ভণ্ড! ইয়ুর্গেন ক্লপ?

লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। প্রিমিয়ার লিগে আজ মাঠে নামছে তাঁর দল।
ছবি: টুইটার

ইয়ুর্গেন ক্লপ ভন্ড?

নাহ, এ কেমন কথা! লিভারপুল কোচ তো ‘রবিন হুড’—জার্মান ফুটবল থেকে এ তকমা নিয়ে পা রেখেছেন ইংলিশ ফুটবলে। কথাটা আক্ষরিক অর্থে না মিললেও স্বাদ–গন্ধে শেরউডের নায়কের চেয়ে খুব দূরের কেউ নন ক্লপ।

বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কোচ থাকতেই কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করার বিপক্ষে ছিলেন এই জার্মান কোচ। তার চেয়ে খেলোয়াড় বানানোতে, খেলোয়াড়দের তারকায় রূপ দিতে বেশি উৎসাহ জার্মান এই কোচের। এখন লিভারপুলেও যা দেখিয়ে চলেছেন। সাদিও মানে, মোহাম্মদ সালাহ–রা আরও বড় তারকা হয়ে ওঠা, পাক্কা তিন দশক পর লিভারপুলের লিগ শিরোপা জেতা—এসবই ক্লপের অধীনে। আর সেই লোকটাকেই কি না এখন ‘ভন্ড’ বলছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম!

আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৩০ মিনিটে লিগে মাঠে নামছে লিভারপুল।
ছবি: রয়টার্স

ইংল্যান্ডে ক্লপের জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। লিভারপুল লিগ জেতার পর তা টের পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো তখন ক্লপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। এখন সেখানকার সংবাদমাধ্যমগুলো এক হয়ে যে ক্লপের নিন্দা করছে—তা নয়।

বিষয়টি অনেকটাই প্রিমিয়ার লিগে প্রতিদ্বন্দ্বীতার মতো। মাঠ তো মাঠ, মুখের কথাতেও কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। ইংলিশ ফুটবলের এ সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই চেলসির দলবদল নীতির সমালোচনা করেছিলেন ক্লপ। তা পছন্দ হয়নি ম্যানচেস্টারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ম্যানচেস্টার ইভনিং নিউজ’–এর। আর তাই সংবাদমাধ্যমটির চোখে, বছরের শীর্ষ ভন্ড হওয়ার চেস্টা করছেন ক্লপ।

ক্লপ এমনিতে ভালো মানুষের খোলসে থাকেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিনি বছরের শীর্ষ ভন্ড হওয়ার দৌড়ে সামিল হতে চান এই কথা বলে যে, লিভারপুল বিশেষ এক ক্লাব
ম্যানচেস্টার ইভনিং নিউজ, ম্যানচেস্টারের পত্রিকা

এবার মন্তব্যের নেপথ্য ঘটনা খুলে বলা যাক। দলবদলের বাজারে এবার চেলসির খরচের খাতা তো দেখা আছে! স্কোয়াড শক্তিশালী করতে খরচ করে ‘ধুলো অন্ধকার করে ফেলা’ বলতে যা বোঝায় আর কী! এরই মধ্যে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি পাউন্ডের বেশি খরচ করে ফেলেছে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের দল। অনেকে মনে করছেন, এ জন্য ফিফার আর্থিক সঙ্গতি নীতির (এফএফপি) সম্মুখীন হতে পারে স্টামফোর্ডের ক্লাবটি।

তবে ম্যানচেস্টার সিটি যেভাবে উয়েফার এ নীতি ভেঙে শাস্তি এড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে, তাতে এর উল্টোটা মনে করার লোকেরও অভাব নেই। সে যা-ই হোক, ম্যানচেস্টার ইভনিং নিউজ তাদের ওই প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘চেলসি বড় অঙ্কের খরচ করলেও ২০১৮ সালে লিভারপুলের ২৩৬ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ টপকে যেতে পারেনি। এমনকি সিটিও না।’

গত মৌসুমে এসেছেন পুলিসিক (ডানে), এই মৌসুমে ভের্নার (বাঁয়ে) ও জিয়েশের পাশাপাশি হাভার্টজ-চিলওয়েলকেও কিনেছে চেলসি।
ছবি: সংগৃহীত।

এখন প্রশ্ন হলো, সংবাদমাধ্যমটি কেন এমন উদাহরণ দিয়ে ক্লপকে ‘ভন্ড’ আখ্যা দিয়েছে? সেটি লিভারপুল কোচের একটি মন্তব্যের জন্য। চেলসির কাড়ি কাড়ি খরচ প্রসঙ্গে ক্লপ বলেছেন, ‘আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি যেখানে ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিত। তবে সেটি কতটা অনিশ্চিত, তা কিছু ক্লাবের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ। দেশ বা ধনকুবের এসব ক্লাবের মালিক। কিন্তু আমরা আলাদা একটি ক্লাব।’

কেমন ক্লাব লিভারপুল? ক্লপের ভাষায়, ‘আমরা দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলেছি, জিততে পেরেছি গত বছর। ক্লাবের ধরন ঠিক রেখেই প্রিমিয়ার লিগ জিতেছি গত মৌসুমে। আমরা রাতারাতি সব পাল্টে দিয়ে বলতে পারি না—চেলসির মতো হতে চাই। ওরা এবার অনেক খেলোয়াড় সই করাচ্ছে।’

একসঙ্গে এত খেলোয়াড় কেনার সুবিধা-অসুবিধা দুটিই দেখছেন ক্লপ, ‘সুবিধা আছে, কিন্তু এটার মানে এই খেলোয়াড়দের শিগগিরই একটা দলও হয়ে উঠতে হবে। কিন্তু ১১ জন সেরা ফুটবলার দলে টেনে আপনি আশা করতে পারবেন না এক সপ্তাহ পর তারা সেরা ফুটবল খেলবে। সেটা অনুশীলন মাঠেই করতে হয়।’

বোঝাই যাচ্ছে, রাশিয়ান ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচের অধীন চেলসি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষণায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ম্যান সিটিকে এক হাত নিয়েছেন ক্লপ। যদিও চেলসির খরচের ক্ষেত্রে ক্লপ যেটি হিসাবে আনেননি, সেটি হলো, দলবদলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চেলসি এক মৌসুমে কাউকে কিনতে পারেনি। তারওপর এ সময়ে এডেন হ্যাজার্ড-আলভারো মোরাতাদের মতো খেলোয়াড়দের চড়া দামে বিক্রি করে পাওয়া অর্থও এবারের দলবদলে কাজে এসেছে চেলসির।

তা ক্লপ চেলসির পাশাপাশি ম্যান সিটিকেও খোঁচা দিয়েছেন, সেটি পছন্দ হয়নি ম্যানচেস্টারের পত্রিকা ম্যানচেস্টার ইভনিং নিউজের। ক্লপের অধীনে লিভারপুলের পূর্বের খরচ মনে করিয়ে দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। আর তা মনে করিয়ে দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, ‘ক্লপ দুর্দান্ত একজন কোচ। এমনিতে ভালো মানুষের খোলসে থাকতে থাকেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিনি বছরের শীর্ষ ভন্ড হওয়ার দৌড়ে সামিল হতে চান এই কথা বলে যে, লিভারপুল বিশেষ এক ক্লাব।’

যদিও ২০১৮ সালে লিভারপুলের খরচের যে অঙ্ক ম্যানচেস্টার ইভনিং নিউজ লিখেছে, সেটি নিয়ে সংশয় আছে। পত্রিকাটি লিভারপুল ২৩৬ মিলিয়ন বা ২৩ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড খরচ করেছে লিখেছে। তবে দলবদলের মূল্য নিয়ে কাজ করা ফুটবলবিষয়ক সাইট ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাব, ২০১৮/১৯ মৌসুমে লিভারপুলের খরচ ছিল ১৮ কোটি পাউন্ড। আর ২০১৭/১৮ মৌসুমে লিভারপুলের খরচ ছিল ১৭ কোটি পাউন্ড।

যে অর্থের বড় অংশই এসেছে ফিলিপ কুতিনিওকে বার্সেলোনার কাছে বিক্রি করে পাওয়া ১৬ কোটি ইউরো (১২ কোটি নিশ্চিত প্রাপ্তি আর ৪ কোটি শর্তসাপেক্ষে) থেকে। পাশাপাশি কয়েক মৌসুম ধরে বেনটেকে-সাখো-সোলাঙ্কির মতো দলে অনিয়মিত অনেককে ভালো দামে বিক্রি করেছে লিভারপুল।