মুখে এক, মনে আরেক বলেই পিকের ওপর খেপেছিলেন মেসি

লিওনেল মেসি ও জেরার্ড পিকে মাস কয়েক আগেও একসঙ্গে খেলতেন বার্সেলোনায়ছবি: সংগৃহীত

গত আগস্টে বার্সেলোনা ছেড়ে লিওনেল মেসি পিএসজিতে যাওয়ার পর থেকেই স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন, বার্সেলোনারই ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকের সঙ্গে মেসির সম্পর্কটা ভালো নয়। নিজের বার্সা ছাড়ার পেছনে পিকের প্রভাবও দেখেছেন মেসি, এমনটাও শোনা গিয়েছিল। গুঞ্জনটা আবার ফিরে এসেছে আজ বার্সেলোনাভিত্তিক ক্রীড়া দৈনিক স্পোর্তের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর।

স্পোর্ত জানাচ্ছে, মেসির চোখে পিকে মুখে এক রকম, কিন্তু মনে অন্য রকম। খেলোয়াড়দের সঙ্গে এক কথা বলা পিকে বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর সঙ্গে নতুন চুক্তি করে নিজের পকেট পুরেছেন, স্প্যানিশ চ্যানেল টিভি থ্রির অনুষ্ঠান উঞ্জে সাংবাদিক লুইস কানুতের কথাকে উদ্ধৃত করে এমনটাই লিখেছে স্পোর্ত। এ কারণেই পিকের ওপর খেপেছেন মেসি!

মেসি-পিকের দ্বন্দ্বের গুঞ্জন নতুন করে আসছে গতকাল মেসি বার্সেলোনা শহরে ভ্রমণে যাওয়ার পর। বার্সেলোনার বর্তমান কোচ ও একসময়ে বার্সেলোনা দলে মেসির সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলা জাভি হার্নান্দেজের ৪২তম জন্মদিন ছিল গতকাল। সে উপলক্ষে বার্সেলোনা শহরেরই অভিজাত এলাকায় এক রেস্তোরাঁয় কাছের অল্প কয়েকজনকে নিমন্ত্রণ করেছেন জাভি। বার্সেলোনার মিডফিল্ডার সের্হিও বুসকেতস, লেফটব্যাক জর্দি আলবার সঙ্গে সে নিমন্ত্রণে ছিলেন মেসিও।

কিন্তু পিকে সেখানে ছিলেন না বলেই জানাচ্ছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম। এরপর সাংবাদিক লুইস কানুত টিভি থ্রির অনুষ্ঠান উঞ্জে মেসি-পিকের দ্বন্দ্বের কথা ফাঁস করেছেন। কানুতের দাবি, সতীর্থদের সঙ্গে আলোচনায় চুক্তি না করার ব্যাপারে রাজি হলেও পরে নিজে ঠিকই বার্তোমেউ প্রশাসনের অধীনে চুক্তি নবায়ন করেছেন পিকে।

জেরার্ড পিকে বার্সার ড্রেসিংরুমে অনেক প্রভাবশালী। মেসি চলে যাওয়ার পর সবচেয়ে প্রভাবশালী তিনিই
ফাইল ছবি: এএফপি

বার্সেলোনার ড্রেসিংরুমে পিকে কত প্রভাবশালী, সেটি সম্ভবত বলার দরকার পড়ে না। মেসি বার্সেলোনায় থাকার সময়েও পিকে সব সময় কাতালুনিয়ায় আলাদা গুরুত্ব পেয়েছেন। তাঁকে ভবিষ্যৎ বার্সেলোনা সভাপতি হিসেবেও দেখেন অনেকে। মেসি চলে যাওয়ার পর তো এখন পিকেই বার্সেলোনার ড্রেসিংরুমের সবচেয়ে প্রভাবশালী খেলোয়াড়। কিন্তু সেই পিকেই ঢোলের দুই দিকেই বাড়ি দিয়েছেন বলে জানাচ্ছে স্পোর্ত। তাদের কথা, পিকে একদিকে জনসম্মুখে সতীর্থদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন, অন্যদিকে বার্তোমেউ প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করে নিজের আখের গুছিয়েছেন।

ওই চুক্তি নবায়নে মেসির বার্সেলোনায় চুক্তি নবায়নেও ঝামেলা আরও বেড়েছে বলে টিভি থ্রিতে বলেছেন কানুত, ‘পিকের সর্বশেষ চুক্তি নবায়ন মেসির অনেক ক্ষতি করেছে। সে কারণে ও আরও বেশি হতাশ হয়েছে।’

পিকের দ্বিচারিতা দাবি করে আরেকটি উদাহরণও টেনেছেন কানুত। তাঁর কথা, বার্তোমেউ প্রশাসনের শেষ দিকে অর্থকরী চুক্তি করা পিকে নতুন সভাপতি হোয়ান লাপোর্তার অধীনে আবার বেতন কমানোর চুক্তি করেছেন ঠিকই, কিন্তু সেটা করেছেন মেসি বার্সেলোনা থেকে চলে যাওয়ার পর। জনসম্মুখে ব্যাপারটা এমন দেখা গেছে যে পিকে বেতন কমানোতেই সের্হিও আগুয়েরো ও মেম্ফিস ডিপাইকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে নিবন্ধিত করতে পেরেছে বার্সেলোনা। লিগের বেতনসীমার মধ্যে থাকার জন্য খাবি খাচ্ছিল কিনা বার্সা! কিন্তু এখানে খেলাটা অন্য ছিল বলেই দাবি কানুতের।

‘একদিক থেকে দেখলে পিকের ওপর আরেকটা কারণেও হতাশ হয়েছে মেসি। কারণ, মেসি ক্লাব ছাড়ার আগে কিন্তু ও নিজের বেতন কমানোর চুক্তি নবায়ন করেনি। মেসির মনে হয়েছে, ও (পিকে) সেটা আগে করলে মেসির ক্লাব ছাড়া ঠেকানোর চেষ্টা করতে পারত’—বলেছেন কানুত।

তাঁর দাবি, লা মাসিয়াতে বেড়ে ওঠার সময় থেকেই মেসি ও পিকের সম্পর্ক দারুণ ছিল, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেটি খারাপ হয়েছে।

পিকের ব্যাপারে কানুতের মন্তব্যও অবশ্য একেবারে বাছবিচার ছাড়া নেওয়ায় ঝুঁকি থাকে। বেতন কমানোর চুক্তি নবায়নের আগে পিকে কত বেতন পেতেন, অর্থাৎ বার্তোমেউ প্রশাসনের অধীনে সর্বশেষ চুক্তিতে কত টাকা বেতন পেতেন পিকে, সেটি কদিন আগে ফাঁস করে দিয়েছিলেন কানুত। সে সময় দাবি করা হয়েছিল, পিকের বেতন বছরে ২ কোটি ৮০ লাখ ইউরো! এরপর পিকে অবশ্য টুইটারে নিজের বেতনের স্লিপ প্রকাশ করে দাবি করেন, কানুতের দাবি মিথ্যা।