মেসি, তোমার লজ্জা থাকা উচিত!

লেভানডফস্কির কাছে ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কারের দৌড়ে হেরে গেছেন মেসিফাইল ছবি: এএফপি

ফিফা ও ব্যালন ডি’অর আলাদা হয়ে যাওয়াতেই যত ঝামেলা হলো। দুটি পুরস্কারই একই খেলোয়াড় না পেলে ঝামেলা দেখা দেয়, আসলে বর্ষসেরা তাহলে কাকে বলবেন!

পুরস্কার দুটির কোনোটির দাবি তো আর অন্যটির চেয়ে কম নয়! ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের ঐতিহ্য যেখানে ৬৫ বছরের, ১৯৯১ থেকে চালু অন্য পুরস্কারটির বয়স তার অর্ধেকের কম হলেও সেটি দেয় বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। ২০২১ সালের পুরস্কারেও এ ঝামেলাই দেখা দিচ্ছে। ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি, ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার ‘দ্য বেস্ট’ জিতেছেন রবার্ট লেভানডফস্কি।

তবে পুরস্কারের পাশাপাশি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে মেসি ও লেভানডফস্কির ভোট। লেভা তাঁর চোখে বছরের সেরা তিন খেলোয়াড়ের তালিকার দুই নম্বরে মেসিকে রেখেছেন, তবে মেসি তাঁর সেরা তিনে লেভানডফস্কিকে রাখেননি। এ নিয়ে প্রশ্নে অবশ্য ব্যাপারটাকে বড় করে দেখতে রাজি হননি লেভা। বায়ার্ন মিউনিখের পোলিশ স্ট্রাইকার শুধু বলছেন, মেসির সঙ্গে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত ঝামেলা নেই! তবে জার্মান সংবাদমাধ্যম খেপেছে।

টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কার জিতেছেন রবার্ট লেভানডফস্কি
ছবি : টুইটার

মেসি অবশ্য ব্যালন ডি’অরের ভোটে লেভানডফস্কিকে সেরা তিনে রেখেছিলেন। কিন্তু ফিফার বর্ষসেরার ভোটে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লেভাকে ভোট দেননি। গত সেপ্টেম্বরেই অবশ্য মেসি এ নিয়ে একবার বলেছিলেন, বর্ষসেরার যেকোনো ভোটাভুটিতে তাঁর ভোট পাওয়ার মতো দুজন তাঁর ক্লাব পিএসজিতেই আছেন—নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কারের ভোটে এ দুজনের পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদে নতুন মৌসুমে দারুণ শুরু করা করিম বেনজেমাকে ভোট দিয়েছেন মেসি।

কিন্তু এখানে বড় হয়ে উঠেছে গত নভেম্বরে ব্যালন ডি’অরের পুরস্কারের সময়ে মেসির কথাগুলো। যদিও সেটির ভুল ব্যাখ্যাই হচ্ছে। মেসি তখন বলেছিলেন, আগের বছর (২০২০) পুরস্কারটা লেভানডফস্কিকে দেওয়া উচিত ছিল। প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক লিগ শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত না হওয়াকে কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ব্যালন ডি’অর দেয়নি ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন।

সেই মেসিই এবার ফিফার বর্ষসেরায় লেভানডফস্কিকে ভোট দেননি। জার্মান সংবাদমাধ্যমের চোখে, এটি আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের চাল। ফিফার বর্ষসেরায় ‘লেভা’ই ছিলেন মেসির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। সেই লেভার পয়েন্ট কম হোক—এই চাওয়া থেকেই মেসি লেভাকে ভোট দেননি, এমনটাই ভাবছে জার্মানরা। দেশটির বিখ্যাত সংবাদপত্র বিল্ড তাই লিখেছে, ‘মেসি, তোমার লজ্জা হওয়া উচিত!’

যদিও ফিফার ভোটের তালিকা দেখাচ্ছে, জার্মানি জাতীয় দলের কোচ হান্সি ফ্লিক ও অধিনায়ক মানুয়েল নয়্যার—কেউই তাঁদের ভোটে সেরা তিনে মেসিকে রাখেননি। প্রসঙ্গত, ফ্লিক গত মৌসুমেও বায়ার্নের কোচ ছিলেন, আর নয়্যার তো বায়ার্নেরই গোলকিপার।

তবে যাঁর ভোট না পাওয়া নিয়ে এত গুঞ্জন, সেই লেভানডফস্কি সেভাবে বিতর্কে জড়াতে চাইলেন না। মেসি ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানে আগের বছরের পুরস্কার লেভার প্রাপ্য বলেও এবার তাঁকে কেন ভোট দেননি, এ নিয়ে লেভার কাছেই জানতে চাওয়া হয়।

তাতে পোলিশ স্ট্রাইকারের উত্তর, ‘মেসির ওই কথাগুলো (ব্যালন ডি’অরের সময়ে) শুনতে খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু এখন ওর ভোটের ক্ষেত্রে পছন্দের ব্যাপারে বলব, এ প্রশ্ন আপনাদের ওকেই করা উচিত। খেলার বাইরে আমি তো এমন কিছু করিনি, যেটার জন্য ও আমার ওপর রাগ করতে পারে।’

ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন মেসি
ছবি: রয়টার্স

মেসির সঙ্গে সবকিছু ঠিকঠাক আছে, এ আশা জানিয়ে লেভা বললেন, ‘আশা করি, সব ঠিকঠাকই আছে। (ভোট) ওর পছন্দের ব্যাপার, সেটাকে আমার সম্মান দেখাতেই হবে। আমি এ নিয়ে নেতিবাচক বা উল্টোপাল্টা কিছু বলব না।’

লেভানডফস্কি নিজের বর্ষসেরা হিসেবে বেছে নিয়েছেন চেলসির ইতালিয়ান মিডফিল্ডার জর্জিনিওকে। দুইয়ে রেখেছেন মেসিকে, তিনে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

নিজের ভোটের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন লেভা, ‘সব সময় আক্রমণভাগের খেলোয়াড়ের দিকেই নজর যায় আমার, কিন্তু এবার জর্জিনিও যা জিতেছে (চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইতালির হয়ে ইউরো), সেটা অনন্য অর্জন। আর মেসি ও রোনালদোকে নিয়ে নতুন কী বলব! রোনালদো যেখানেই খেলে, নিজের সেরাটা দেখিয়ে দেয়। ওকে তিন নম্বরে রাখার এটাই ব্যাখ্যা আমার।’