকেরা।

বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ঠেকাতে আবাহনীর কোচ মারিও লেমোস একাদশে গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন এনেছিলেন। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো আজ মাঝমাঠে সোহেল রানার সঙ্গে হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলানো হয়েছে প্রথাগত ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরীকে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, ব্রাজিলিয়ান রবসন ও জোনাথন রসায়ন জমতে না দেওয়া। প্রথমার্ধে সে উদ্দেশ্য কিছুটা সফলও বলা যায়।

তবে রবসন বলে কথা। তাঁর পায়ে বল যাওয়া মানেই ‘এই বুঝি কিছু হয়ে গেল।’ ১২ মিনিটে গোল হয়েও যেতে পারত। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সাইড পোস্ট। বাম প্রান্তে রবসনের ডান পায়ের বাঁকানো শট সাইড পোস্টে লেগে বাইরে। বসুন্ধরার আক্রমণ ঠেকানোতেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছিল আবাহনীকে। সে দলই উল্টো ৩১ মিনিটে তোরেসের গোলে এগিয়ে যায়। কেভিন বেলফোর্টের রক্ষণচেরা পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে প্রবেশ করে দূরের পোস্টে জড়িয়েছেন তোরেস। ৪১ মিনিটে তোরেসের পায়েই লেখা হতে পারত ২-০! তাঁর দুর্দান্ত ভলি দারুণ সেভ দিয়েছেন বসুন্ধরার গোলরক্ষক আনিসুর রহমান।

সতীর্থদের হাত থেকে রেফারিকে বাঁচাচ্ছেন আবাহনী গোলরক্ষক।
ছবি: প্রথম আলো

দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফিরতে মরিয়া বসুন্ধরা। ৫১ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান সুরভি ছড়ানো গোলে সমতায় ফেরে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আবাহনীর তিনজন ডিফেন্ডারের চক্রব্যূহর মধ্যে থেকে পায়ের পাতা দিয়ে পোস্টে মারেন জোনাথন। ক্রসবারের ভেতরের অংশে লেগে গোল লাইনের ওপারে গিয়ে পড়ে। নির্ধারিত সময়েই জয় পেতে পারত বসুন্ধরা। কিন্তু সমতায় ফেরার পর কয়েকটি গোল মিস করেছে তারা।

অতিরিক্ত সময়ে বসুন্ধরার একচ্ছত্র দাপট। ১১১ মিনিটে ২-১ করেন বেসেরা। জোনাথনের রক্ষণচেরা থ্রুতে বক্সের মধ্যে প্রথম স্পর্শে গোলমুখে বল রেখেছিলেন মতিন মিয়া। আলতো টোকা দিয়ে গোলটি করেন বেসারা। এই নিয়ে টুর্নামেন্টে টানা চার ম্যাচে গোল করলেন বেসেরা।

১২০ মিনিটে একটি অফসাইডকে কেন্দ্র করে হট্টগোল। নাবিব নেওয়াজ বল জালে প্রবেশ করার আগে অফসাইডের নির্দেশ দেন সহকারী রেফারি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হওয়ায় সহকারী ইকবাল আলমকে ধাক্কা দেন আবাহনীর বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। খেলা বন্ধ ছিল প্রায় ৮ মিনিট। পুনরায় খেলা শুরু হলে বসুন্ধরার ২-১ গোলের জয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচটি। যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে ৩-১ করেন জোনাথন। আজই প্রথম গোল পেয়েছেন জোনাথন। তাও আবার এক ম্যাচেই জোড়া গোল।

১০ জানুয়ারি ফেডারেশন কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের প্রতিপক্ষ সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।