মরিনিওর খরচ ১৬ হাজার ৮৩৩ কোটি, গার্দিওলার ১৫ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা

পেপ গার্দিওলা ও জোসে মরিনিওফাইল ছবি: এএফপি

এই একুশ শতকে ডাগআউটে তাঁরা দুজন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। এখন দুজনার দুটি পথ দুই দিকে বেঁকে গেলেও একসময় লা লিগায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমেছে দুজনের।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও ম্যানচেস্টারের দুই অংশের কান্ডারি ছিলেন দুজন। টটেনহাম হটস্পারে থাকতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমেছে পেপ গার্দিওলার সঙ্গে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন অন্যজন জোসে মরিনিও।

স্পেনে গার্দিওলা বার্সেলোনার কোচ থাকতে রিয়ালের ডাগআউট সামলেছেন মরিনিও। ২০১৬ সালে গার্দিওলা ম্যানচেস্টার সিটির দায়িত্ব নেন, একই বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হয়ে আসেন মরিনিও।

২০১৯ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত মরিনিও টটেনহামের দায়িত্ব পালন করে নাম লিখিয়েছেন ইতালিয়ান ফুটবলে—এএস রোমার কোচ। গার্দিওলা এখনো সিটির কোচ।

মরিনিও-গার্দিওলা দ্বৈরথ শুধু তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা একে অপরের বিপক্ষে যেমন তোপ দেগেছেন, তেমনি তাঁদের খেলোয়াড়েরাও মাঠের লড়াইয়ে একে অপরকে তিল পরিমাণ ছাড় দেননি।

এ পর্যন্ত ২৫ ম্যাচে মরিনিওর মুখোমুখি হয়ে ১২ বার জিতেছেন গার্দিওলা। ৭ হারের পাশাপাশি ৬ ড্র। শিরোপাজয়ের হিসাবেও গার্দিওলার চেয়ে পিছিয়ে মরিনিও। স্প্যানিশ কোচের ৩১ শিরোপার বিপরীতে ২৫ শিরোপা জিতেছেন পর্তুগিজ কোচ। চলতি মৌসুমের আগে দলবদলের বাজারে দুই কোচই প্রচুর টাকা ঢেলেছেন। কিন্তু সেই অঙ্কটা কত?

২০০০ সালে বেনফিকার কোচ হন মরিনিও। সেখানে দুই মাসের মতো থাকায় দলবদলে খরচের প্রায় সুযোগই পাননি তিনি। ২০০১ সালে আরেক পর্তুগিজ ক্লাব ইউনিয়াও লেইরিয়া থেকে হিসাব কষলে এ পর্যন্ত ৮ ক্লাবে কোচের দায়িত্বে থেকে—ইউনিয়াও লেইরিয়া, পোর্তো, চেলসি (দুই মেয়াদে), ইন্টার মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহাম, রোমা—দলবদলে ১,৬৯৭ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছেন মরিনিও। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ১৬ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা এ হিসাব কষেছে।

এর মধ্যে চেলসিতে দুই মেয়াদ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছেন মরিনিও (৭৬৫.৭ মিলিয়ন ইউরো)। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ৭ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্রায় আড়াই বছর ছিলেন মরিনিও। সেখানে দলবদলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরচ করেছেন—৩৪৯.৭ মিলিয়ন ইউরো। এরপর যথাক্রমে রিয়াল মাদ্রিদ (১৬৭.৫ মিলিয়ন ইউরো), ইন্টার মিলান (১৫৪.৬ মিলিয়ন ইউরো), টটেনহাম (১৩৫.৯ মিলিয়ন ইউরো), রোমা (৯৭.৭ মিলিয়ন ইউরো), পোর্তো (২৫.৮ মিলিয়ন ইউরো) ও ইউনিয়াও (০.১ মিলিয়ন ইউরো)।

মূল দলের কোচ হিসেবে গার্দিওলার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু বার্সেলোনায় ২০০৮ সালে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি—বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ এবং ম্যানচেস্টার সিটি। এই কোচিং ক্যারিয়ারে দলবদলের বাজারে কম খরচ করেছেন মরিনিওর তুলনায়। ১,৫৮৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছেন তিনি—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে শুধু ম্যানচেস্টার সিটিতেই গত পাঁচ বছরে ১০৪২.৬ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা) খরচ করেছেন গার্দিওলা। বার্সেলোনায় চার বছরে ৩৪১.৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছেন তিনি, বায়ার্নে ২০৩.৯ মিলিয়ন ইউরো। দলবদলে টাকার বস্তা নিয়ে নামার ক্ষেত্রেও একে অপরের সমালোচনা করেছেন গার্দিওলা-মরিনিও।

ডাগআউটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি দলবদলেও প্রচুর খরচ করেছেন এ দুই কোচ
ফাইল ছবি: এএফপি

গার্দিওলার সিটিকে তাক করে স্কাই স্পোর্টসকে মরিনিও একবার বলেছিলেন, ‘আপনি ধনী ক্লাব হতে পারেন, সেরা খেলোয়াড় কিনতে পারেন, কিন্তু ঐতিহ্য, মান-মর্যাদা কখনো কিনতে পারবেন না।’ গার্দিওলা এর জবাবে বলেছিলেন, ‘আমরা কাউকে অসম্মান করছি তা মনে করি না। আমরা শুধু শিরোপা জিততে চাই।’

চলতি দলবদলের মৌসুমে মরিনিও রোমায় শুরু করবেন প্রথম মৌসুম, ওদিকে সিটিতে নিজের ষষ্ঠ মৌসুম শুরু করবেন গার্দিওলা। এরই মধ্যে শুধু জ্যাক গ্রিলিশকে কিনতেই ১১৭ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে সিটি। রোমা এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউরো (৯৭.৭) খরচ করে ফেলেছে, সিটির খরচ ১২৭ মিলিয়ন ইউরো।