ব্রাজিলের হার ও নেইমারের লাল কার্ড

‘মাথা গরম কোরো না। তোমার মতো প্রতিভাধর খেলোয়াড়কে মাথাটা ঠান্ডা রাখতে হবে’—ম্যাচ শেষে নেইমারকে বলছিলেন কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজ। কথাটা মন দিয়ে শোনার আগেই অবশ্য প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়কে তাক করে বল মেরেছেন, তা নিয়ে হয়েছে হুলুস্থুল। মাঠ থেকে বেরোনোর সময় লাল কার্ডও দেখতে হয়েছে ব্রাজিল অধিনায়ককে। কাল কোপা আমেরিকার ম্যাচে l এএফপি
‘মাথা গরম কোরো না। তোমার মতো প্রতিভাধর খেলোয়াড়কে মাথাটা ঠান্ডা রাখতে হবে’—ম্যাচ শেষে নেইমারকে বলছিলেন কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজ। কথাটা মন দিয়ে শোনার আগেই অবশ্য প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়কে তাক করে বল মেরেছেন, তা নিয়ে হয়েছে হুলুস্থুল। মাঠ থেকে বেরোনোর সময় লাল কার্ডও দেখতে হয়েছে ব্রাজিল অধিনায়ককে। কাল কোপা আমেরিকার ম্যাচে l এএফপি

ওই ম্যাচ নিয়ে আর কোনো ক্ষোভ নেই, কথাটা তো নিজেই বলেছিলেন নেইমার। তবে কি সেটা শুধু কথার কথা ছিল? বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার ফাইনালের মাস দুয়েক পর কলম্বিয়ার বিপক্ষে আবার মাঠে নেমে হুয়ান ক্যামিলো জুনিগার সঙ্গে উষ্ণ করমর্দন—সেটাও ছিল লোক দেখানো? ভেতরে ভেতরে কি জুনিগার দল কলম্বিয়ার প্রতি ক্ষোভটা পুষে রেখেছিলেন নেইমার? নইলে বছর খানেক পর আরেকবার কলম্বিয়ার মুখোমুখি হয়ে কেন মেজাজ হারাবেন বারবার!
ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার চূড়ান্তভাবে নিয়ন্ত্রণ হারালেন ম্যাচ শেষে। সান্তিয়াগো স্টেডিয়ামে পরশুর ম্যাচটা ততক্ষণে জেইসন মুরিলোর একমাত্র গোলে জিতে নিয়েছে কলম্বিয়া। পেয়েছে ব্রাজিলের বিপক্ষে ২৪ বছর পর জয়, থামিয়ে দিয়েছে টানা ১১ ম্যাচ জেতা ব্রাজিলের জয়রথ। হারে কঠিন হয়ে গেছে কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের গ্রুপ উতরানোর হিসাবটাও। সেই হতাশাতেই কিনা শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই কলম্বিয়ার পাবলো আরমেরোর গায়ে বল মেরে ফেলে দিলেন। এরপরই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। কলম্বিয়ার কার্লোস বাক্কা পেছন থেকে ধাক্কাও মারেন নেইমারকে। রেফারি লাল কার্ড দেখান বাক্কা–নেইমার দুজনকেই।
নেইমারের এই মেজাজ হারানোর মূল্য দিতে হতে পারে তাঁর দলকেও। পর পর দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখায় ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে পরের ম্যাচে এমনিতেই খেলতে পারতেন না নেইমার। ম্যাচ শেষে আবার সরাসরি লাল কার্ড দেখায় আরও দুটি ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন ব্রাজিল অধিনায়ক। দলের সেরা খেলোয়াড় তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ—ব্রাজিলের কত বড় ধাক্কা বুঝে নিন!
হাতে বল লাগিয়ে নেইমার একটা হলুদ কার্ড দেখেছিলেন ম্যাচের প্রথমার্ধেই। লাল কার্ডটা হয়তো পেয়ে যেতেন ওই ঘটনার পরপরই। হতাশার সঙ্গে বলে ঘুষি দিয়েও পার পেয়ে যান সে যাত্রা। কিন্তু ম্যাচ শেষে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি।
ব্রাজিল অধিনায়ক অবশ্য মেজাজ হারানোর কারণ হিসেবে বললেন বাজে রেফারিংয়ের কথা। ম্যাচের পর ব্রাজিলিয়ান একটি টেলিভিশনের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি অভিযোগ করেছেন রেফারিং নিয়ে, ‘বাজে রেফারিদের ম্যাচ পরিচালনা করতে দিলে এ রকম হবেই। আমি মাথা গরম করিনি। রেফারিদের ভুলভাল বাঁশি বাজানো নিয়ে আমি তিতিবিরক্ত।’ প্রশ্ন তুলেছেন টুর্নামেন্টে তিনি যে দুটি হলুদ কার্ড দেখেছেন সেগুলো নিয়েও। পেরুর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নেইমারকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছিল হাত দিয়ে ভ্যানিশিং স্প্রে মুছে ফেলার জন্য। এমনকি পরশু অনিচ্ছাকৃত হ্যান্ডবলের কারণে হলুদ কার্ড দেখানোটাকে অযৌক্তিক মনে করেন নেইমার, ‘নিয়ম সব সময় আমার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয়। অন্য কেউ ভ্যানিশিং স্প্রে মুছে ফেললে হলুদ কার্ড দেখানো হয় না, আমাকে দেখানো হয়। আমার হাতে অনিচ্ছাকৃত বল লাগলেও আমি কার্ড দেখি।’
তবে রেফারির ওপর ক্ষোভ ঝেড়েও নেইমার স্বীকার করেছেন প্রতিপক্ষের গায়ে বল শট করাটা ঠিক হয়নি। তিনি এবং তার দল যে প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেননি বলেছেন সে কথাও, ‘আমি ভুল করেছি। তবে এটা খেলারই অংশ। আর আমার মনে হয় আমরা খারাপ খেলে হেরেছি। আমিও ভালো খেলতে পারিনি।’
নেইমারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে রেফারিং নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন সতীর্থ দানি আলভেজও, ‘নিজেদের তারকা ভাবা বন্ধ করতে হবে রেফারিদের। তারা তারকা নয়, তাদের দায়িত্ব শুধু ম্যাচটা সঠিকভাবে পরিচালনা করা।’ আলভেজের অভিযোগের তির কলম্বিয়ান খেলোয়াড়দের দিকেও, ‘ওরা জানে তার চরিত্র কেমন। ওরা চেয়েছে তাকে উত্ত্যক্ত করতে, নার্ভাস করে তুলতে।’
নেইমার আর আলভেজের অভিযোগ মূলত সামগ্রিক রেফারিং নিয়ে হলেও ব্রাজিল কোচ দুঙ্গা সরাসরি আঙুল তুলেছেন পরশু ম্যাচের রেফারি ওসেসের দিকে। চিলিয়ান এই রেফারিকে ব্রাজিল-বিদ্বেষী ইঙ্গিত করে ব্রাজিল কোচ বলেছেন, ‘কিছুদিন আগে কোপা লিবার্তাদোরেসের একটি ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব করিন্থিয়ানসের দুজন খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন এই রেফারি। ব্যাপারটা কাকতাল বলে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।’
ব্রাজিলিয়ানদের এই অভিযোগগুলো অবশ্য আমলে নিচ্ছেন না কলম্বিয়ার আর্জেন্টাইন কোচ হোসে পেকারম্যান। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বহুল আলোচিত ব্রাজিল-কলম্বিয়া ম্যাচেও অনেকগুলো সিদ্ধান্ত কলম্বিয়ার বিপক্ষে গিয়েছিল মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘আমরাও অনেক সময় হারি। কিন্তু হারের পর রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলি না।’ রেফারিংয়ের কারণে নয়, বরং কলম্বিয়াই ভালো খেলে ব্রাজিলকে হারিয়েছে বলে মনে করেন কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার হামেস রদ্রিগেজও, ‘চার দিন আগে আমরা ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ভালো খেলেও জিততে পারিনি। আজ ভালো খেলে জিতেছি। ফুটবলে এমন হতেই পারে।’ এএফপি, রয়টার্স।

তপ্ত ম্যাচের যত কথা
ম্যাচের পর আমি নেইমারকে বলেছিলাম শান্ত থাকতে। চার দিন আগে আমরাও ভেনেজুয়েলার কাছে হেরেছি। সেদিন আমারও রাগ উঠেছিল।
হামেস রদ্রিগেজ

ব্রাজিলের প্রতিটি ম্যাচেই এমন হচ্ছে। সবাই ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। কোপা আমেরিকা এমনই।
দানি আলভেজ

নেইমারকে পেলে ভালো হতো, কিন্তু পরের ম্যাচে তাকে পাচ্ছি না। দল হিসেবেই আমাদের এই সমস্যার সমাধান বের করতে হবে।
কার্লোস দুঙ্গা

প্রথমার্ধে কলম্বিয়া ভালো খেলেছে, দ্বিতীয়ার্ধে খেলা হয়েছে সমানে সমানে। শেষ পর্যন্ত আমরা জিতেছি। আমি ম্যাচটাকে এভাবেই দেখি।
হোসে পেকারম্যান