ভিনিসিয়ুস মান বাঁচালেন রিয়ালের

ভিনিসিয়ুসের জোড়া গোলে হার থেকে রক্ষা রিয়াল মাদ্রিদেরছবি: রয়টার্স

ভাগ্যিস ভিনিসিয়ুস জুনিয়র মাঠে নেমেছিলেন! না হলে হয়তো লেভান্তের বিপক্ষে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতো রিয়াল মাদ্রিদের। বদলি হিসেবে মাঠে নেমে তাঁর ৭৫ ও ৮৫ মিনিটের দুটি গোলেই মান রক্ষা পেয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দলের। ৩-৩ গোলে শেষ হওয়া ম্যাচটির নায়ক শেষ পর্যন্ত রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকাই।

প্রথমার্ধে গ্যারেথ বেলের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ
ছবি: রয়টার্স

প্রথমার্ধের শেষে বোঝা যায়নি ম্যাচটা আসলে কেমন হতে যাচ্ছে। রিয়াল ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল গ্যারেথ বেলের গোলে। রিয়াল গোলকিপার থিবু কর্তোয়াকেও তেমন পরীক্ষা দিতে হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কী যেন হয়ে গেল রিয়ালের। শুরুতেই (৪৬ মিনিট) রজারের গোলে সমতা ফেরায় লেভান্তে। এরপর ৫৭ মিনিটে হোসে কাম্পানার গোলে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় লেভান্তে।

রিয়ালকে ভালোই আতঙ্কে ফেলেছিল লেভান্তে
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু ৭৫ মিনিটে বদলি ভিনিসিয়ুস সমতায় ফেরান রিয়ালকে। কিন্তু সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৭৯ মিনিটে রবার পিয়ারের গোলে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় লেভান্তে। ম্যাচটা রিয়াল হারছে—এমন দুশ্চিন্তাই যখন সমর্থকদের মাথায় ঠিক তখনই ৮৫ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের দ্বিতীয় গোল স্বস্তি ফেরায় রিয়াল সমর্থকদের মনে।

কাল রিয়ালের প্রথম একাদশে ছিলেন ইসকো। ম্যাচের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ও তিনি। কোচ আনচেলত্তি ফরোয়ার্ড লাইন সাজিয়েছিলেন করিম বেনজেমা, এডেন হ্যাজার্ড ও গ্যারেথ বেলকে দিয়ে। প্রথমার্ধের পুরোটাই দখলে ছিল রিয়ালের। ডেভিড আলাবার কাছ থেকে বল পেয়ে বেনজেমা সেটা বেলের দিকে কাট ব্যাক করে পাঠালে গোল করতে ভুল করেননি ওয়েলশ ফরোয়ার্ড। এ অর্ধে রিয়াল ছিল ভারমুক্তই। ইসকো দারুণ খেলছিলেন। লেভান্তের গোলমুখে হুমকি হয়ে ছিলেন আলাবাও। তবে এ অর্ধে গোলের সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেনি রিয়াল। বেলের একটি দারুণ ফ্রি কিক ব্যর্থ হয়। কিন্তু সেটি যে দ্বিতীয়ার্ধে তাদের ভোগাবে, সেটা কে জানত!

লেভান্তের জয় না পাওয়ার কারণ দুর্ভাগ্যও
ছবি: এএফপি

দ্বিতীয়ার্ধে উলট পুরাণই দেখেছে রিয়াল। শুরুতেই রজারের গোলে সমতায় ফেরে লেভান্তে। লুকাস ভাসকেজকে ফাঁকি দিয়ে থিবো কর্তোয়ার পাশ দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। গোল করেই উজ্জীবিত লেভান্তে চেপে ধরে রিয়ালকে। ৫৭ মিনিটেই পেয়ে যায় দ্বিতীয় গোল। এ গোলের দায়টা বেশি রিয়াল-রক্ষণেরই। দে ফ্রুতোসের ক্রস থেকে পুরো অরক্ষিত দাঁড়িয়ে থাকা হোসে কাম্পানিয়ার গোল করতে কোনো অসুবিধাই হয়নি।

৬০ মিনিটে ২-১ গোলে এগিয়ে লেভান্তে। রিয়ালের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে তেমন কোনো ঝলক তখনো দেখা যাচ্ছে না। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে কোচ আনচেলত্তি নিজের হতাশাটা লুকাতে পারছিলেন না। তবে তিনি হার এড়াতে কিংবা জয় বের করে আনতে চেষ্টার ত্রুটি করেননি। মাঠে নামান মার্কো আসেনসিও, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আর রদ্রিগোকে। তুলে নেন যথাক্রমে ইসকো, হ্যাজার্ড ও বেলকে। লুকাস ভাসকেজের জায়গায় দীর্ঘদিন পর মাঠে নামানো হয় দানি কারভাহালকে।

আনচেলত্তির বদলিগুলো কাজে লেগেছে
ছবি: এএফপি

এ সময় ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে রিয়াল। ৭৫ মিনিটে বদলি ভিনিসিয়ুস সমতায় ফেরান রিয়ালকে। কাসেমিরো ছিলেন এ গোলের উৎসে। কিন্তু ৭৯ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় লেভান্তে। গোল করেন রবার পিয়ার। ৩-২ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর দুর্ভাগ্যই লেভান্তের। স্কোরলাইনটা ৪-২ করতে পারেনি তারা। মিকায়েল মালসার পাস থেকে কানতেরোর শট পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়।

গোলের জন্য মরিয়া রিয়ালকেও হতাশ হতে হয়েছে দুবার। লুকা ইয়োভিচ লেভান্তে গোলকিপার আইতর ফার্নান্দেজকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। কারভাহালের একটি শট প্রতিহত হয়। হার যখন রিয়ালকে হাতছানি দিচ্ছে, ঠিক তখনই ভিনিসিয়ুস-ম্যাজিক! ৮৫ মিনিটে ব্রাজিলীয় তারকার গোলে সমতায় ফেরে রিয়াল।

দুর্দান্ত এক ম্যাচই উপহার দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ–লেভান্তে
ছবি: এএফপি

শেষ দিকে লেভান্তে গোলকিপার ডি বক্সের বাইরে বলে হাত লাগিয়ে লাল কার্ড দেখেন। সব বদলি ব্যবহার করে ফেলার কারণে ডিফেন্ডার রুবেন ভেসোকে গ্লাভস হাতে গোলপোস্টে পাঠায় লেভান্তে। কিন্তু সেটির ফায়দা নিয়ে রিয়াল লেভান্তের কাছ থেকে পুরো পয়েন্ট বের করতে পারেনি।

রিয়াল কোচ আনচেলত্তির ভাষায়, ‘একটা পাগুলে ম্যাচই হয়ে গেল। তবে আমরা দুটি পয়েন্ট হারিয়েছি এ ম্যাচে। প্রথমার্ধ জুড়ে আধিপত্য করার পরেও দ্বিতীয়ার্ধে আমরা দুটি পয়েন্ট রীতিমতো প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছি।’

কেন এমন হলো এটা বুঝতে পারছেন না আনচেলত্তি, ‘আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কেন এমন হলো। পুরো ম্যাচেই আমাদের আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। তবে এমন কিছু হজম করা খুবই কঠিন।’