ভয়ংকর ইব্রা ভয় দেখানোর নতুন সঙ্গী পাচ্ছেন

ইব্রা আছেন দুর্দান্ত ফর্মে।ছবি: রয়টার্স

দুই দশকের লম্বা ক্যারিয়ার। এর মধ্যে কত ক্লাবেই না খেলেছেন। বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ইন্টার মিলান, এসি মিলান, জুভেন্টাস, পিএসজি, আয়াক্স—শুধু বড় দলের সংখ্যা গুনতেই হাতের আঙুলের কমতি পড়ে যায়। কিন্তু ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মটা যেন দ্বিতীয় দফায় এসি মিলানে খেলার জন্যই ধরে রেখেছিলেন। চল্লিশ বছর বয়সে এসে ইব্রাহিমোভিচের এমন ফর্মই পুনর্জন্ম দিয়েছে এসি মিলানের। বহুদিন পর ইতালিয়ান ফুটবলের চূড়ায় দেখা যাচ্ছে তাদের।

গতকাল আরও একবার ইব্রার তেজ টের পেয়েছে সিরি ‘আ’। জোড়া গোল করেছেন। তাঁর জোড়া গোলেই ১০ জনের মিলান ২-০ গোলে হারিয়েছে কালিয়ারিকে। প্রতিপক্ষের মাঠে ইব্রার এমন পারফরম্যান্সে আবার লিগের শীর্ষস্থান এককভাবে বুঝে নিয়েছে স্তেফানো পিওলির দল। গত পরশুই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসকে ২-০ গোলে হারিয়ে আন্তোনিও কন্তের ইন্টার মিলান শীর্ষস্থানে ভাগ বসিয়েছিল। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইব্রার সেটা পছন্দ হয়নি।

এক ইব্রাহিমোভিচেই প্রতিপক্ষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। এবার নতুন এক আতঙ্ক যোগ করতে চাইছে মিলান। আপাতত কোনো দলে না থাকা মারিও মানজুকিচকে দলে নিচ্ছে তারা। আক্রমণে মানজুকিচের যোগ হওয়ার খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন সুইডিশ স্ট্রাইকার।

পুরো মিলান দল ইব্রার অভিজ্ঞতার দিকে চেয়ে থাকে।
ছবি: রয়টার্স

লিগে এ মৌসুমে ১২ গোল হয়ে গেছে ইব্রাহিমোভিচের। গোলের দিক থেকে এখন ইন্টার জুটি লাওতারো মার্তিনেজ ও রোমেলু লুকাকুর পাশে আছেন মিলান স্ট্রাইকার। এই তিনজনের চেয়ে এগিয়ে আছেন শুধু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তবে এঁদের মধ্যেও ইব্রা ব্যতিক্রম। কারণ, চোট ও করোনায় লিগের শুরুতেই অনেক ম্যাচ খেলা হয়নি তাঁর। ফলে তাঁর ১২ গোল এসেছে মাত্র ৮ ম্যাচে। তাতেই করেছেন নতুন এক রেকর্ড। মিলানের হয়ে গত ২৮ বছরে প্রথম ৮ ম্যাচে এত গোল করেননি কেউ। সর্বশেষ ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে মার্কো ফন বাস্তেনের রেকর্ডটি ছিল ৮ ম্যাচে ৮ গোল।

গত মৌসুমের মাঝপথে ইব্রার মিলানে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ক্লাবটির পারফরম্যান্সে উন্নতি হচ্ছে। এর মাঝেই আরেকটি রেকর্ড হলো তাঁর। দুই মৌসুম মিলিয়ে টানা ৯ লিগ ম্যাচে গোল করলেন এই স্ট্রাইকার। দুই দশকের ক্যারিয়ারে এর আগে যেটা কখনো করতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ সকারে যেখানে ইউরোপের সব খেলোয়াড় গিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন, সেখান থেকে ফিরেই এসব কীর্তি করছেন। মিলানে ফেরার সিদ্ধান্ত যে কতটা সঠিক ছিল, সেটা প্রমাণ করতে পেরেছেন বলেই খুশি এই স্ট্রাইকার, ‘আমি খুব খুশি। মিলানে এই ফেরাটা আমাকে বদলে দিয়েছে এবং আমি খুব খুশি।’

এর মধ্যেই তাঁকে আরও খুশি করার চেষ্টা করছে মিলান। মাঝেমধ্যেই মিলানকে বিশ্রাম দিতে হচ্ছে কোচ পিওলিকে। কারণ চাইলেই তো আর চল্লিশে পা রাখা এক ফুটবলারকে সপ্তাহে দুইবার মাঠে নামানো যায় না। এমন অবস্থায় তাঁর অনুপস্থিতিতে মাঠে একজন নেতার অভাব টের পাওয়া যায়। সে ঘাটতি পূরণে মানজুকিচকে আনার চেষ্টা চলছে। গোল করার জন্য ইব্রার মতো খ্যাতি না থাকলেও মাঠে উপস্থিতি, নেতৃত্ব ও অভিজ্ঞতায় ৩৪ বছর বয়সী মানজুকিচ বিশ্ব ফুটবলে বেশ আকাঙ্ক্ষিত নাম।

এবার মানজুকিচকেও পাচ্ছে মিলান।
ছবি: টুইটার

জুভেন্টাস থেকে কাতারের আল দুহাইলে গিয়েছিলেন মানজুকিচ। কিন্তু গত জুলাইয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি শেষ করে দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকার। প্রায় ছয় মাস খেলার মধ্যে না থাকলেও মানজুকিচকে সঙ্গী হিসেবে পাওয়ার আশা করছেন ইব্রাহিমোভিচ, ‘আমি খুব খুশি (এ খবরে)। তাহলে দুজন থাকবে যাদের প্রতিপক্ষ ভয় পায়। লিগ শিরোপা জেতার জন্য ভালো একটা স্কোয়াডের গুরুত্ব জানা আছে তার, এখন পর্যন্ত আমরা ভালোই করছি। লিগের অর্ধেক প্রায় হয়ে গেছে এবং এখন ম্যাচগুলো কঠিন হওয়া শুরু করবে। এটা খুব কঠিন এক মৌসুম হবে। কিন্তু এখন মানজুকিচ ও মেইতে (সোয়ালিহো) যোগ হচ্ছে, আমি জানি না আর কেউ আসবে কিনা; এখন কোচের হাতে অনেক খেলোয়াড় থাকবে। উনিও অদলবদল করে খেলাতে পারবেন।’

কোচ পিওলি জানিয়েছেন ইব্রাহিমোভিচ ও মানজুকিচকে একসঙ্গে পেয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছেন, ‘ইব্রা বলেছে সে মানজুকিচকে আড়ালেই ফেলে রাখবে (হাসি)। আমি খুশি, তার মানে ক্লাব উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তারা মিলানকে শীর্ষে দেখতে চায়। মানজুকিচের ক্লাবে যোগ দেওয়া এরই সাক্ষ্য দেয়। অনেক শর্ত ও কঠিন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে আমাদের অনেক খেলোয়াড় দরকার। আমি তাদের বলি, কত মিনিট খেলছে সেটার চেয়ে কত ভালো খেলছে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন ক্লাব আমাকে এ প্রস্তাব দিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁ বলেছি। আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি। সে খুবই অনুপ্রাণিত, সে একজন বিজয়ী।’