মার্সেলো নামলেই হারে রিয়াল মাদ্রিদ

ছন্দে থাকা মার্সেলো এখন রিয়াল মাদ্রিদের কাছে অতীতের সুখস্বপ্ন।ছবি: এএফপি

মার্সেলোকে নিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। দিনকে দিন যেন কোচ জিনেদিন জিদানের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছেন ৩২ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাক। সেরা সময়টা ফেলে এসেছেন মার্সেলো। চোটের কারণে ক্যারিয়ারটাও এলোমেলো হয়ে পড়েছে।

গত বছরের মার্চে জিদান দ্বিতীয় দফা রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব নেওয়ার পর লিগে ৫৪টি ম্যাচ খেলেছে রিয়াল, এর ৮টিতে হেরেছে। ওই ৮ ম্যাচের প্রতিটিতেই একাদশে ছিলেন মার্সেলো।

সর্বশেষ হারটি গত পরশু লিগে নিজেদের মাঠে কাদিজের বিপক্ষে। ১৪ বছর পর লা লিগায় উঠে আসা দলটার বিপক্ষে পরশু রিয়ালের ১-০ গোলে হারের ম্যাচেও একাদশে ছিলেন মার্সেলো। আগামী শনিবার এল ক্লাসিকো। এর ঠিক আগে এমন হারে তাই ভাবিয়ে তুলেছে জিদানকে।

আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে পরশু কাদিজের বিপক্ষে হারের দোষটাও অনেকটাই পড়ছে মার্সেলোর কাঁধে। টেলিভিশনের ফুটেজে দেখানো হয়েছে কিভাবে কাদিজের হোসে মারিকে বল পেতে সুবিধা করে দিয়েছিলেন তিনি।

মার্সেলো থাকায় (বা ঠিক জায়গামতো না থাকায়) রিয়াল রক্ষণের বাঁ দিক দিয়ে কাদিজ হেসেখেলে বল নিয়ে ঢুকেছে বারবার। কাদিজের রাইট উইংয়ে খেলা সালভি সহজেই রিয়াল বক্সে ঢুকেছেন। এরপর কাদিজ স্ট্রাইকার আলভারো নেগ্রেদো যখন বল পেয়েছেন, রামোস বারবার মার্সেলোকে ডেকে বলেছেন নেগ্রেদোকে আটকাতে। টিভি রিপ্লেতেও দৃশ্যটা দেখানো হয়েছে একাধিকবার।

আক্রমণে মার্সেলোর মতো দক্ষ না হলেও রক্ষণে মার্সেলোর চেয়েও বেশি ভরসা জোগাচ্ছেন মেন্দি (বাঁয়ে)।
ছবি: রয়টার্স

কাদিজ ম্যাচে সব মিলিয়ে ১৮ বার বল হারিয়েছেন মার্সেলো। যেটা মাদ্রিদের ওই ম্যাচের যে কোনো ফুটবলারের সবচেয়ে বেশিবার বল হারানোর ঘটনা। এটা অবশ্য মার্সেলোর জন্য বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। গত মৌসুমে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ৬ ফেব্রুয়ারির ম্যাচে যেমনটা দেখা গেছে। ওই ম্যাচে ২৬ বার বল হারিয়েছিলেন মার্সেলো। পরের ম্যাচে সেল্টার বিপক্ষে ২৭ বার বল হারান। গত মৌসুম থেকেই যে ফরাসি লেফটব্যাক ফারলাঁ মেন্দির কাছে জায়গা হারিয়েছেন মার্সেলো, তা এমনি এমনি নয় মোটেও।

মার্সেলোকে নিয়ে যে আটটি ম্যাচে হেরেছে রিয়াল, তার ৭টিতেই পুরো ৯০ মিনিট খেলেছেন মার্সেলো। বাকি এক ম্যাচে তাঁকে ৫৯ মিনিটে তুলে নেন জিদান।

কাদিজের বিপক্ষে হার নিয়ে জিদান রিয়ালে দ্বিতীয় দফায় আসার পর এ পর্যন্ত মার্সেলোকে একাদশে রেখে ২৬টি ম্যাচ খেলেছে রিয়াল। তাতে জয় এসেছে ১৫টি, ড্র ৩টি, হার ৮টি। আর মার্সেলোকে একাদশের বাইরে রেখে রিয়াল নেমেছে ২৮ ম্যাচে। তাতে জয় ১৯টি জয়, ড্র ৯টি। মার্সেলোকে একাদশে রেখে জয়ের হার ৫৭.৭ শতাংশ, মার্সেলোকে ছাড়া ৬৭.৯ শতাংশ।

মার্সেলোকে নিয়ে যে আটটি ম্যাচে হেরেছে রিয়াল, তার ৭টিতেই পুরো ৯০ মিনিট খেলেছেন মার্সেলো। বাকি এক ম্যাচে তাঁকে ৫৯ মিনিটে তুলে নেন জিদান। রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে সেই হারটি ছিল করোনার কারণে লকডাউনের ঠিক আগে। মার্সেলো ৯০ মিনিট খেলেছেন, এমন বাকি ৭ হার এসেছে ভ্যালেন্সিয়া (১-২, ২০১৮-১৯ মৌসুমে), রায়ো ভায়েকানো (০-১, ২০১৮-১৯ মৌসুমে), রিয়াল সোসিয়েদাদ (১-৩, ২০১৮-১৯ মৌসুমে), বেতিস (১-২, ২০১৮-১৯ মৌসুমে), মায়োর্কা (০-১, ২০১৯-২০ মৌসুমে), লেভান্তে (০-১, ২০১৯-২০ মৌসুমে), বেতিস (১-২, ২০১৯-২০ মৌসুমে) আর কাদিজ (০-১, ২০২০-২১ মৌসুমে)।

বাস্তবতা হচ্ছে আগের মতো দুর্দান্ত গতি নেই মার্সেলোর খেলায়। শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলের গতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা তাঁর নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্সেলো ২০১৮-১৯ মৌসুমে চোটে পড়েছেন ১০ বার। সব মিলিয়েই তাঁর এই রক্ষণ দুর্বলতা। গুঞ্জন আছে রিয়াল ছেড়ে অন্য ক্লাবে পাড়ি জমাতে পারেন মার্সেলো, যেতে পারেন মিলান বা জুভেন্টাসে।

এরই মধ্যে বয়সভিত্তিক দল থেকে জিদান রিয়ালের মূল দলে ডেকেছেন লেফটব্যাক মিগেল গুতিয়েরেসকে। গত জুনে অনুশীলনের সুযোগ দিয়েছেন মার্সেলোর সঙ্গে। নিজেকে প্রমাণের সেই সুযোগ যদি গুতিয়েরেস লুফে নিতে পারেন, তাহলে হয়তো রিয়ালের সমস্যার সমাধানও হতে পারে। মার্সেলো অন্য কোথাও চলে গেলে তখন মেন্দির পেছনে লেফটব্যাকে দ্বিতীয় পছন্দ হতে পারেন গুতিয়েরেস।

তবে গুতিয়েরেসের ওপর সেই আস্থা এখনই জিদান রাখবেন কি না সেটাই হলো বড় প্রশ্ন।