মেসির পাশাপাশি আরও যাঁদের নায়ক ম্যারাডোনা
বিশ্ব ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ৫৯ বছর বয়সে এসেও আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তিকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একবার হাত দিয়ে গোল করে ফুটবলকে উপহার দিয়েছেন ‘হ্যান্ড অব গড’ কথাটি, আবার সে ম্যাচেই সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন গোল অব দ্য সেঞ্চুরি দিয়ে। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের শিরোপাও এনে দিয়েছেন তিনি। আর্জেন্টিনাকে নিয়ে গেছেন দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে।
ফুটবলের মহাতারকা পুরো ক্যারিয়ারে মাদক নিয়ে হয়েছেন নিন্দিতও। এ ছাড়া প্রেমিকার গায়ে হাত তোলা, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া, গণমাধ্যমের ওপর চড়াও হওয়া—এ সব মিলেই ম্যারাডোনা। তারপরও বিশ্ব ফুটবলে তিনি এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁর ফুটবল শৈলীতে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তাঁকে অনুপ্রেরণা মানেন। এই যুগে এসেও কেউ ড্রিবলিংয়ের জাদুতে প্রতিপক্ষকে তটস্থ করলে তাঁকে তুলনা করা হয় ম্যারাডোনার সঙ্গে। এতেই তো বোঝা যায় ম্যারাডোনার নামের সীমা কত দূরে ছড়িয়ে আছে। লিওনেল মেসির সঙ্গেই তাঁর তুলনা হয় সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য দেশের অনেক বড় তারকার কাছেই নায়কের আসনে বসে আছেন ম্যারাডোনা।
লিওনেল মেসি
ম্যারাডোনার পরবর্তী যুগে আর্জেন্টিনার ফুটবলে যে প্রতিভারই ঝলক দেখা গিয়েছে, তাঁর গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ভবিষ্যৎ ম্যারাডোনার ট্যাগ। আরিয়েল ওর্তেগা থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার বর্তমান অধিনায়ক মেসিই হয়তো একমাত্র ম্যারাডোনার সমকক্ষ হতে পারে। ক্লাব ফুটবলের কিছু ক্ষেত্রে ছাড়িয়েও গিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে। মেসি নিজেও তো হতে চেয়েছেন ম্যারাডোনার মতোই। কোচ ম্যারাডোনার অধীনে ২০১০ বিশ্বকাপেও খেলেছেন মেসি। যদিও এখন তর্ক হয়—কে সেরা, মেসি না ম্যারাডোনা? আর্জেন্টিনার জার্সিতে উত্তরটা তো অবশ্যই ম্যারাডোনা।
ম্যারাডোনা কতটা অনুপ্রাণিত করেছেন মেসিকে, তা বার্সেলোনা তারকার কথাতেই পরিষ্কার, ‘আমি যখন বড় হচ্ছিলাম তখন সেভিয়ায় খেলে মাত্রই আর্জেন্টিনায় ফিরেছেন ম্যারাডোনা। ১৯৯৩ সালে নিওয়েলস ওল্ড বয়েজে (মেসির ছেলেবেলার ক্লাব) ফিরে আসেন এবং আর্জেন্টিনাকে পরবর্তী বিশ্বকাপের নিয়ে যান। কোনো সন্দেহ ছাড়াই আমি বলতে পারি, যদি কেউ ফুটবলার হওয়ার জন্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেন, তিনি ম্যারাডোনা।’
হ্যারি কেইন
জাতীয় দল থেকে ম্যারাডোনার অবসরের আগের বছর (১৯৯৩) জন্ম ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার হ্যারি কেইনের। ১৯৯৭ পর্যন্ত খেলেছেন ম্যারাডোনা কিন্তু সেটা নিওয়েলস ও বোকা জুনিয়র্সের হয়ে। ম্যারাডোনার খেলা সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়নি কেইনের। তবে ফুটবলে ম্যারাডোনা কী, তা তো সব ফুটবলারেরই জানা।
২০১৭ সালে ম্যারাডোনাকে প্রথম দেখার সৌভাগ্য হয় কেনের। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে লিভারপুলের বিপক্ষে টটেনহামের ম্যাচে সে সময়ের টটেনহাম কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর সঙ্গী হয়ে ম্যারাডোনার সঙ্গে দেখা করেন কেইন। ম্যাচের আগে কিছু পরামর্শ পান কিংবদন্তির কাছ থেকে। সেদিন তাঁর জোড়া গোলে লিভারপুলকে ৪-১ গোলে হারিয়েছিল টটেনহাম। এ স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গেলেই মুগ্ধতা ঝরে পড়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার কণ্ঠে।
‘তিনি দুর্দান্ত একজন মানুষ। ম্যাচের আগে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পেরেছি—খুবই প্রাণবন্ত ও দারুণ মানুষ। ‘নম্বর টেন’ হিসেবে অন্যতম সেরা তিনি, তাঁর এখানে পাওয়াটা আনন্দের। ইংরেজিতে খুব বেশি কথা বলেননি, স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেছেন। তাই আমি খুব ভালো বুঝতে পারিনি তাঁর কথা। তবে খুবই চটপটে, আমার বেশ প্রশংসা করেছেন। শুধু আমার নয়, কোচ ও দলের ব্যাপারেও দারুণ কিছু প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতো একজনের সঙ্গ পাওয়াটা দারুণ এক অভিজ্ঞতা। কী দুর্দান্ত খেলোয়াড়ই না ছিলেন এবং এ রকম মানুষের কাছে থেকে কেবল শেখাই যায়।’
রবিন ফন পার্সি
ছেলেবেলার নায়ক হিসেবে স্বদেশি ইয়োহান ক্রুইফকে বেছে নিতে পারতেন রবিন ফন পার্সি। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার পার্সির নায়ক ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ট্রফি ম্যারাডোনা হাতে তুলে নিচ্ছেন, সেই দৃশ্য দেখেই তাঁর ভক্ত হয়ে গেছেন এই ডাচ তারকা। ২০১০ বিশ্বকাপের সময় পার্সি বলেন, ‘ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নিয়ে কাঁদতে দেখার ভিডিও দেখেই আমি তাঁর ভক্ত বনে গেছি। আমি বলতে পারব না কতবার আমি সেই ভিডিও দেখেছি।’