ভারতকে কি আটকাতে পারবে মালদ্বীপ?

>
ফাইনালের আগে হাত মেলালেন দুই দলের অধিনায়ক—ভারতের শুভাশিস বোস (বাঁয়ে) ও মালদ্বীপের আকরাম আবদুল গনি। কাল বাফুফে ভবনে। ছবি: প্রথম আলো
ফাইনালের আগে হাত মেলালেন দুই দলের অধিনায়ক—ভারতের শুভাশিস বোস (বাঁয়ে) ও মালদ্বীপের আকরাম আবদুল গনি। কাল বাফুফে ভবনে। ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যা ৭টায় সাফ ফুটবলের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে মালদ্বীপ।

মালদ্বীপে নিবন্ধিত ফুটবলারের সংখ্যা মাত্র ৩৭৪। ভারতে কতজন, সেই হিসাব কষা কঠিন। কয়েক লাখ তো হবেই। মালদ্বীপের ২৯৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তুলনায় ভারত ১০ হাজার ৭০০ গুণ বড়। মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ১৭ হাজার। ভারতের ১৩৩ কোটি প্রায়। জনসংখ্যায় মালদ্বীপের চেয়ে ৩ হাজার গুণের চেয়েও বড় ভারত।

আয়তন, জনসংখ্যায় দুই দেশের ব্যবধানটা পৃথিবী আর চাঁদের দূরত্বের মতোই। কিন্তু খেলার মাঠে ছোট দেশ বড় দেশের হিসাব অসাড়। এখানে শক্তির লড়াই। তা দেশ ছোট না বড় তাতে কী আসে যায়!

তবে এটা পরিষ্কার, দুই দেশের জনসংখ্যা আর আয়তনে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা ভারতই আজ ১২তম সাফ সুজুকি কাপের ফাইনালে ফেবারিট। সাফের ইতিহাস এবং এই টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে এসেও ভারত দারুণ খেলছে। তাই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু ফাইনালে মালদ্বীপের বিপক্ষে ভারতকে ফেবারিট না বলে উপায় নেই।

গ্রুপে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমিতে পাকিস্তানকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে শক্তিশালী ভারত। দলটি এতই পেশাদার ফুটবল খেলছে যে, ১২টি সাফে আজ অষ্টম ‍শিরোপা না জিতলে একটু অবাকই হতে হবে। ভারত খেলছে পরিকল্পিত এবং আক্রমণাত্মক ফুটবল। টেকনিক্যালি অনেক এগিয়ে। তরুণদের নিয়ে একেবারে তরতাজা একটি দল। সব ‍বিভাগেই দাপট। ভারতের ওপর চাপও কম নয়। কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের কথায়, ‘আমরা কিন্তু এখানে হারতে আসিনি।’ তার মানে শিরোপা ধরে রাখতে না পারলে ভারতের অহংকারে আঁচড় লাগবে বৈকি। সবার অভিন্ন মতও, ভারতের যুব দলই এখন এই অঞ্চলের যেকোনো জাতীয় দলের চেয়ে ভালো। সেটা আজ চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রমাণের পালা।

ভারত আসলে এখন নতুন নতুন খেলোয়াড় বাজিয়ে দেখছে। গত চার বছরে ৩৮ জন ফুটবলারের আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটিয়েছে। সেই ধারাটাই চলছে সাফেও। তবে নামের ভারে ভারত ফাইনাল জিতে যাবে, সেটা ভাবতে রাজি নন কনস্ট্যানটাইন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা যা করেছি, তা ভালোই বলব। ফাইনালের প্রস্তুতিও ভালো। ফাইনাল জিতব বলেও আশা করছি। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি ভাবি না। ফাইনালে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।’

সেটা ঘটাতে তৈরি মালদ্বীপ। গ্রুপে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর ভারতের কাছে ২-০ গোলে হার। বিবর্ণ মালদ্বীপ টসভাগ্যে শ্রীলঙ্কাকে টপকে সেমিতে এসেই নেপালের মতো দলকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে। এই ম্যাচটাই মালদ্বীপের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে। সেটা আজ কাজে লাগাতে পারলে ১০ বছর পর সাফের দ্বিতীয় শিরোপাটা হয়তো হাতে তুলতেও পারে মালদ্বীপ। দ্বীপদেশটির খেলোয়াড়দের বয়স ভারতের চেয়ে একটু বেশি, আলী ফাসিরদের স্কিলও ভালো। তা ছাড়া ৯ বছর পর সাফে পঞ্চম ফাইনাল খেলাও তাতিয়ে তুলেছে মালদ্বীপকে।

তাতিয়ে তুলেছেন আসলে তাদের যুগোম্লাভ বংশোদ্ভূত জার্মান কোচ পিটার সেগার্ট। চাকরি যায় যায় অবস্থা থেকে দলকে ফাইনালে তুলে ৫২ বছর বয়সী কোচ পারলে আকাশে ওড়েন! মুখে কথার খই ফুটিয়ে ভদ্রলোক বলছেন, ‘আমরা তিন-চার শ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট দেশ হতে পারি, কিন্তু ভুলে যাবেন না খেলাটা ১১ জন ভারতীয় বনাম ১১ জন মালদ্বীপের ফুটবলারের লড়াই। কাজেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হব না কে বলতে পারে।’

কথাটা ঠিকই। ভারতের একটা বাজে দিন আসতেই পারে। তবে সেমিতে দুটিসহ ৩ গোল করা ভারতের স্ট্রাইকার মানবীর সিংকে আজ কিন্তু থামাতে হবে মালদ্বীপকে। মালদ্বীপের জন্য স্বস্তিও আছে, সেমিতে লাল কার্ড দেখা ভারতীয় ফরোয়ার্ড লালিয়ানজোয়ালা আজ মাঠের বাইরে। সব অঙ্ক মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলে মালদ্বীপের জন্য সেটি হবে বিরাট প্রাপ্তি। ঢাকার মাঠ ২০০৩ ও ২০০৯ ফাইনালে শিরোপাবঞ্চিত করেছে মালদ্বীপকে। এবার কি হাসাবে?