মুগ্ধ করছে এই ইতালি

জমে উঠেছে ইউরো ২০২০-এর লড়াই। জমজমাট নকআউট পর্বে বাংলাদেশ থেকেই চোখ রাখছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ মারুফুল হক। সেই দেখা থেকেই প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তাঁর বিশ্লেষণ—

মারুফুল হক

সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে স্পেন-ইতালি। দুর্দান্ত একটা লড়াই দেখার অপেক্ষায় আছি। দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে ইতালির সম্ভাবনাই বেশি দেখছি। ওরা মুগ্ধ করে চলেছে। স্প্যানিশ কোচ লুইস এনরিকে সেমিফাইনালে তাঁর ছকে বদল আনবেন কি না জানি না। তবে মনে হচ্ছে স্পেন যেভাবে খেলে এসেছে, সেভাবেই খেলবে। এভাবেই ওরা সাফল্য পাচ্ছে। তবে ইতালির মতো হাই প্রেসিং করা দলের বিপক্ষে এই টুর্নামেন্টে এখনো খেলেনি স্পেন।

শেষ আটে বেলজিয়ামের বিপক্ষে বল দখলের লড়াইয়ে জিতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দ্রুত প্রতিপক্ষ সীমানায় নিয়ে গেছে ইতালি। বল হারিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রীতিমতো আক্রমণাত্মক মেজাজে হাই প্রেসিং করে গেছে। ফলে বেলজিয়াম বল পেয়ে বেশিক্ষণ রাখতে পারেনি। আমার মনে হয়, পরশু শেষ আটের লড়াইয়ে এই জায়গায় ইতালি এগিয়ে গেছে।

ইতালি আক্রমণে ওঠার সময় তাদের লেফট উইংগার লরেনৎসো ইনসিনিয়ে ও ওভার ল্যাপ করে ওঠা লেফটব্যাক লিওনার্দা স্পিনাৎসোলা ছিলেন কাছাকাছি। যে কারণে বেলজিয়ামের রাইটব্যাক টমাস মুনিয়ের পক্ষে এই দুজনকে সামলানো কঠিন হয়েছে। ইনসিনিয়ে বারবার ঢুকে পড়েছেন ভেতরে। তাঁর সব মুভই ছিল বিপজ্জনক।

বেলজিয়াম ৫-৩-২-এ চলে যাওয়ায় মাঝমাঠে ইতালির জন্য খেলাটা সহজ হয়েছে এবং প্রাধান্য নিয়ে খেলতে পেরেছে। মাঝমাঠে খেলোয়াড় কম থাকায় কখনোই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বেলজিয়াম। ইতালির মাঝমাঠে জর্জিনহোর ভূমিকা ছিল বেশ কার্যকর। যেহেতু বেলজিয়ামের তুলনায় একজন মিডফিল্ডার বেশি ছিল ইতালির, কাজেই তিনি ওপরে চলে যেতে পেরেছেন। ইতালি এখানে আক্রমণে সুবিধা পেয়েছে এবং সেটিকে কাজে লাগিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে পেরেছে। এই ইতালি আমাকে মুগ্ধ করেছে।

বেলজিয়ামের প্লেমেকার ডি ব্রুইনা ছিলেন অর্ধেক ফিট। ফলে গত ১০টি ম্যাচে যা মিস পাস করেছেন, পরশু সম্ভবত এক ম্যাচেই সমান মিস পাস করেন এবং ডি ব্রুইনার মাঠে চলাফেরাও দ্রুত ছিল না। ওদিকে বেলজিয়ামের খেলার প্রাণ রোমেলু লুকাকুকে বোতলবন্দী রাখেন ইতালির ডিফেন্ডার কিয়েলিনি। উঁচু বল সব কটাতেই কিয়েলিনি জিতেছেন। লুকাকুর দুটি মিসও বেলজিয়ামের হার ত্বরান্বিত করেছে। হ্যাজার্ডের না থাকাও প্রভাব ফেলেছে। সুইস কোচ ভ্লাদিমির পেতকোভিচ ৩-৫-২ বেশি অনুসরণ করে এসেছেন। স্পেনের বিপক্ষে তিনি প্রথাগত ৪-৪-২-এ চলে আসেন। এর কারণ, আগের ম্যাচগুলোয় স্পেনের উইং প্লে ভালো ছিল। ফলে স্পেনের উইংগারদের থামাতে ৩ ডিফেন্ডার দিয়ে সম্ভব ছিল না। তাই চার ব্যাকে চলে আসা। পেতকোভিচের এই ট্যাকটিকস কাজে এসেছে।

সুইসরা শেষ পর্যন্ত হারলেও ধন্যবাদ তাদের প্রাপ্য। স্পেনের মতো এত বেশি বল পজিশন রাখা দলের বিপক্ষে কোনো তাড়াহুড়া করেনি। ফলে সুইসদের ভুল হয়েছে কম। রক্ষণ জমাট রাখতে পেরেছে, যেটা এমন ম্যাচে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও শেষ হাসি স্পেনের। টাইব্রেকারে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে, এই চিরসত্য মনে রাখলেও সুইজারল্যান্ডের নিশ্চয়ই এমন হারে দুঃখ থেকেই যাবে।