ভন্ডামির অভিযোগের জবাবে ক্লপ বললেন, ‘আমি ফার্গুসন নই’

মহারণের আগে কথার লড়াইয়ে আরেকটু যুক্ত হলেন ক্লপ।ছবি : রয়টার্স

আগামীকাল রোববার মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। বিশ্ব ফুটবলে যে ম্যাচে নজর থাকে সবচেয়ে বেশি ফুটবল দর্শকের, সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লিভারপুল ম্যাচ। ঐতিহ্যের বাইরেও এবার অন্য এক কারণে মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর এ ম্যাচ। বহুদিন পর লিগ শীর্ষস্থানের লড়াই ঠিক করে দেওয়া এক ম্যাচে নামছে দুই মহারথী ক্লাব।

সে কারণেই কি না, ম্যাচের আগেই কথার লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে বেশ ভালোভাবে। সে লড়াইয়ের আগুনে আরেকটু সলতে দিলেন লিভারপুলের ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ।

সাউদাম্পটনের বিপক্ষে লিগের সর্বশেষ ম্যাচে ১-০ গোলে হেরেছিল লিভারপুল। সে ম্যাচের বিশেষ একমুহূর্তে ডাচ মিডফিল্ডার জর্জিনিও ভাইনালডমের এক শট ডি-বক্সের মধ্যে হাতে লাগে সাউদাম্পটন ডিফেন্ডার জ্যাক স্টিফেনসের। এই ঘটনায় কোনো পেনাল্টি দেওয়া হয়নি লিভারপুলকে। সে কারণেই কি না, ম্যাচ শেষে পেনাল্টি নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেছিলেন ক্লপ। পেনাল্টি নিয়ে কথায় কথায় ইউনাইটেডের পেনাল্টি-ভাগ্য নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। গত মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পেনাল্টি আদায় করেছিল ইউনাইটেড।

এ মৌসুমেও পেনাল্টি ‘উপহার’ ধারা চলছে তাদের। এ নিয়েই কথা বলেছেন ক্লপ। আর ক্লপের মন্তব্য প্রশ্নবিদ্ধ মনে হচ্ছে সাবেক রেফারি মার্ক ক্ল্যাটেনবার্গের। তাঁর ধারণা, পেনাল্টি নিয়ে ক্লপের এভাবে কথা বলাটা এক ধরনের ভণ্ডামি। মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচের আগে রেফারিদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন লিভারপুল কোচ—এমনটাই বলেছেন ক্ল্যাটেনবার্গ। সে কথার জবাব দিয়ে কথার লড়াই আরেকটু জমিয়ে দিয়েছেন ক্লপ।

প্রসঙ্গত, ক্ল্যাটেনবার্গ বলেছিলেন, ক্লপের দলের সালাহ-মানেরাও ডাইভ দেয়
ছবি : রয়টার্স

ক্ল্যাটেনবার্গ বলেছিলেন, রোববারের ম্যাচে রেফারিদের চাপে রাখার জন্যই ক্লপ চাল চালছেন। এদিক থেকে ক্লপের মধ্যে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসনের ছায়াও খুঁজে পাচ্ছেন। রেফারিদের চাপে রেখে নিজের দলের পক্ষে সিদ্ধান্ত আদায় করার জন্য বিখ্যাত ছিলেন ইউনাইটেডের স্কটিশ কোচ। এমনকি ফার্গুসনের সময়ে রেফারিরা ফার্গুসনের চাপের কারণেই ইউনাইটেডের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিতেন, এখন ইউনাইটেডের চাপের কারণে তাদের পক্ষে সিদ্ধান্তের হার একেবারে শূন্য না হলেও ফার্গুসনের সময়ের চেয়ে অনেক কমে এসেছে—এমন কথাও বলেছেন ক্ল্যাটেনবার্গ। যেটি মূলত বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছে।

কিন্তু ক্লপ ম্যাচের আগে এসব কথা বলছেন রেফারিদের চাপে রাখতে—ক্ল্যাটেনবার্গের এই তত্ত্ব অস্বীকার করেছেন ক্লপ। জানিয়েছেন, ম্যাচের আগে রেফারিদের প্রভাবিত করার অভ্যাসটা সাবেক ইউনাইটেড ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের থাকতে পারে, কিন্তু তাঁর অমন স্বভাব নেই, ‘আমি স্যার অ্যালেক্স নই, আমি মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলার চেষ্টা করি না। সাউদাম্পটন ম্যাচের পর আমাকে সরাসরি পেনাল্টি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। ম্যাচের আগে পেনাল্টি নিয়ে একটা পরিসংখ্যান দেখেছিলাম, সেই অনুযায়ী কথা বলেছি।’

ক্ল্যাটেনবার্গের মতো রেফারি অবসরের পরও কেন ইউনাইটেডের পক্ষে কথা বলতে আসছেন, সেটাও বিস্মিত করেছে ক্লপকে, ‘সাউদাম্পটন ম্যাচের পর আমি যা বলেছি সেটা নিয়ে কাউকে কথা বলতে দেখে আমি কি বিস্মিত? না। আমি কি বিস্মিত যে মার্ক ক্ল্যাটেনবার্গ এটা নিয়ে কথা বলেছে? অবশ্যই নয়। আমি জানি না এই ব্যাপার নিয়ে তাঁকে কে কথা বলতে বলেছে, কিন্তু জিনিসটা ভালো যে অবশেষে তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার এত বছর পরও আমরা এখন তাঁকে নিয়ে কথা বলতে পারছি।’

ক্লপ নিজে কখনো খেলোয়াড়দের পেনাল্টি পাওয়ার জন্য পড়ে যেতে বলেন না বলে জানিয়েছেন, ‘এখন মার্ক ক্ল্যাটেনবার্গের মতো লোক যখন এসব নিয়ে কথা বলেন, তখন সেটা আসলে তাঁদের অবস্থাই প্রকাশ করে, আমার না। যদি তিনি আমার জায়গায় থাকতেন, তাহলে হয়তো তিনি মনস্তাত্ত্বিক খেলা শুরু করার চেষ্টা করতেন, কিন্তু আমার কপাল খারাপ, আমি ওই কাজটা করতে পারি না। আমার মনে হয় না আমি আমার জীবনে কোনো খেলোয়াড়কে বলেছি পেনাল্টির সুবিধা পাওয়ার জন্য বক্সে পড়ে যাও। আমি জীবনে অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গেই কাজ করেছি, কেউ বলতে পারবে না এটা।’

ইউনাইটেড পেনাল্টি পাচ্ছে, ব্রুনো ফার্নান্দেস গোল দিচ্ছেন - এটা যেন এক নিয়মিত দৃশ্য।
ছবি : রয়টার্স

তবে ক্লপ বেশ ভালোই জানেন, গত দুই ম্যাচে চাইলেই লিভারপুলকে দুটি পেনাল্টি দিতে পারতেন রেফারি, ‘শেষ দুই ম্যাচে দুটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, সাউদাম্পটনের ম্যাচে একটা হ্যান্ডবলের পর পেনাল্টি দেওয়া হয়নি, নিউক্যাসলের বিপক্ষে ম্যাচে সাদিও মানেকে ফাউল করা হলেও সে পড়ে যায়নি। এখন ওকে যদি তা-ও ডাইভার বলা হয়, মিথ্যা বলা হবে।’ প্রসঙ্গত, ক্ল্যাটেনবার্গ বলেছিলেন, ক্লপের দলের সালাহ-মানেরাও ডাইভ দেয়।

নিজের কথার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে নিউক্যাসলের ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনেছেন ক্লপ, ‘নিউক্যাসলের বিপক্ষে ম্যাচটায় দেখা গেল তাঁদের গোলরক্ষক মাটিতে পড়ে যাওয়া সত্ত্বেও দুহাত দিয়ে মানের পা আটকানোর চেষ্টা করছে, সাদিও পড়ে যায়নি। ও গোল করার চেষ্টা করেছে। আমি কিন্তু পরে ওকে বলিনি তুমি কেন পড়ে গেলে না। পেনাল্টি দেওয়ার সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়ের না, রেফারির। যেটা পেনাল্টি না, আমি সেই পেনাল্টি চাই না। তবে পেনাল্টি হলে আমি অবশ্যই চাইব তাঁরা যেন অন্তত পেনাল্টির বাঁশিটা বাজায়।’

এবারের প্রিমিয়ার লিগে এমনই অবস্থা যে আজ এক দল শীর্ষে তো কাল অন্য দল। তবে প্রায় মাঝপথে চলে যাওয়া লিগ চমকে দিয়েছে ১৭ রাউন্ড শেষে। দেড় মাস আগেও চাকরি খোয়ানোর শঙ্কায় থাকা উলে গুনার সুলশার ইউনাইটেডকে শীর্ষে নিয়ে এসেছেন। দুইয়ে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে আছে দলটি। রোববার তাই জয় ছাড়া অন্য কোনো ফল লিভারপুলের কাছে প্রত্যাশিত নয়।

ম্যাচের আগে তাই এমন কথার লড়াই তো হবেই!