মতিঝিল ডার্বিতে আরামবাগকে উড়িয়ে দিল মোহামেডান

দলের তৃতীয় গোলের উল্লাস।ছবি: প্রথম আলো

মোহামেডান স্পোর্টিং ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ মতিঝিল ক্লাবপাড়ার দুটি দল। তাই তারা মাঠে মুখোমুখি হলে ফুটবলপ্রেমীরা বলে থাকেন ‘মতিঝিল ডার্বি’। আজ আরামবাগকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে মতিঝিল ডার্বি জিতে প্রিমিয়ার লিগে শুভসূচনা করেছে মোহামেডান। গোল করেছেন সুলেমান দিয়াবাতে, মোহাম্মেদ নুরাত ও আমিনুর রহমান।

সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল মোহামেডান। সেদিন দুর্দান্ত খেলেও স্নায়ুর লড়াইয়ে হার মানতে হয় সাদা–কালোদের। আজ যেন সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন শন লেনের শিষ্যরা। নিজেদের পায়ে বল এলেই দ্রুত সামনে পাস খেলে আক্রমণে ওঠা। আবার বল প্রতিপক্ষের পায়ে গেলে দ্রুতগতিতে ‘প্রেস’ করে প্রতিপক্ষকে দুমড়েমুচড়ে ফেলা। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে গেলেও মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা হলুদ কার্ড দেখেছেন তিনটি।

আরামবাগের খেলোয়াড়দের চেয়ে ফিটনেসে অনেক এগিয়ে মোহামেডান। গত ২৯ ডিসেম্বর ফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর আরামবাগ তাদের খেলোয়াড়দের ছুটি দেয়। আজকের ম্যাচের আগে ১০ জানুয়ারি শুরু হয় তাদের অনুশীলন। মাত্র সপ্তাহখানেকের প্রস্তুতিতে মোহামেডানের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। ৩-০ গোলের স্কোরলাইনই তার প্রমাণ। অবশ্য পেনাল্টি থেকে ব্যবধান কমাতে ব্যর্থ হয়েছে আরামবাগ। আজ দলের সঙ্গে ছিল না তাদের প্রধান কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য। তাঁর জায়গার ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন সহকারী চন্দন রাঠোর।

শন লেন একাদশ সাজিয়েছিলেন ৪-৪-২ ফরমেশনে। জয়ের সঙ্গে স্বস্তির বিষয়, তাঁর দুই স্ট্রাইকার মালির দিয়াবাতে ও স্থানীয় আমিনুর গোল পেয়েছেন। ১১ মিনিটেই এই যুগলের রসায়নে এগিয়ে যেতে পারত মোহামেডান। ডান প্রান্ত থেকে আমিনুরের ক্রসে বক্সের মধ্যে থেকে পা লাগিয়েছিলেন দিয়াবাতে। কিন্তু সেটি ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে বাইরে। ৮ মিনিট পর আর ভুল করেননি মালিয়ান এই স্ট্রাইকার। ১৯ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে জাফর ইকবালের ক্রসে গোলমুখ থেকে হেডে জালে বল পাঠান তিনি, ১-০।

৩০ মিনিটে দলীয় রসায়নে মোহাম্মেদ নুরাতের কল্যাণে মোহামেডানের ২-০। সাম্প্রতিক সময়ে হাবিবুর রহমান সেন্টারব্যাক হিসেবে খেললেও তিনি যে প্রথাগত মিডফিল্ডার, গোল করিয়ে সেটির প্রমাণ দিয়েছেন হাবিবুর। নিজেদের অর্ধ থেকে প্রান্ত বদল করে ওভার লেপিংয়ে ওঠা রাইটব্যাক মোহাম্মদ আতিকুজ্জামানকে লম্বা পাস দিয়েছিলেন তিনি। আতিকুজ্জামান বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পাস দিয়েছিলেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড নুরাতকে। প্রথম স্পর্শে বলের নিয়ন্ত্রণ, দ্বিতীয় স্পর্শে টোকা দিয়ে জালে পাঠিয়েছেন নুরাত।

দিয়াবাতের গোলের আনন্দ।
ছবি: প্রথম আলো

তিন মিনিট পরই একটি ফ্রি-কিক থেকে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল আরামবাগ। গোলমুখে বাতাসে বলের ভালো নিয়ন্ত্রণও নিয়েছিলেন সিজোবা ক্রিস্টোফার। কিন্তু তালগোল পাকিয়ে শট নিতে পারেননি নাইজেরিয়ান এই স্ট্রাইকার। সুযোগ এসেছিল তরুণ ফরোয়ার্ড নিহাত জামানের সামনেও। তাঁর শট রক্ষা করেন মোহামেডান গোলরক্ষক আহসান হাবিব।

প্রথমার্ধে ২-০–তে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে আরও বেশি আক্রমণাত্মক মেজাজে মাঠে ফেরে মোহামেডান। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই দারুণ এক গোল করেছেন আমিনুর। অল্প বয়সে জাতীয় দলে সাবেক হয়ে যাওয়া এই স্ট্রাইকারের পায়ে অনেক দিন পর গোল। রাকিব খান ইভানের পাস বক্সের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার মোস্তাফিজুর রহমানকে বডি শিল্ড করে রেখেছেন। চকিতে ঘুরে ডান পায়ের শটে গোল, ৩-০।

৭৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল আরামবাগের সামনে। বক্সের মধ্যে এডামস সাদিককে হাবিবুর ফাউল করলে পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন সিজোবা ক্রিস্টোফার। আজ পুরো ম্যাচটাই বাজে খেলেছেন সিজোবারা।

বাতিল হওয়া সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে আরামবাগকে ১-০ গোলে হারিয়ে শুরু করেছিল মোহামেডান। এবার ব্যবধানটা ৩-০। বোঝাই যাচ্ছে, দারুণ এক লিগ শুরু করতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ কুমিল্লায় ২১ জানুয়ারি সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে। একই দিনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে মাঠে নামবে আরামবাগ।