মালিকদের ২৩৫০ কোটি ক্ষতির মুখে ফেলছেন ইউনাইটেড সমর্থকেরা

তহবিলে টান পড়ছে ইউনাইটেডের?ছবি: রয়টার্স

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকদের ক্ষোভ জমছে বহুদিন ধরে। গ্লেজার্স ফ্যামিলির মালিকানা নিয়ে ক্লাবটির সমর্থকদের ক্ষোভ তো আজকের নয়। ইউরোপিয়ান সুপার লিগে ইউনাইটেডের নাম জড়িয়ে যাওয়া সেই ক্ষোভের আগুনে বারুদ ঢেলে দিয়েছে। সমর্থকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখে দ্রুতই বিদ্রোহী লিগ থেকে দলের নাম কাটিয়ে নিয়েছে ইউনাইটেড। কিন্তু তাতে সমর্থকদের বিদ্রোহ দমানো যায়নি।

বহুদিন ধরেই গ্লেজার্সদের ক্লাব থেকে বিদায় করতে চাইছেন ইউনাইটেড সমর্থকেরা। ইউরোপিয়ান সুপার লিগের সুবাদে ক্ষোভের আগ্নেয়গিরির লাভা যেহেতু একবার বেরিয়েই পড়েছে, তাতে গ্লেজারদের একেবারে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে চাইছেন রেড ডেভিল ভক্তরা। প্রথমে ক্লাবের অনুশীলন মাঠে প্রবেশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে লিভারপুলের বিপক্ষে ঘরের মাঠের ম্যাচটাকে প্রতিবাদ জানানোর সবচেয়ে বড় অস্ত্র মেনে মাঠে নেমেছিলেন, সেদিন ম্যাচটাই হতে দেননি তাঁরা।

গ্লেজার্সদের বিরুদ্ধে ইউনাইটেডের সমর্থকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের এই বণিক পরিবার বড় বেশি অর্থলোভী। সে চিন্তা থেকে মালিকপক্ষকে একটা মোক্ষম ধাক্কা দিতে পেরেছেন সমর্থকেরা। ইউনাইটেড সমর্থকদের রুদ্রমূর্তিতে গ্লেজার্স পরিবারের হাত ফসকে যাচ্ছে ২০ কোটি পাউন্ড। বাংলাদেশি মূল্যমানে প্রায় ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা!

লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচটি পিছিয়ে দিতে বাধ্য করেছিলেন সমর্থকেরা।
ছবি: রয়টার্স

গত রোববার লিভারপুল ম্যাচের আগে মাঠে নেমে পড়েছিলেন ইউনাইটেড সমর্থকেরা। পরিস্থিতি আওতার বাইরে চলে যাওয়ায় ম্যাচটাই স্থগিত হয়ে যায়। এর আগে গত ২২ এপ্রিল অনুশীলন মাঠে নেমে ক্লাবের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন সমর্থকদের একটি অংশ। সমর্থকদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘দল কখন খেলবে, সেটার সিদ্ধান্ত আমরা নেব (মালিক না)।’ আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘৫১ শতাংশ’, আর বহুদিন ধরেই প্রচলিত সেই দাবি, ‘গ্লেজার্সদের বিদায় চাই।’

এভাবে প্রতিবাদ জানিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি সমর্থকেরা। তাঁরা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, ইউনাইটেডের যত স্পনসর আছে, সবার পণ্য বর্জন করবেন! আর এতেই সর্বনাশ হয়েছে ইউনাইটেডের। ইউনাইটেডের অনুশীলন জার্সির বর্তমান স্পনসর এওএনের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে এই মৌসুমে। ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের অনুশীলন জার্সির সঙ্গে নাম জড়াতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। ম্যানচেস্টারেরই দ্য হাট গ্রুপ (টিএইচজি) ১০ বছরের জন্য ২০ কোটি পাউন্ডের চুক্তি করেছিল।

আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল সে চুক্তি। কিন্তু গত শুক্রবার ইউনাইটেডের সঙ্গে করা সে চুক্তি থেকে সরে গেছে টিএইচজি। এই গ্রুপের মাইপ্রোটিন নামের পুষ্টিপণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নামই শোভা পাওয়ার কথা ছিল ইউনাইটেডের অনুশীলন জার্সিতে।

ক্লাবের অনুশীলন মাঠে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সমর্থকেরা।
ছবি: টুইটার

ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড আরনল্ড দ্য অবজারভারের কাছে এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন বলে জানানো হয়েছে। গত রোববার ওভাবে ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউনাইটেডের ব্যবসায়িক সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সবার ক্ষোভের তীব্রতা দেখেই নাকি টিএইচজি গ্রুপ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ইউনাইটেডের ভক্তদের এক পক্ষ অনলাইনে একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছে, ‘আর এক পয়সাও নয়।’ এই ক্যাম্পেইনের অধীনে ইউনাইটেডের বড় স্পনসরদের বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটা খোলা চিঠিতেই অ্যাডিডাস, ট্যাগ হিউয়ার ও ক্যাডবেরির মতো ইউনাইটেডের স্পনসর বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য বর্জনের হুমকি দিয়েছেন সমর্থকেরা।

টিএইচজি গ্রুপের ধারণা, ম্যানচেস্টারভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বলে সমর্থকদের ক্ষোভটা সবচেয়ে বেশি তাদের ওপর দিয়েই যেত। এ কারণেই তারা সরে যাচ্ছে চুক্তি থেকে। এদিকে বর্তমান স্পনসর এওএন এর চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে ৩০ জুন। এর মধ্যে নতুন স্পনসর খুঁজে নিতে হবে ইউনাইটেডকে। এ ব্যাপারে অবশ্য ইউনাইটেড বা টিএইচজি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।