‌‘মঙ্গোলিয়াকে হারাতে না পারলে ওদের খেলাই ছেড়ে দেওয়া উচিত’

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলফাইল ছবি

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের মূল ফটকের বাইরে অনবরত মাইক বাজছে—‘২৯ মার্চ বাংলাদেশ–মঙ্গোলিয়া ম্যাচ দেখতে আসুন। টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা...।’

আজ সন্ধ্যার পরপরই বাংলাদেশ দল যখন অনুশীলন শেষে স্টেডিয়াম ছেড়ে গেল, তখনো কিছু টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। এক–দুজন করে লোক এসে টিকিট নিয়ে যাচ্ছিলেন।

সিলেট মানেই ফুটবলের শহর। এই শহরে ৯ বছর আগেও বাংলাদেশ–নেপাল ম্যাচে স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক ভেঙে মাঠের ভেতরে হাজার হাজার দর্শক ঢুকে পড়েন। তবে ২৯ মার্চ বাংলাদেশ–মঙ্গোলিয়া ম্যাচে তেমন কিছু হওয়ার কোনো আভাস নেই। ফুটবল নিয়ে সেই উচ্ছ্বাস, আনন্দ কোথায় যেন উধাও।

উধাও তার অন্যতম কারণ, ২৪ মার্চ মালদ্বীপ সফরে গিয়ে মালদ্বীপের কাছে ফিফা প্রীতি ম্যাচে ২–০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। সেই হারের ক্ষত নিয়েই জামাল ভূঁইয়ারা এসেছেন সিলেটে। তবে সিলেট এসেও মালদ্বীপ ম্যাচের কথাই বারবার উঠে আসছে বাংলাদেশ দলের আডডায়, আলোচনায়। এমনকি মঙ্গোলিয়া ম্যাচ নিয়ে আজ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষে দুই খেলোয়াড় কথা বলতে এলে সাংবাদিকদের ৯০ ভাগ প্রশ্নই হলো মালদ্বীপ ম্যাচ নিয়ে।

হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে প্রথম ম্যাচে হেরে গেছে বাংলাদেশ
ফাইল ছবি

ডিফেন্ডার ইয়াছিন আরাফাত কোনো রাখঢাক না রেখেই বলে দিলেন, ‘মালদ্বীপে যেমন খেলা হয়েছে আমাদের, অবশ্যই তা হতাশাজনক। আমরা আশা করিনি হারব।’

হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের এই ডিফেন্ডারের বিশ্লেষণ, ‘আমরা হয়তো ভালো খেলিনি।’ রক্ষণের ভুল বেশি ছিল কি না, প্রশ্নে তাঁর কথা, ‘কোনা নির্দিষ্ট বিভাগ নয়, আমরা একটা টিম হিসেবেই খেলতে পারিনি। ওটাই মূল বিষয়। আমরা আরেকটু আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেললে বা আরেকটু ভালো খেললে ভালো করতাম।’

বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফে বদল এসেছে। ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ তিনজন কোচের অধীনে খেলছে। এটা দলে কোনো প্রভাব ফেলছে কি না প্রশ্নে ইয়াছিনের উত্তর, ‘গত কিছুদিনে আমাদের তিনজন কোচ ছিলেন। তবে অস্কার আর কাবরেরা আমার মতে একই রকম। দুজনই স্প্যানিশ। কাজেই আমার কাছে কোনো বদল মনে হয়নি। আসলে আমরা কোচের ভাবনা মাঠে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এটা খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা।’

১৮ বছর পর গত বছর শ্রীলঙ্কায় মালদ্বীপকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর আবার হার কেন সেই মালদ্বীপের কাছে? ইয়াছিনের উত্তর, ‘শ্রীলঙ্কায় ওদের আমরা হারিয়েছি। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চেয়েছি। তবে যা চলে গেছে সেটা আর ফিরে আসবে না।’

২১ বছর পর এসে যদি মঙ্গোলিয়ার সঙ্গেও জয় পেতে এত ভাবতে হয়, তাহলে আর কী বলার আছে!
বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ও সাবেক ফুটবলার ইকবাল হোসেন

সিলেটে দুদিন অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। মঙ্গোলিয়াকে কীভাবে নিচ্ছেন প্রশ্নে ইয়াছিনের দলের ভাবনাটা তুলে ধরলেন, ‘মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে আমার এই দলটি কখনো খেলিনি। তবে আমরা মনে করি প্রতিটি দল শক্তিশালী। ওরা লাওসের সঙ্গে ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলে (১–০ গোলে হেরেছে লাওস) বাংলাদেশে এসেছে। আমাদের কোচ ওদের ভিডিও দেখিয়েছে। কোথায় দুর্বলতা, কোথায় ওরা ভালো সব...। আমরা ঘরের মাঠে খেলব এটা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আশা করি দর্শক মাঠে আসবে এবং আমাদের সমর্থন দেবে। আমি মনে করি, আমরা জিতব মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে।’

চোট কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরা ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজকে বেশ বিমর্ষ লাগল। মালদ্বীপের কাছে হার নিয়ে তিনিও হতাশ। বলেন, ‘বদলি হিসেবে খেলছিলাম মালদ্বীপের সঙ্গে। জাতীয় দলে আমার ফেরাটা ভালো হয়নি। মালদ্বীপের মাঠে কেন জানি ভাগ্য সহায় হয় না আমাদের।’

নতুন কোচের চিন্তাভাবনার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ওপরই বারবার গুরুত্ব দিলেন নাবিব। তাঁর কথা, ‘শ্রীলঙ্কায় মালদ্বীপের সঙ্গে মারিও লেমোসের অধীনে বাংলাদেশ খেলেছে ৪–১–৪–১ ছকে। আর মালদ্বীপে এবার কাবরেরার অধীনে খেলেছে ৪–৪–২–এ। দুটি দুই রকম ম্যাচ হয়েছে। এখন ৪–৪–২ এখন কম খেলা হয়। এই ছকে কিছু পজিশনগত বদল করে খেলতে হয়েছে আমাদের। যেমন স্ট্রাইকার পেছনে আসবে, আবার মিডফিল্ডার স্ট্রাইকার হয়ে যাবে। আমাদের আসলে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।’

স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবন
ফাইল ছবি

বিদায়ী কোচ জেমি ডে খেলাতেন পুরোপুরি ইংলিশ ছকে, লম্বা বলে প্রতি আক্রমণ। কাবরেরা পুরোপুরি আলাদা। নিচ থেকে আক্রমণ তৈরি চান তিনি। এসব নিয়ে আরও কাজ করতে হবে জানিয়ে আবাহনী অধিনায়ক নাবিব নেওয়াজ বলেন, ‘নতুন কোচের নতুন ছকে আমরা মাঝে মাঝে ভালো খেলেছি, মাঝে মাঝে ভুল করেছি। সেগুলো নিয়ে এখন কাজ করছি, যাতে ভুল হয়।’

বাংলাদেশ কোচ মঙ্গোলিয়ার ভিডিও দেখিয়েছেন খেলোয়াড়দের। তা থেকে যতটা সম্ভব দলটা সম্পর্ক ধারণা পাচ্ছেন নাবিবরা। এ নিয়ে নাবিবের কথা, ‘কোনো দলকেই সহজভাবে নেওয়া যায় না। আমরাও মঙ্গোলিয়াকে সহজভাবে নিচ্ছি না। ফুটবলেরর জন্য যেভাবেই হোক এই ম্যাচটা আমাদের জিততে হবে।’

জিততে হবে মানে! জয় পাওয়া ওদের কতর্ব্য। বক্তার নাম ইকবাল হোসেন। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার সাবেক ফুটবলার ইকবাল আজ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে প্রথম আলোকে বললেন, ‌‘মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে জিততে না পারলে খেলাই ছেড়ে দেওয়া উচিত আমাদের ফুটবলারদের। ২০০১ সালে সৌদি আরবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মঙ্গোলিয়াকে আমরা ৩–০ গোলে হারিয়েছিলাম। আরেকটি ম্যাচ ২–২ গোলে ড্র হয়েছিল। সেই দলে আমিও ছিলাম। ২১ বছর পর এসে যদি মঙ্গোলিয়ার সঙ্গেও জয় পেতে এত ভাবতে হয়, তাহলে আর কী বলার আছে! আমাদের ফুটবলারদের নিজেদের প্রমাণ করার সময় এখন।’