ব্রাজিলিয়ান ঝলকে সেমিফাইনালে আবাহনী

দলকে সেমিফাইনালে তোলার আনন্দ ফ্রান্সিসকোর।ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ। রেফারি আলমগীর সরকার যোগ হওয়া সময় দেন ৫ মিনিট। সুযোগটা কাজে লাগাতে চেয়েছে দুই দলই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবাহনীকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন ফ্রান্সিসকো তোরেস। নাসিরের লম্বা থ্রো থেকে বল পেয়ে বক্সের সামনে শট নেন সাইগানি। বক্সের মধ্যে তখন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নাবিব নেওয়াজ ও ফ্রান্সিসকো। নাবিবের বুকে লেগে বলটা মাটিতে পড়তেই সেটা বাড়িয়ে দেন ফ্রান্সিসকোর উদ্দেশ্যে। বলটা পেয়েই দারুণ প্লেসিংয়ে জালে জড়িয়ে জার্সি খুলে আবাহনী গ্যালারির দিকে ছুটে চলে যান ফ্রান্সিসকো।

মুহূর্তেই গোলটা বাতিলের জন্য রেফারিকে ঘিরে ধরেন উত্তর বারিধারার খেলোয়াড়েরা। ওই সময় আহত হয়ে বারিধারা অধিনায়ক সুমন রেজা মাঠে পড়ে ছিলেন। বারিধারা ভেবেছিল রেফারি ফেয়ার প্লে ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেটা দেননি বলেই যত বিতর্ক। রেফারির সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে বারিধারার বলবয় বেলাল লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। এমন উত্তেজনা ছড়ানো এক কোয়ার্টার ফাইনাল শেষে এই গোলটাই ভাগ্য গড়ে দিল।

ম্যাচটি যখন অতিরিক্ত সময়ে গড়াবে বলে ধরেই নিয়েছিল দর্শকেরা, ঠিক সেই সময়ে ৯৪ মিনিটে সুযোগসন্ধানী ফ্রান্সিসকোর মূল্যবান গোল। এই গোলটিই শেষ পর্যন্ত আবাহনীকে তুলে দিয়েছে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে। আগামী ৭ জানুয়ারি ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বসুন্ধরা কিংসের মুখোমুখি হবে আবাহনী। ৬ জানুয়ারি অন্য সেমিফাইনালে সাইফ স্পোর্টিংয়ের প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম আবাহনী।

বারিধারা রক্ষণ আজ দারুণ পারফরম্যান্স করেছে।
ছবি: প্রথম আলো

গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচেই জয়। গ্রুপসেরা আবাহনী তুলনামূলক দুর্বল উত্তর বারিধারাকে হারিয়ে সহজেই সেমিফাইনালে উঠে যাবে, এমনটাই অনুমিত ছিল। কিন্তু উত্তর বারিধারার কোচ শেখ জাহিদুর রহমান তাদের রক্ষণটা বানিয়ে রেখেছিলেন ‘লখিন্দরের বাসরঘর’। সেই রক্ষণ ভেদ করে বল জালে জড়ানো নাবিব নেওয়াজদের জন্য ছিল কঠিন এক সমস্যা। অবশ্য রক্ষণ সামলে আক্রমণে উঠে নিজেদের খেলাটা ভালোই খেলার চেষ্টা করেছে বারিধারা।

ফেডারেশন কাপের ১১ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে সারাক্ষণ গোলের জন্য হাপিত্যেশ করতে হয়েছে। ডাগআউটে অস্থির পায়চারি করেছেন কোচ মারিও লেমোস। আজই প্রথম কোচ খেলিয়েছেন চার বিদেশি ফ্রান্সিসকো, মাসিহ সাইগানি, কারভেন্স বেলফোর্ট ও রাফায়েল অগাস্তোকে। চুলের ছাঁটে আর্তুরো ভিদালকে মনে করিয়ে দেওয়া ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ফ্রান্সিসকোই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছেন!

গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে আবাহনীর যে পাঁচটি গোল এসেছে, এর দুটিই করেছেন ডিফেন্ডার সাইগানি। নাবিব নেওয়াজ, বেলফোর্টদের কাছে তাই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বেশি করে গোলের আশা করেছিলেন কোচ। কিন্তু হতাশ করেছেন তাঁরা। এমনকি মোহামেডানের বিপক্ষে জোড়া গোল করা জুয়েল রানাও হতাশ করেছেন আজ। বল নিয়ে বক্সে ঢুকতে পারেননি। মিস পাস দিয়েছেন একাধিকবার। আবাহনীর ফরোয়ার্ডদের কড়া পাহারায় রেখে স্বাভাবিক খেলাটাই যে খেলতে দেননি বারিধারার ডিফেন্ডাররা। তবু মাঝেমধ্যে রায়হানের লম্বা থ্রোগুলো থেকে গোলের চেষ্টা করেছেন বটে নাবিব নেওয়াজরা, কিন্তু কখনো বল তুলে দিয়েছেন বারিধারা গোলরক্ষক মোহাম্মদ আলিফের হাতে। কখনো বল বেরিয়ে গেছে বারের ওপর দিয়ে।

ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় ফ্রান্সিসকোদের হতাশ করেছে বারিধারা।
ছবি: প্রথম আলো

টুর্নামেন্টজুড়ে গোলের এত সময় অপেক্ষা করতে হয়নি আবাহনীকে। অবশ্য ম্যাচের ২১ মিনিটেই প্রথম গোলের দেখা পেতে পারত আকাশি নীল দলটি। রায়হানের থ্রো থেকে সাইগানির দারুণ এক হেড সে–যাত্রায় গোললাইন সেভ করেন উত্তর বারিধারার মিডফিল্ডার পাপন সিং।

অবশ্য মাঝেমধ্যেই আবাহনীর বক্সে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন বারিধারার ফরোয়ার্ড সুমন রেজা ও মিসরের ফরোয়ার্ড মোস্তফা আবদুল খালেক। ৩৬ মিনিটে সুমন রেজা বাঁ পায়ের যে আগুনে গোলা শটটা নেন, সেটা কোনো রকমে ফিস্ট করে ফেরান আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম। অবশ্য বিরতিতে যাওয়ার আগে আরেকবার সুযোগ পায় আবাহনী। নাবিব নেওয়াজের শট এবার গোলবারের সামনে থেকে ক্লিয়ার করেন মিসরের ডিফেন্ডার মাহমুদ সাঈদ। তখনো বারিধারা গোলরক্ষক আলিফ জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন আগেই।

নকআউট পর্বে বারিধারাকে হারাতেই ঘাম ছুটে গেছে আবাহনীর। টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে জিতে ফাইনালে উঠতে হলে নাবিব নেওয়াজদের বড় রকমের একটা অ্যাসিড টেস্ট দিতে হবে, তা না বললেও চলছে।