মানে কম, দামে বেশি

বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দছবি: বাফুফে

ক্লাব সূত্র অনুযায়ী, বসুন্ধরা কিংসের পর এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাজেটের দল গড়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। খাতা-কলমে বিদেশি ও স্থানীয় খেলোয়াড় তালিকাতেও সেই কথার মিল পাওয়া যায় কিছুটা। শুধু খেলার মাঠেই দেখা যায় না দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরুচে দলের প্রতিচ্ছবি। দল গড়ার খরচের সঙ্গে মাঠের পারফরম্যান্সের তুলনা করলে সাম্প্রতিক সময়ে বহুল ব্যবহৃত একটি কথা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের এবারের দলের ক্ষেত্রে ঘুরিয়ে বলা যায়—মানে কম, দামে বেশি।

আজ কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে দুই লাল কার্ডের নাটকীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের কাছে ১–০ গোলে হেরে স্বাধীনতা কাপ থেকে বিদায় নিয়েছে শেখ রাসেল। কোয়ার্টার ফাইনালে একমাত্র গোল করে শেখ রাসেলকে ছিটকে দিয়েছেন পুলিশের আফগান স্ট্রাইকার আমিরুদ্দিন শরিফি। অথচ সর্বশেষ লিগে নবম হয়েছিল পুলিশ।

পুলিশের আনন্দ
ছবি: বাফুফে

সাম্প্রতিক সময়ে মৌসুম শুরুর আগে শেখ রাসেলের ব্যাপারে খুব হাঁকডাক শোনা যায়। বিশেষ করে বিদেশি খেলোয়াড় কেনা নিয়ে। ক্লাব সূত্র অনুযায়ী বিদেশি খেলোয়াড়দের নামের পাশে লেখা থাকে মোটা অঙ্কের বেতন। কিন্তু মাঠের খেলার সঙ্গে সেই বেতনের পার্থক্যটা থেকে যায় আকাশ–পাতাল। কয়েক মৌসুম ধরেই দেখা যাচ্ছে এমন।

এবার এশিয়ান কোটায় কিরগিজস্তান জাতীয় দলের ডিফেন্ডার আয়জার আকমাতভকে নিয়েছে শেখ রাসেল। বাকি তিনজনের কোটা পূরণ করতে দুই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড থিয়াগো আমারাল ও এইলতন মাচাদোর সঙ্গে গিনি বিসাউ ও পর্তুগালের যৌথ নাগরিকত্ব থাকা ফরোয়ার্ড ইসমায়েল গনসালভেস নিয়েছে ২০১২–১৩ মৌসুমের ট্রেবল-জয়ীরা। আজ তো পেনাল্টি থেকেও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন এইলতন। আর আমারাল তো চোটের কারণে মাঠেই নামতে পারছেন না।

কমলাপুরে নাটকীয় এক ম্যাচই হয়েছে আজ। দুই অর্ধে দুই দলের একজন করে খেলোয়াড় দেখেছেন লাল কার্ড। প্রথমার্ধে পুলিশ ১০ জনে পরিণত হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে একই পরিণতি হয় শেখ রাসেলের। মূলত ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দুই দলের বিদেশি খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স। একটি মাত্র সুযোগ পেয়ে সেটিকে গোলে পরিণত করেছেন আফগান শরিফি। অন্যদিকে পেনাল্টি থেকেও দলকে সমতায় ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছেন শেখ রাসেলের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড এইলতন।

৪ মিনিটেই এগিয়ে যায় পুলিশ। মরক্কোর মিডফিল্ডার আদিল কুসকুসের ক্রস থেকে হেডে গোল করেন শরিফি। ম্যাচে ফেরার মতো অনেক সুযোগই পেয়েছে সাইফুল বারির শেখ রাসেল। প্রথমার্ধেই একটি করে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন মানিক হোসেন ও মান্নাফ রাব্বি।

ফেবারিটের মতো খেলতে পারেনি শেখ রাসেল
ছবি: বাফুফে

প্রথম মিসটা মিডফিল্ডার মানিকের। হেমন্ত ভিনসেন্টের কর্নারে গোলমুখের দূরের পোস্টে পাহারাহীন অবস্থায় ছিলেন মানিক। কিন্তু বলে পা–ই লাগাতে পারলেন না জাতীয় দলে খেলা এই মিডফিল্ডার। ৩৯ মিনিটে রাব্বির গোল মিসটাও চোখে লেগে থাকার মতো। ওভারল্যাপিং করে ওপরে উঠে ক্রস করেছিলেন লেফটব্যাক খালেকুজ্জামান সবুজ, ঠিকমতো বলে পা লাগাতে পারলেন না রাব্বি।

৪১ মিনিটেই ১০ জনের দলে পরিণত হয় পুলিশ। প্রতিপক্ষ মিডফিল্ডার হেমন্তর গায়ে হাত তোলায় সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মিডফিল্ডার মোনায়েম খান। ৫১ মিনিটে হেমন্তর কল্যাণেই পেনাল্টি পায় শেখ রাসেল। হেমন্তকে পুলিশ সেন্টারব্যাক জয়ন্ত কুমার ফাউল করলে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। কিন্তু পেনাল্টি থেকে বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন এইলতন। তাঁর দুর্বল শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন পুলিশ গোলকিপার মোহাম্মদ নেহাল।

লাল কার্ড দেখেন হেমন্ত
ছবি: প্রথম আলো

১০ জনের বিপক্ষেই কুলিয়ে উঠতে পারছিল না ১১ জনের শেখ রাসেল। সেখানে ৬২ মিনিটে তারাও ১০ জনের দলে পরিণত হয়। অহেতুক ডাইভিংয়ের অপরাধে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন হেমন্ত। শেষ পর্যন্ত আর সমতায় ফেরা হয়নি শেখ রাসেলের।

২০১৮ সালে সর্বশেষ স্বাধীনতা কাপে রানার্সআপ হওয়া শেখ রাসেলের এবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায়। প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কাপ খেলতে এসেই সেমিফাইনালে পুলিশ। ১৪ ডিসেম্বর তাদের প্রতিপক্ষ বসুন্ধরা কিংস ও শেখ জামাল ধানমন্ডির মধ্যকার জয়ী দল।