'মনে হচ্ছে পৃথিবীতে কোনো মানুষ বাস করছে না'

ওয়ালী ফয়সাল। ফাইল ছবি
ওয়ালী ফয়সাল। ফাইল ছবি

দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১০০ পেরিয়েছে। মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। এই অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়াবিদেরা একটু বেশিই সতর্ক অবস্থায় আছেন। তাঁরা নিজেদের বন্দী করে ফেলেছেন বাড়ির চার দেয়ালে।

দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলা ও বর্তমানে ঢাকা আবাহনীর ফুটবলার ওয়ালী ফয়সালের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জিমখানায়। সেখান থেকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসার আশপাশে গলিতে গলিতে পুলিশ। বাসা থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। সর্বশেষ ৩-৪ দিন আমি আগে বের হয়েছিলাম। সেটাও খুব জরুরি প্রয়োজনে। তখন দেখেছি রাস্তায় মানুষজন খুব একটা নেই। চারপাশ নীরব, স্তব্ধ। অন্য একটা পৃথিবীতে আছি।’ ওয়ালী ফয়সাল যোগ করেন, ‘এমন অবস্থা আগে কখনো দেখেননি। আশপাশে তাকালে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে কোনো মানুষ বাস করছে না। সব স্থবির হয়ে পড়েছে। বাড়ি থেকে বের হলেই ভয় করছে। আগে রাতে একা হাঁটতে গেলে যেমন ভয় করত, ঠিক তেমনই লাগে এখন।’

আবাহনী ক্লাবসহ ঢাকার সব ক্লাবেই এখন ফুটবলারদের আবাসিক ক্যাম্প বন্ধ। গত মাসে ক্যাম্প বন্ধ হওয়ার পর অন্য সব ফুটবলারের মতো ওয়ালীও চলে যান বাড়িতে। নারায়ণগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, এখানকার মানুষ আগে সচেতন ছিল না। সচেতন থাকলে এই পরিস্থিতি হতো না। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরও ঘুরে বেড়িয়েছে অনেকে। এখন সবাই বুঝতে পারছে এটা ঠিক হয়নি। তাঁর এলাকা পাইকপাড়ার ভেতরে একজন মারা গেছেন। পাশেই দুজন মারা যান। গোটা এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। সবাইকে সচেতন থাকার ডাক দিয়ে ওয়ালী যোগ করেন, নিজের ও পরিবারের সুস্থতার জন্য প্রতিটি মানুষেরই উচিত এখন ঘরে থাকা।

নারায়ণগঞ্জ থেকে উঠে এসেছেন অনেক ফুটবলার। স্বাধীনতার পর হাজী কাশেম, আশরাফ উদ্দিন চুন্নু, সম্রাট হোসেন এমিলি, সালাউদ্দিন, স্বপন, মোনেম মুন্না, জাকির, গাউস, লিটন, নজরুল, সুজন, তপু, আবদুল্লাহ পারভেজ, মিঠুন চৌধুরী, ওয়ালী ফয়সালসহ অনেক নাম। বর্তমানে জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার তপু বর্মণ, তরুণ ইয়াছিন আরাফাতরাও এই জেলার ফুটবলার।

সিদ্দিরগঞ্জ থানার গোদনাইলে বাসা জাতীয় দল ও বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার তপু বর্মণের। প্রথম আলোকে জানালেন, তাঁর এলাকায় এখনো করোনা রোগী ধরা পড়েনি। তবে তপু বলেন, ‘সবাই সতর্ক আছে। আমিও সতর্ক। আমাদের এলাকা লকডাউন এক সপ্তাহ ধরে। বাসার পাশে একটা বালুর মাঠ আছে, এক মিনিটের পথ, সেখানে একা একা টুকটাক ফিটনেস অনুশীলন করি। বাসায়ও ফিটনেস অনুশীলন চলে। এ ছাড়া আর কিছু করার নেই এখন।’

জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার আবদুল্লাহ পারভেজের বাসা পাইকপাড়ার জান্নাতবাগে। জাতীয় দলের আরেক সাবেক মিঠুন চৌধুরী থাকেন মাসদাইর। লকডাউনের কারণে মসজিদেও এখন আর যাচ্ছেন না মিঠুন। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মেহেদি হাসান তপুর বাড়ি রসুলবাগে। ফতুল্লার তল্লাতে থাকেন জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার ও আবাহনীর সহকারী কোচ নজরুল ইসলাম। তাঁরা পরিস্থিতির দাবি মেনে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না। সবাই অপেক্ষা করছেন করোনামুক্ত সময়ের।