মস্কোর 'রাজনীতি', এথেন্স ও বেলগ্রেডে শ্রেণিসংঘাত

ডার্বি ঘিরে ডায়নামো সমর্থকদের উন্মাদনা। ছবি : টুইটার
ডার্বি ঘিরে ডায়নামো সমর্থকদের উন্মাদনা। ছবি : টুইটার
>যুগ যুগ ধরে ফুটবল নিয়ে কত উন্মাদনা, কত ভালোবাসা, কত আবেগের ছড়াছড়ি! নিছক খেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে ফুটবল এখন বিভিন্ন শহর বা অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্বেরও অন্যতম মাপকাঠি। ফুটবলপাগল এসব শহর বা অঞ্চলের মানুষদের উন্মাদনাই খেলাটার আভিজাত্যে চড়ায় নিত্যনতুন রং। এমনই কিছু ঐতিহ্যবাহী ফুটবলীয় শহর নিয়ে প্রথম আলোর এই ধারাবাহিক

ফুটবলকে নিজেদের জীবনযাত্রার এক অংশ করে নিয়েছে যেন ইউরোপীয়রা। মহাদেশটায় এমন কিছু শহর আছে, যার মোট স্টেডিয়াম সংখ্যা বিশ্বের অনেক দেশের চাইতেও বেশি। বিশ্বমানের খেলার স্টাইলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিজেদের ফুটবল-সংস্কৃতির সফল ও কার্যকরী প্রচার-প্রচারণা। আর তার সঙ্গে ফুটবলপ্রেমী মানুষদের উন্মাদনা তো রয়েছেই। নিছক খেলাই নয়, ফুটবল এখন যেকোনো দেশ, অঞ্চল বা শহরের শ্রেষ্ঠত্বেরও অন্যতম মাপকাঠি। ফুটবলপাগল এই শহরগুলোই খেলাটার আধিপত্যে নতুন মাত্রা যোগ করে প্রতিনিয়ত। আর এ দিক দিয়ে ইংল্যান্ড, ইতালি আর স্পেনের শহরগুলোর পাশাপাশি পিছিয়ে নেই জার্মানি, পর্তুগাল বা রাশিয়ার বেশ কিছু শহরও। ইউরোপের এমনই আরও কিছু ফুটবল-উন্মাদ শহরের গল্প দ্বিতীয় পর্বে।

মস্কো, রাশিয়া

রাশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো ডার্বি মানা হয় স্পার্তাক মস্কো বনাম ডায়নামো মস্কোর দ্বৈরথকে। খেলার মাঠ ছাড়িয়ে যে দ্বৈরথে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। স্পার্তাক আর ডায়নামো আগে নিয়মিত রাশিয়ান ফুটবলের সেরা পুরস্কার পাওয়ার জন্য লড়াই করত। এর মধ্যেই ঘটনায় এল এক অপ্রত্যাশিত মোড়। স্পার্তাকের মূল খেলোয়াড় নিকোলাই পেত্রোভিচ স্তারোস্তিন ও তাঁর তিন ভাইকে গ্রেপ্তার করা হলো জোসেফ স্তালিন হত্যা পরিকল্পনার দায়ে। দুই বছর ধরে চলল জিজ্ঞাসাবাদ। স্তারোস্তিনের কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে না পাওয়া সত্ত্বেও দশ বছর সার্বিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হলো। গোটা সময়ে ধরে স্তারোস্তিনের বিশ্বাস ছিল, এ চক্রান্তের পেছনে দায়ী ডায়নামো মস্কোর পৃষ্ঠপোষক ও সোভিয়েত রাজনীতিবিদ লাভরেন্তি বেরিয়া। স্তারোস্তিনের অভিশাপের জন্যই কি না, ১৯৭৬ সালের পর থেকে ডায়নামো লিগ জেতেনি। যার ফলে একটু হলেও এই ডার্বির রং ফিকে হয়ে গেছে। কমে গেছে উত্তেজনা। ডায়নামোর জায়গায় স্পার্তাকের প্রধান শহুরে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এখন চলে এসেছে সিএসকেএ মস্কো। তাও লিগের দৌড়ে সিএসকেএ বা ডায়নামো, কেউই স্পার্তাককে স্পর্শ করতে পারেনি। ডায়নামো আর সিএসকেএ মিলে যেখানে লিগ জিতেছে মোট তেইশটা, স্পার্তাক একাই জিতেছে তার চেয়ে মাত্র একটি কম। ওদিকে মহাদেশীয় শিরোপার কথা বিবেচনায় আনলে সবার চেয়ে এগিয়ে সিএসকেএ। মস্কোর অন্য কোনো ক্লাবেরই ইউরোপীয় শিরোপা নেই, সিএসকেএ সেখানে উয়েফা কাপ জিতেছে একবার।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব : সিএসকেএ মস্কো, লোকোমোটিভ মস্কো, স্পার্তাক মস্কো, ডায়নামো মস্কো, টর্পেডো মস্কো
শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: অ্যালান জাগোয়েভ, ইগর আকিনফিভ, জোরান তসিচ, কেইসুকে হন্ডা (সিএসকেএ মস্কো)
দিমিত্রি লোসকভ, ফেদর স্মোলভ, ফেলিপে কায়সেদো, জেফারসন ফারফান (লোকোমোটিভ মস্কো)
লেভ ইয়াশিন, সের্গেই সোলোভইয়োভ, ম্যাথু ভালবুয়েনা, ভ্যালেরি মাসলভ (ডায়নামো মস্কো)
ভ্যালেন্তিন ইভানভ, আমির স্পাইচ, ভিক্টর শুশতিকোভ (টর্পেডো মস্কো)
রোমান পাভলুচেঙ্কো, নেমানিয়া ভিদিচ, এইডেন ম্যাকগিডি, নিকিতা সিমোনইয়ান (স্পার্তাক মস্কো)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
স্পার্তাক মস্কো—রাশিয়ান লিগ (২২), রাশিয়ান কাপ (১৩), রাশিয়ান সুপার কাপ (১), দ্বিতীয় বিভাগ (১)
সিএসকেএ মস্কো—রাশিয়ান লিগ (১৩), রাশিয়ান কাপ (১২), রাশিয়ান সুপার কাপ (৭), দ্বিতীয় বিভাগ (২), উয়েফা কাপ (১)
লোকোমোটিভ মস্কো—রাশিয়ান লিগ (৩), রাশিয়ান কাপ (১০), রাশিয়ান সুপার কাপ (৩), দ্বিতীয় বিভাগ (২)
ডায়নামো মস্কো—রাশিয়ান লিগ (১১), রাশিয়ান কাপ (৭), রাশিয়ান সুপার কাপ (১), দ্বিতীয় বিভাগ (১)
টর্পেডো মস্কো—রাশিয়ান কাপ (৭)

লিসবন, পর্তুগাল

পর্তুগালের পতাকার দিকে তাকালে দুটি রঙের আধিক্য দেখা যায়—লাল ও সবুজ। দেশের রাজধানী লিসবনের প্রধান দুটি ক্লাব বেনফিকা ও স্পোর্টিং লিসবন এই দুই রংই বেছে নিয়েছে নিজেদের পরিচয় হিসেবে - বেনফিকা লাল, স্পোর্টিং সবুজ। ১৯০৭ সালে বেনফিকা থেকে সাত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নাম লেখান স্পোর্টিংয়ে, সেখান থেকেই শুরু এই শত্রুতা। পরে ইউসেবিওর মতো কিংবদন্তিকে দলে ভিড়িয়ে সে ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে বেনফিকা। ঘরোয়া লিগে সাফল্যের দিক দিয়েও এগিয়ে তারা। স্পোর্টিংয়ের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি শিরোপা তাদের। ইউরোপীয় প্রতিযোগিতাতেও অবস্থা একই। বেনফিকা ইউরোপসেরা হয়েছে দুবার, ওদিকে এখনো অপেক্ষায় স্পোর্টিং। লুইস ফিগো, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের মতো মহাতারকাদের উত্থানের পেছনে আবার হাত রয়েছে স্পোর্টিংয়ের।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব : স্পোর্টিং লিসবন, বেনফিকা, বেলেনেনসেস
শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: ফার্নান্দো পেইরোতিও, লুইস ফিগো, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ব্রুনো ফার্নান্দেস, আদ্রিয়েন সিলভা, জোয়াও মুতিনহো, রুই পাত্রিসিও (স্পোর্টিং লিসবন)
ইউসেবিও, লুইসাও, হোসে আগুয়াস, মারিও কোলুনা, অস্কার কার্দোসো, নেনে, ডেভিড লুইজ, এদুয়ার্দো সালভিও, অ্যানহেল ডি মারিয়া (বেনফিকা)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
স্পোর্টিং লিসবন—পর্তুগিজ লিগ (১৮), পর্তুগিজ কাপ (১৭), পর্তুগিজ লিগ কাপ (২), সুপার কাপ (৮), কাপ উইনার্স কাপ (১)
বেনফিকা—পর্তুগিজ লিগ (৩৭), পর্তুগিজ কাপ (২৬), পর্তুগিজ লিগ কাপ (৭), সুপার কাপ (৮), চ্যাম্পিয়নস লিগ (২)

মাঠের অবস্থা এমনই থাকে স্পোর্টিং-বেনফিকা ম্যাচের সময়। ছবি : টুইটার
মাঠের অবস্থা এমনই থাকে স্পোর্টিং-বেনফিকা ম্যাচের সময়। ছবি : টুইটার

এথেন্স, গ্রিস

শহরে অন্যান্য ক্লাব থাকলেও অলিম্পিয়াকোস আর প্যানাথিনাইকোসের দ্বৈরথ অন্য মাত্রার। আর দশটা ডার্বির মতো এরও মূলেও শ্রেণিসংঘাত। ১৯৬২ সালের গ্রিক কাপের ফাইনালের কথাই ধরা যাক। দুই দলের সমর্থকেরা এতটাই হাঙ্গামা করেছিলেন যে প্রথমার্ধ শেষ করতে ৬৬ মিনিট লেগেছিল রেফারির। দুই অর্ধের মধ্যকার বিরতি ছিল ৩৫ মিনিটের, ফলে ম্যাচ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ফ্লাডলাইটহীন স্টেডিয়ামে ম্যাচ চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেন রেফারি। পরে এই ম্যাচ আবার আয়োজন করার ‘দুঃসাহস’ দেখায়নি কর্তৃপক্ষ। ‘দরিদ্র’ অলিম্পিয়াকোস ও ‘ধনী’ প্যানাথিকাইসোসের লড়াই এভাবেই চলে এসেছে যুগ যুগ ধরে। নিজেদের 'কুলীন' শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে মনে করা প্যানাথিনাইকোস বরাবরই অলিম্পিয়াকোসের সমর্থকদের দেখে এসেছে 'অচ্ছুৎ' হিসেবে। যদিও শিরোপার প্রাচুর্যে অলিম্পিয়াকোস প্যানাথিনাইকোসকে টেক্কা দিয়েছে বহু আগেই। ওদিকে এইকে এথেন্সের সঙ্গে অলিম্পিয়াকোসের দ্বৈরথও কম যায় না। গতকালই এই দুই দলের মধ্যকার গ্রিক কাপ ফাইনাল স্থগিত করা হয়েছে। কারণ? গ্যাসোলিন বোমার সন্ধান পাওয়া গেছে স্টেডিয়ামে!

উল্লেখযোগ্য ক্লাব : অলিম্পিয়াকোস, এইকে এথেন্স, প্যানাথিনাইকোস, আত্রোমিতোস
শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: রশিদী ইয়াকিনি, রিভালদো, ক্রিস্টিয়ান করিম্বেউ, মার্কো মারিন, এরিক আবিদাল, ম্যাথু ভালবুয়েনা, কস্টাস পলিক্রোনিউ (অলিম্পিয়াকোস)
হুগো আলমেইদা, ব্রুনো আলভেস, জোলেওন লেসকট, রিভালদো, (এইকে এথেন্স)
জিলবার্তো সিলভা, আন্তোনিস নিকোপোলিদিস, অ্যানহেলোস বাসিনাস, ইগর বিসকান, সিডনি গোভু, জিব্রিল সিসে, মাইকেল এসিয়েন (প্যানাথিনাইকোস)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
অলিম্পিয়াকোস—গ্রিক লিগ (৪৫), গ্রিক কাপ (২৭), গ্রিক সুপার কাপ (৪)
প্যানাথিনাইকোস—গ্রিক লিগ (২০), গ্রিক কাপ (১৮), গ্রিক সুপার কাপ (৩)
এইকে এথেন্স—গ্রিক লিগ (১২), গ্রিক কাপ (১৫), গ্রিক সুপার কাপ (৩)

দর্শক হাঙ্গামায় ম্যাচ থেমে যাওয়া এথেন্সে স্বাভাবিক বিষয়। ছবি : টুইটার
দর্শক হাঙ্গামায় ম্যাচ থেমে যাওয়া এথেন্সে স্বাভাবিক বিষয়। ছবি : টুইটার

মিউনিখ, জার্মানি

তালিকার অন্যান্য শহরের তুলনায় মিউনিখের এই দুই দলের ‘ডার্বি’ অতটা রোমাঞ্চকর নয়। কারণ একটাই, বায়ার্নের একচ্ছত্র আধিপত্য। ওদিকে বুন্দেসলিগাতেই জায়গা পেতে খাবি খেতে হয় ১৮৬০ মিউনিখকে। তাও মিউনিখের ফুটবলীয় সংস্কৃতি বিশ্বের সামনে মেলে ধরার পেছনে দুই দলই ভূমিকা রেখেছে নিজেদের মতো।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব : বায়ার্ন মিউনিখ, ১৮৬০ মিউনিখ
শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জার্ড মুলার, সেপ মাইয়ার, বাস্তিয়ান শোয়াইনস্টাইগার, অলিভার কান, মাইকেল বালাক, ফিলিপ লাম, টমাস মুলার (বায়ার্ন মিউনিখ)
রুডি ফলার, রুডোলফ ব্রুনেমাইয়ার (১৮৬০ মিউনিখ)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
বায়ার্ন মিউনিখ—জার্মান লিগ (৩০), জার্মান কাপ (২০), জার্মান লিগ কাপ (৭), জার্মান সুপার কাপ (৬), চ্যাম্পিয়নস লিগ (৫), ইউরোপা লিগ (১), কাপ উইনার্স কাপ (১), উয়েফা সুপার কাপ (১), ক্লাব বিশ্বকাপ (১), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (২)
১৮৬০ মিউনিখ—জার্মান লিগ (১), জার্মান কাপ (২)


বেলগ্রেড, সার্বিয়া

সার্বিয়ায় থাকবেন, কিন্তু রেড স্টার বা পার্টিজানের মধ্যে যেকোনো একটা দল সমর্থন করবেন না, এ হতে পারে না। এক ক্লাব থেকে আরেক ক্লাবের স্টেডিয়ামে হেঁটে যেতে সর্বোচ্চ দশ থেকে বারো মিনিট লাগে, কাছাকাছি থাকা এই দুই ক্লাবের লড়াইতেই প্রত্যেকবার থেমে যায় গোটা সার্বিয়া। শুধু বেলগ্রেড শহর না, গোটা দেশকেই যেন দুভাগ করে দেয় ক্লাব দুটি। দেশটায় এখনো নতুন বাচ্চা জন্ম নিলে হয় রেড স্টার বা পার্টিজানের লোগো সংবলিত কিছু না কিছু উপহার দেওয়া হয়। ফলে বলা যায়, পৃথিবীর আলো দেখতে না দেখতেই দুটি দলের কোনো এক দলের ‘সদস্য’ হয়ে যায় সদ্য আসা শিশুটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিলিটারিদের বানানো পার্টিজান আর সাধারণ মানুষদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা রেড স্টারের দ্বৈরথ চির অমলিন। নব্বইয়ের দশকের মতো দাঙ্গা এখন আর না হয় না, কারণ এখন আগে থেকেই পুলিশবাহিনী থাকে সদা সতর্ক। ২০১৩ সালেই এক ডার্বির পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১০৩ জন।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব : পার্টিজান বেলগ্রেড, রেড স্টার বেলগ্রেড
শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: ভেলিবোর ভাসোভিচ, স্টেফান ইয়োভেটিচ, স্লাভিসা ইয়োকানোভিচ, ভ্লাদিমির স্টয়কোভিচ, প্রেদ্রাগ মিয়াতোভিচ (পার্টিজান বেলগ্রেড)
দেয়ান সাভিসেভিচ, সিনিসা মিহায়লোভিচ, স্টেভান স্টোয়ানোভিচ, নেমানিয়া ভিদিচ, দ্রাগান স্টয়কোভিচ (রেড স্টার বেলগ্রেড)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
রেড স্টার বেলগ্রেড—সার্বিয়ান লিগ (৩১), সার্বিয়ান কাপ (২৪), উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ (১), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (১)
পার্টিজান বেলগ্রেড—সার্বিয়ান লিগ (২৭), সার্বিয়ান কাপ (১৬)

রেড স্টার বনাম পার্টিজান ম্যাচে এমন না হওয়াটাই বরং আশ্চর্যের বিষয়! ছবি : টুইটার
রেড স্টার বনাম পার্টিজান ম্যাচে এমন না হওয়াটাই বরং আশ্চর্যের বিষয়! ছবি : টুইটার

ইস্তাম্বুল, তুরস্ক

বিশ্বে বেশ কিছু দেশ রয়েছে, দুই মহাদেশ জুড়ে রয়েছে যাদের অবস্থান। তুরস্ক এদের মধ্যে অন্যতম, ইস্তাম্বুলের কিছু অংশ পড়েছে এশিয়ায়, বাকিটা ইউরোপে। এই পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ডার্বি’—গ্যালাতাসারাই বনাম ফেনেরবাচে। যদিও ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে প্রাচীন ক্লাবের মর্যাদা এখনো ধরে রেখেছে বেসিকতাস। ওদিকে ক্লাবের ফুটবলীয় অংশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সবার আগে এসেছে গ্যালাতাসারাই। ১৯৯৬ সালে গ্যালাতাসারাইয়ের ম্যানেজার সাবেক স্কটিশ মিডফিল্ডার গ্রায়েম স্যুনেস ফেনেরবাচের মাটিতে তাদের হারানোর পর সাহস করে মাঠে গ্যালাতাসারাইয়ের পতাকা পুঁতে এসেছিলেন। ফেনেরবাচের সমর্থকেরা পারেনি শুধু তাঁকে আস্ত চিবিয়ে খেতে! ‘কাজটা বুদ্ধিমানের হয়নি’—স্যুনেসের মতো মারদাঙ্গা লোক শেষমেশ এই স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। বুঝুন তাহলে, গ্যালাতাসারাই আর ফেনেরবাচের মধ্যে শত্রুতার মাত্রা কত বেশি!

ইস্তাম্বুলের সেরার লড়াই। ছবি : টুইটার
ইস্তাম্বুলের সেরার লড়াই। ছবি : টুইটার

উল্লেখযোগ্য ক্লাব : গ্যালাতাসারাই, ফেনেরবাচে, বেসিকতাস
শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: গিওর্গি পোপেস্কু, গিওর্গি হ্যাগি, ক্লদিও তাফারেল, ফ্রাঙ্ক রিবেরি, দিদিয়ের দ্রগবা, হাকান সুকুর, ওয়েসলি স্নাইডার (গ্যালাতাসারাই)
আরিয়েল ওর্তেগা, পিয়েরে ফন হুইডোঙ্ক, নিকোলাস আনেলকা, রবার্তো কার্লোস, রবিন ফন পার্সি (ফেনেরবাচে)
দেম্বা বা, গুতি, পেপে (বেসিকতাস)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
গ্যালাতাসারাই—লিগ (২২), কাপ (১৮), সুপার কাপ (১৬)
ফেনেরবাচে—লিগ (১৯), কাপ (৬), সুপার কাপ (৯)
বেসিকতাস—লিগ (১৫), কাপ (৯), সুপার কাপ (৮)