‘মেশিন’ কি ঘুমায়?

দিন দিন গোলমেশিন হয়ে উঠছেন হরলান্ড।ছবি: টুইটার

ঘুম কী? বিশ্রাম নেওয়ার একটি সহজাত প্রক্রিয়া, যখন স্বাভাবিক কাজকর্ম সচেতনভাবে সাময়িক বিরতি নেয়। এর চেয়ে সহজভাবে ঘুমের ব্যাখ্যা দেওয়া একটু কঠিন। তো, ঘুম হলো সে জিনিস, যেটা শুধুমাত্র জীবিত কিছুর সঙ্গেই যায়, অর্থাৎ প্রাণ না থাকলে ঘুমের দরকার হয় না। গতকাল যদিও এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে হার্থা বার্লিন। জার্মান এই ক্লাবের টুইটার পেজ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মেশিন কি ঘুমাতে পারে?

বেশ তাত্ত্বিক আলোচনা, দর্শনশাস্ত্রের ছাত্রদের এ নিয়ে আগ্রহ থাকতে পারে। বার্লিনের টুইটার অ্যাকাউন্টের দায়িত্বে যিনি, তাঁর আচমকা এমন দর্শন নিয়ে আগ্রহ জন্মায়নি। তাঁকে বাধ্য করেছেন আরলিং হরলান্ড। কাল বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই স্ট্রাইকার এমন খেলাই খেলেছেন যে তাঁকে আর মানুষ বলে গণ্য করতে রাজি নয় বার্লিন। প্রতিপক্ষের স্তুতি করতে কখনো বাধে না জার্মান ক্লাবগুলোর। কাল ডর্টমুন্ডের কাছে ৫-২ গোলে হারার পর হরলান্ডের জন্য নতুন করে স্তুতিবাক্য খুঁজে পায়নি বার্লিন। তাই ওভাবেই হরলান্ডের প্রশংসা করল জার্মান ক্লাবটি।

হ্যাটট্রিকের পর হরলান্ডের উদযাপন।
ছবি: রয়টার্স

গতকাল ডর্টমুন্ড-বার্লিনের ম্যাচ নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন ইউসুফা মুকোকো। কাল মাঠে নামলেই সবচেয়ে কম বয়সে বুন্দেসলিগা অভিষেকের রেকর্ড মুকোকোর হবে, এটা জানাই ছিল। সেটা করেছেনও। কিন্তু পাদপ্রদীপের আলোর পুরোটা নিজের করে নিয়েছেন আরেক স্ট্রাইকার হরলান্ড। কালই ২০২০ সালের গোল্ডেন বয় (বিশ্বের সেরা তরুণ ফুটবলার) হয়েছেন। সেটা কেন তাঁকে দেওয়া হয়েছে, আবার দেখিয়ে দিয়েছেন। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বার্লিন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যেন ঝড় নেমে এল স্বাগতিক দলের ওপর দিয়ে। দ্বিতীয় মিনিটেই গোল হরলান্ডের। সেটা ছিল ঝড়ের শুরু মাত্র।

দুই মিনিট পরই আবার হরলান্ডের গোল। ৬২ মিনিটে হ্যাটট্রিকও হয়ে গেল ২০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের। ১৫ মিনিটে হ্যাটট্রিক করে মানুষ একটু শান্ত হয়। বিশেষ করে ৭০ মিনিটে যখন গেরেইরোর গোলে ডর্টমুন্ড ৪-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর তো চাইলে মাঠ থেকে তুলেও নেওয়া যেত তাঁকে। কিন্তু গোলের নেশা যে বড় নেশা। ৭৯ মিনিটে ম্যাথেউস কুনিয়া ম্যাচের নিজের দ্বিতীয় গোলে ব্যবধান কমিয়ে আনলেন ৪-২-এ। ব্যস, আবার হরলান্ড শো। মিনিট পার হওয়ার আগেই গোল হরলান্ডের!

এভাবেও হরলান্ডকে আটকে রাখা যাচ্ছে না।
ছবি: টুইটার

এমন এক ম্যাচের পর টুইটারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন হরলান্ড। গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে উদযাপনের একটি ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘দারুণ এক চমক দেখে আজ ঘুম ভেঙেছিল। আর দিনটা শেষ করলাম চার গোল ও জয় দিয়ে।’ সে টুইটেই বার্লিন এমন এক গোলমেশিনের কাছে আত্মসমর্পণের কথা জানাল—যন্ত্রও ঘুমায়? অর্থটা পরিষ্কার, যে ফুটবলার এভাবে গোল করেন, তিনি মানুষ নন, আর তাই তাঁর ঘুমেরও দরকার হওয়ার কথা নয়!

বার্লিনের এমন রসিকতা যে তাঁর পছন্দ হয়েছে, সেটা রিটুইট করে জানিয়েছেন হরলান্ড। আর নিজের গোলের নেশার কথাটা ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন অন্যভাবে। লিগে তাঁর ১০ গোল হয়ে গেছে, কিন্তু ১১ গোল নিয়ে এখনো এগিয়ে আছেন বায়ার্ন মিউনিখের রবার্ট লেভানডফস্কি। কাল হয়তো ছুঁয়েও ফেলতে পারতেন লেভানডফস্কিকে। কিন্তু কোচ ৮৫ মিনিটে তাঁকে তুলে অভিষেক করিয়েছেন মুকোকোর। এ নিয়ে কোচের সঙ্গেও মজা করেছেন হরলান্ড, ‘ম্যাচ শেষে ফাভ্রে (কোচ) জিজ্ঞেস করলেন, কয়টা গোল করলাম। আমাকে বললেন, “তিনটা গোল করলে?” আমি বললাম, “না চারটা। মাত্র চারটা, কারণ, আমাকে মাঠ থেকে তুলে নিয়েছেন ( না হলে আরও হতো)।” তাই আপাতত ওনার ওপর একটু রেগে আছি। কিন্তু কী আর করা, মেনে নিতেই হবে এখন।’