ব্রাজিল কিংবদন্তির চোখে ম্যারাডোনার খেলা ‘পৃথিবীর সেরা দৃশ্য’

ছবিটি ২০০৮ সালের। যখন কলকাতায় এসেছিলেন ম্যারাডোনা।ছবি: এএফপি

ডিয়েগো ম্যারাডোনা কী ছিলেন, তিনি মানুষের হৃদয়ে কতটা জায়গা করে নিয়েছিলেন, এসব তাঁর মৃত্যুর পর নতুন করে সামনে এসেছে। তিনি যে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড কিংবা জাতিসত্ত্বার বাইরে নিজেকে নিতে পেরেছিলেন, সেটি নতুন করে বলার কিছু নেই। ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই তারকা ফুটবলের অবিসংবাদিত কিংবদন্তি হিসেবেই চিরদিন থেকে যাবেন মানুষের মনের মণিকোঠায়।

ম্যারাডোনা নিজেকে চিরকালীন ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা রেষারেষিরও ঊর্ধ্বে তুলে নিয়েছিলেন। সেটি সম্ভব হয়েছিল তাঁর অসাধারণ প্রতিভার গুণেই। তাঁর খেলা দেখে মুগ্ধ হয়নি এমন খুব কম মানুষই ছিলেন। এমনকি তাঁর প্রতিপক্ষও অনেক সময় বলেছেন, তাঁর অসাধারণ বল প্লে প্রতিপক্ষ হিসেবেও উপভোগ করতেন তাঁরা। কেউ কেউ তো বলেছেন, ম্যারাডোনা তাঁর বল প্লে দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট দলকে হয়তো খুন করছেন, সেই দলটিতে খেলা ফুটবলাররাও ম্যারাডোনার প্রতিভাশৈলীতে হাত তালি দিতে কেবল বাকি রাখত।

ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফু যেমন। ম্যারাডোনার বল নিয়ে কারিকুরি করছেন, এটা পৃথিবীর সেরা দৃশ্যই মনে হয়েছে তাঁর কাছে।

আমরা যারা ম্যারাডোনার ভক্ত, তাঁদের কাছে ম্যারাডোনাকে খেলতে দেখা ছিল অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার। পৃথিবীর সেরা ব্যাপার।
বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল অধিনায়ক কাফু

ম্যারাডোনা তাঁর কাছে সত্যিকারের একজন কিংবদন্তি। তাঁর মতে, ম্যারাডোনা চলে যাওয়াতে ফুটবল যেন দারুণ এক জাদুকরকেই হারিয়ে ফেলল, ‘কোনো সন্দেহ নেই, ম্যারাডোনা সর্বকালের সেরাদের একজন। ফুটবলে সর্বকালের সেরা কেবল দুজন, একজন দিয়েগিতো (ম্যারাডোনাকে কাফু এই নামেই ডাকতেন), আরেকজন পেলে।’

১৯৮২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যারাডোনা।
ছবি: এএফপি

কাফু ম্যারাডোনার বল প্লে-কে একটু অন্যভাবে দেখেন, ‘ম্যারাডোনা যখন বল পায়ে নিতেন, তখন মনে হতো তিনি কোনো ছোট্ট শিশুকে আদর করছেন। ম্যারাডোনার বল পায়ে নিলেই মনে হতো তিনি বলটাকে যেন শিশুর মতোই আগলে রাখছেন। তিনি তো বল নিয়ে রীতিমতো মজা করতেন। ফুটবল তো অনেকেই খেলেন, কিন্তু বলের সঙ্গে মজা করতে পারেন কজন?’

কাফুর মতে ম্যারাডোনার মৃত্যুতে ফুটবল যেন জাদুকরী ছোঁয়া হারিয়ে ফেলল, ‘আমরা যারা ম্যারাডোনার ভক্ত, তাঁদের কাছে ম্যারাডোনাকে খেলতে দেখা ছিল অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার। পৃথিবীর সেরা ব্যাপার। আমার একটা খেলার কথা মনে আছে। তিনি জুভেন্টাসের বিপক্ষে বক্সের মধ্য থেকে একটা সেট পিসে গোল করেছিলেন, যেন তিনি আদর করে বলটা গোলে পাঠিয়ে দিলেন। আমরা তাঁর মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত কেবল একজন ফুটবল তারকাকে হারিয়েছি বলে নয়, আমরা তাঁর মৃত্যুতে হারিয়েছি একজন ফুটবল জাদুকর, একজন শিল্পীকে।’

ম্যারাডোনা যে নিজেকে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার রেষারেষির ঊর্ধ্বে নিয়ে গিয়েছিলেন তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ পেলের ইনস্টাগ্রাম পোস্টও। যে মানুষটির সঙ্গে তাঁর নিরন্তর তুলনা হয়েছে, সেই পেলেই ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন কত বড় কিংবদন্তি ছিলেন প্রয়াত আর্জেন্টাইন, ‘অনেকে সারা জীবন ধরে আমার সঙ্গে ম্যারাডোনার তুলনা করেছে। আমাদের মধ্যে কে সেরা, এই বিতর্কে সময় নষ্ট করেছে। ম্যারাডোনা ছিল একজন জাদুকর, একজন কিংবদন্তি। সে আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। তাঁর সিংহহৃদয় ছিল অনন্য। এই পৃথিবী আরও সুন্দর হতো, যদি আমার সঙ্গে ওর তুলনাটা একটু কম হতো। আমরা যদি একে অন্যকে আরও বেশি প্রশংসা দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারতাম।’