মেসি চলে গেলেই ভালো হতো বার্সেলোনার

মাঠে এখনো বার্সেলোনার সেরা অস্ত্র মেসি।ছবি: এএফপি

বার্সেলোনায় আগুন আগেই জ্বলছিল, তাতে শুধু পেট্রল, অকটেন কিংবা ডিজেল ঢালার কাজটা করেছেন কার্লেস তুসকেতস। জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ সভাপতির পদ থেকে সরে আসার পর আপৎকালীন দায়িত্বটা পেয়েছেন তুসকেতস। আগামী ২৪ জানুয়ারি নতুন সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বার্সেলোনাকে সামলানোর দায়িত্ব তাঁর। কাজটা যে তাঁর জন্য কঠিন হয়ে উঠছে দিন দিন, সেটা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। বলে বসেছেন, গত দলবদলে লিওনেল মেসিকে বিক্রি করে দেওয়া উচিত ছিল তাঁর ক্লাবের

এমনিতেই বার্সেলোনায় মন বসছে না মেসির, তাই দল ছাড়তে চেয়েছিলেন। গত কয়েক ম্যাচে দারুণ ফুটবল উপহার দেওয়ার পর কোচ রোনাল্ড কোমান আশা করছিলেন, এবার যদি মত বদলান মেসি। যদি মনে হয়, এ দল নিয়েই ইউরোপ জেতা সম্ভব, তাহলে থেকেও যেতে পারেন ক্লাবের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু ক্লাব সভাপতির এমন বেমক্কা মন্তব্য ঝামেলা পাকিয়ে দিচ্ছে আবার। কোচ কোমান তাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, বলেছেন ক্লাবের ভেতর থেকে এমন কথা বললে সেটা কারও জন্যই সুখকর নয়। কিন্তু এখনো পিছু হটছেন না তুসকেতস। তাঁর দাবি, উনি শুধু অঙ্ক কষে দেখেছেন মেসি চলে গেলেই ভালো হতো বার্সেলোনার।

এ জার্সি আগামী বছর তাঁকে পরতে দেখা যাবে?
ছবি: রয়টার্স

গত পরশু স্প্যানিশ রেডিও ‘আরএসি’কে তুসকেতস বলেছেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে দেখলে, গত মৌসুম শেষেই আমি মেসিকে বিক্রি করে দিতাম। এর সুবাদে যে অর্থ পাওয়া যেত (দলবদল অঙ্ক) এবং যেটা বেঁচে যেত (মেসির বেতন), বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই কাম্য।’ তুসকেতস এটাও বলেছেন যে বার্সেলোনার আর্থিক পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গেছে যে জানুয়ারি মাসের বেতনও দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই খেলোয়াড়দের পরে বেতন ও বোনাস নিতে বলা হয়েছে। বার্সেলোনার অবস্থা কতটা করুণ, সেটা বোঝাতে আরও একটা কথা বলেছেন তুসকেতস। ন্যু ক্যাম্পের ছাদের এক অংশ নাকি খুলে পড়ছে এবং শিগগিরই সেটা মেরামত করা দরকার!

ক্লাবের আর্থিক দিকটা দেখেন তুসকেতস। করোনাভাইরাসের আগেই ক্লাবের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না বার্সেলোনার। আগের সভাপতি ও বোর্ডকে এ নিয়ে সতর্ক করেছেন বলেও জানিয়েছেন তুসকেতস। এ কারণেই মেসিকে জোর করে ক্লাবে রেখে দেওয়াটা আর্থিক দিক থেকে কতটা ভুল, সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন আপৎকালীন সভাপতি। কিন্তু কোমান তো আর মাঠের বাইরের দিক নিয়ে ভাবতে চাইবেন না। তাঁর মাথায় সব চিন্তা মাঠ ঘিরে। আর মাঠে উৎফুল্ল মেসিকেই চাইবেন। নতুন করে মেসির চলে যাওয়াই ভালো ছিল, এমন কথাবার্তার আবির্ভাব তাই ভালোভাবে নিচ্ছেন না কোমান।

আজ কাদিজের মাঠে খেলতে নামবে বার্সেলোনা। এ ম্যাচের আগে ম্যাচের চেয়েও মেসি ও তুসকেতসের মন্তব্য নিয়ে বেশি কথা বলতে হয়েছে কোমানকে। ডাচ কোচ নিজের ক্ষোভ জানিয়েছেন সরাসরি, ‘আমরা সবাই লিওর অবস্থা জানি। কেউ যদি নিজের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে পারে, সেটা লিও নিজে। ক্লাবের বাইরে থাকা মন্তব্যে আমার কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু যখন মনের শান্তি দরকার, তখন ক্লাবের ভেতরের মন্তব্য আমাদের অসুবিধায় ফেলছে। ক্লাবের বাইরের কথাবার্তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না কিন্তু ভেতরের কথাবার্তার বিষয়টা তো ভিন্ন।’

মেসিকে ঘিরে আলোচনা থামছেই না এ মৌসুমে।
ছবি: রয়টার্স

ক্লাবের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এভাবে বাইরে বলে বসাটা যে ভুল হয়েছে, সেটা বুঝতে পেরেছেন তুসকেতসও। কারণ, কোনো খেলোয়াড় বিক্রি না করে কাউকে কেনা যাবে না, এটা জানিয়ে দিয়ে দলবদলের বাজারে বার্সেলোনার হাত দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। তুসকেতসের দাবি দলে কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর, শুধু আর্থিক বিষয়টিই তুলে ধরতে চেয়েছেন। কাতালুনিয়া রেডিওতে বলেছেন, ‘আমি বলিনি যে আমি হলে মেসিকে বিক্রি করতাম। আমি বলেছি, আর্থিক দিক থেকে তাঁর চলে যাওয়া ক্লাবের জন্য ভালো হতো। আমাদের জন্য ভালো হতো, কারণ, বিশ্বে তাঁর বেতন সবচেয়ে বেশি। এর চেয়ে বড় সত্য তো আর নেই। কিন্তু আমি কেউ না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন, ম্যানেজিং বোর্ড এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’

কোমানের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি তুসকেতস। তবে এখনো মেসির ক্লাব ছাড়া ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন না, ‘দরকার হলে আমি কোমানকে বলব, সে আমার কথা ভুল বুঝেছে। আমি শুধু অঙ্কের কথা বলেছি। মেসির জন্য যে খরচ (বেতন ও বোনাস) হয়, সেটা তুলে আনেন। কিন্তু বার্সেলোনা তো শুধু একজনের ওপর নির্ভরশীল নয়।’