ভালোবাসা ছাড়া টিকতে পারেন না জিদান

রিয়ালের কোচ হিসেবে জিদানের সাফল্য ঈর্ষণীয়।ছবি: এএফপি

অগ্নিপরীক্ষা? এক কথায় তা-ই। লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে একের পর এক ম্যাচে হতাশা নিয়ে ফিরছে রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়নস লিগে তো এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে যে শেষ ম্যাচ জিতে গ্রুপে শীর্ষস্থান যেমন পেতে পারে, তেমনি আবার হেরে ইউরোপ থেকেই বাদ পড়ার আশঙ্কা আছে। আর চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়ে ইউরোপা লিগে খেলার সম্ভাবনা তো সবচেয়ে বেশিই। লিগেও তথৈবচ অবস্থা রিয়ালের।

এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে ৩-১ গোলে হারানো, এরপর উয়েস্কাকে ৪-১ গোলে হারানোর পর বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল দলটি। কিন্তু এরপর টানা তিন ম্যাচ ব্যর্থ দল। সংকটের মধ্যে থাকা ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ার কাছেও ৪-১ গোলে হেরেছে। সে হতাশা ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষেও (১-১) কাটাতে পারেনি। ঘরের মাঠে ২০ বছর পর আলাভেসের কাছে হার জিনেদিন জিদানের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে তাঁকে ছাঁটাইয়ের গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে সংবাদমাধ্যমে। ক্লাব কিংবদন্তি বলে তাঁর ওপর আশাটাও বেশি সবার। কিন্তু সবাই ভুলে যান জিদানও মানুষ, তাঁরও একটু সহানুভূতি দরকার হয়। মাঝেমধ্যে একটু ভালোবাসা জরুরি হয়ে ওঠে।

সাবিনে কালেগারি ‘ইনসাইড জিদান’স হেড’ নামে একটি বই লিখেছেন। এই ফ্রেঞ্চ মনস্তত্ত্ববিদ জানিয়েছেন, একজন কিংবদন্তি হলেও অন্য সবার চেয়ে বরং একটু বেশি ভালোবাসার কাঙাল জিদান। নিজের কাজে ভালো করার জন্য চারপাশ থেকে ভালোবাসা না পেলে স্বস্তি পান না এই কোচ। শুধু যে কোচ হিসেবেই সহানুভূতি চান এমন নয়, এমনকি একজন খেলোয়াড় হিসেবেও এমনটা ছিলেন জিদান। নিজের কাজটা ভালোভাবে করার জন্য সঙ্গীদের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন দরকার হয় তাঁর।

রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর পর হঠাৎ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন জিদান। তখন জয়ের ক্ষুধা হারিয়ে ফেলা ও নতুন কারও দলকে এগিয়ে নেওয়া দরকার—এসব যুক্তি দেখিয়েছিলেন। কিন্তু বছর পেরোনোর আগেই আবার রিয়ালের মহাবিপদে আবার সভাপতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে এসেছিলেন।

কালেগারির দাবি, ২০১৮ সালেও রিয়াল মাদ্রিদে সহানুভূতির অভাব টের পাচ্ছিলেন বলেই চলে গিয়েছিলেন, ‘জিদান অনাদর সহ্য করতে পারেন না। পিতামাতার কাছ থেকে যে অনাদর পেয়েছে, সেটা কাটানোর জন্যই বাড়তি ভালোবাসা দরকার তাঁর।’

খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক জিদানের।
ছবি: এএফপি

স্প্যানিশ বার্তা সংস্থা ‘ইফে’কে কালেগারি আরও বলেছেন, ‘একজন তারকাও শেষ পর্যন্ত মানুষ এবং অন্যদের মতোই তাঁকেও ভুগতে হয়। তাঁর কথাবার্তাতেই পরিষ্কার, ক্লাব ও ড্রেসিংরুমে আগের মতো ভালোবাসা টের পাচ্ছিলেন না বলেই চলে গিয়েছিলেন। সাধারণত এমনটা করেন না। সব সময় যা শুরু করেছেন তার শেষ দেখেছেন। সব সময় এটাকে নিজের সম্মানের ব্যাপার বলে ধরে নেন। এর আগে যখন তিনি ক্লাব ছেড়েছিলেন, তখন একটা প্রক্রিয়ার মাঝপথে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর নিজেকে প্রতারিত মনে হয়েছিল, যা কখনো ক্ষমা করবেন না।’

রিয়ালের বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে এবার আর অভিমান নয়, এমনিতেও হয়তো চলে যেতে হতে পারে জিদানকে। দলবদলের বাজারে করোনার কারণে কোনো নতুন খেলোয়াড় আনতে পারেননি। দলের মূল খেলোয়াড়েরা কিছুদিন পর পরই চোটে পড়ছেন। কেউ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রিয় খেলোয়াড় এডেন হ্যাজার্ডকে তো নিয়মিত নামানোরই সুযোগ পাচ্ছেন না। আজ বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৯টায় সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। সে ম্যাচে হ্যাজার্ড থাকবেন না, নেই অধিনায়ক সের্হিও রামোসও। মাঝমাঠে ভালভার্দে আর রক্ষণে কারভাহালও মাঠের বাইরে। দলে গোল করার মতো লোক নেই। সব মিলিয়ে ভীষণ সংকটে পড়েছেন জিদান।

এই সপ্তাহই জিদানের ভাগ্য গড়ে দেবে।
ছবি: এএফপি

এর আগে ২০১৬-১৭ মৌসুমেও একবার চাকরি হারানোর শঙ্কা উঠেছিল জিদানের। চোটের কারণে সেবার রক্ষণে মাত্র তিনজন খেলোয়াড় নিয়ে কয়েক সপ্তাহ খেলতে হয়েছিল জিদানকে। সাধারণত সংবাদ সম্মেলনে খুব গড়পড়তা কথা বলেন জিদান, দলের হারের দায় নিজের কাঁধে টেনে নেন, খেলোয়াড়দের আড়াল করেন। সে মৌসুমে দলের সংকটে টানা সমালোচনার মুখেই শুধু একবার ধৈর্য হারিয়েছিলেন জিদান। বলেছিলেন, তিনি জিদান হলেও মাঝেমধ্যে ভালোবাসা তাঁরও দরকার হয়। সমর্থকদের কাছ থেকে একটু ভালোবাসার আকুতি শুনিয়েছিলেন জিদান।

গত কয়েক বছরে এভাবে আর কখনো কথা বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। তবে কালেগারির দাবি, এখনো ভেতরে-ভেতরে জিদান ভালোবাসার কাঙাল। আর ক্লাব যদি তাঁকে সেটা না দেয়, তবে যেকোনো দিন আবার বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন। শৈশবে বাবার কাছ থেকে পর্যাপ্ত ভালোবাসা না পাওয়াটাই নাকি জিদানের মানসিকতায় এমন প্রভাব ফেলেছে, ‘জিদান পরিপূর্ণ ভালোবাসা দাবি করেন, কারণ অন্যদের ক্ষেত্রেও সে এটা দেয়। জিদান তার কিংবদন্তির চেয়ে বেশি, মানুষের সামনে যে পরিপূর্ণ চরিত্র দাঁড়ায় তার চেয়েও বেশি কিছু। যদি নিখুঁতই হতো তাহলে ওসব দুর্ঘটনা ঘটত না, মাতেরাজ্জিকে মাথা দিয়ে গুঁতানো কিংবা মাদ্রিদ থেকে ২০১৮ সালে চলে যাওয়া।’