মেসি বার্সা ছাড়বেন? তাঁর ভাই শতভাগ নিশ্চিত নন

কিশোর লিওনেল মেসির সঙ্গে ম্যাক্সিমিলিয়ানো বিয়ানকুচ্চি। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে এ ছবিটি পোস্ট করেছেন ম্যাক্সিমিলিয়ানোছবি: টুইটার

ম্যাক্সিমিলিয়ানো বিয়ানকুচ্চি নিজেও ফুটবলার। তবে ফুটবলার পরিচয়ের চেয়ে আর্জেন্টিনায় তাঁকে ‘এল প্রিমো দে মেসি’ নামেই বেশি চেনে সবাই। অর্থাৎ মেসির কাজিন বা ভাই। বার্সেলোনা তারকা ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যাক্সিমিলিয়ানো। বলেছিলেন, সেখানে নিজেকে সুখী মনে করছে না বলেই বার্সা ছাড়বে। তবে পরিস্থিতি এর মধ্যে অনেক ঘোলাটে হয়েছে। আর ম্যাক্সিমিলিয়ানোও মনে করছেন বার্সার সঙ্গে মেসির সম্পর্ক এখনো চুকে যায়নি।

এদিকে মেসির পরিবারের পক্ষ থেকে একদম নেতিবাচক ইঙ্গিতও পাচ্ছে না বার্সা। অন্তত মেসির চেয়ে বয়সে দুই বছরের বড় ম্যাক্সিমিলিয়ানোর কথা শুনলে তেমনই মনে হবে। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘তুত্তোস্পোর্টস’ যোগাযোগ করেছিল প্যারাগুয়ের দ্বিতীয় বিভাগের দল রুবিও নু-র এ উইঙ্গারের সঙ্গে। মেসি বার্সা ছাড়ছেন কি না সে সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছিল ম্যাক্সিমিলিয়ানোর কাছে। মেসির বাবা যখন তাঁর ছেলেকে কাতালান ক্লাবটি ছাড়াতে মরিয়া তখন তাঁদেরই পারিবারিক সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ানো বিস্ময় ছড়ালেন। কাতালান ক্লাবটির সঙ্গে মেসির সম্পর্ক এখনই চুকে গেছে বলে মনে করছেন না ৩৫ বছর বয়সী এ ফুটবলার।

মেসির বার্সা ছাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে ম্যাক্সিমিলিয়ানো বলেছেন, ‘আমি মনে করি মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার সম্ভাবনা এখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সে যে ক্লাবটি ছাড়বে তা শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’ তবে মেসি বিশ্বসেরা বলেই যে কোনো ক্লাব তাঁকে কিনতে মরিয়া হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি, ‘সে সবার সেরা। যে কোনো লিগ তাকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখবে। ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজি কিংবা ইতালির অন্যতম বড় (জুভেন্টাস) ক্লাবের আগ্রহে তাই অবাক হইনি।’

আট দিন আগে বুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত বার্সাকে জানান মেসি। এরপর আর্জেন্টিনার রেডিও স্টেশন ‘রেডিও কন্টিনেন্টাল’কে ম্যাক্সিমিলিয়ানো বলেছিলেন, ‘ভেবেছিলাম সে কখনো বার্সা ছাড়বে না। কিন্তু লিও কে এমন জায়গা বের করতে হবে যেখানে সে সুখী হবে। চলে যেতে চাওয়ার অর্থ হলো সে সুখী নয়।’ এদিকে মেসি ক্লাব ছাড়ার দাবিতে অনড়। বার্সার অনুশীলন ও পিসিআর টেস্ট এড়িয়ে গেছেন আর্জেন্টাইন তারকা। এর আগে বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ-এ মেসি জানিয়েছিলেন, নিজেকে তিনি এখন কাতালান ক্লাবটির বাইরের মানুষ বলেই মনে করেন।

মেসির বাবার সঙ্গে বার্সা প্রশাসনের বৈঠকেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। ক্যাম্প ন্যু তে দেড় ঘণ্টার বেশি সময়ব্যাপী এ বৈঠকে সংশয়েই থেকে গেছে বার্সায় মেসির ভবিষ্যৎ। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, এই অচলাবস্থা নিরসনে পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে মেসি বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্ত বুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে ক্লাবকে জানানোর পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলা। এদিকে অনুশীলন ও পিসিআর টেস্টে উপস্থিত না হওয়ায় তাঁকে জরিমানা করার হুমকি দিতে পারে বার্সা শিবির। এর চেয়েও চরম কিছু হতে পারে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া, অর্থাৎ দুই পক্ষই যেতে পারে আদালতে। তবে মার্কার মতে, দুই পক্ষের আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

বার্সার চুক্তিতে শর্ত ছিল প্রতি মৌসুম শেষে চাইলে ক্লাব ছাড়তে পারবেন মেসি। তবে এ ইচ্ছাটা জানাতে হবে মৌসুম শেষ হওয়ার ২০ দিন আগে। তা না করলে নতুন মৌসুমের জন্য কাতালান ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন তিনি। আর্জেন্টাইন তারকা নতুন মৌসুমের আগে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে দাবি করেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যেহেতু এই মৌসুমটা স্বাভাবিক সময়ে শেষ হয়নি, আরও পিছিয়েছে, আর এই পেছানো সময় ধরেই বার্সার শর্তের মধ্যে থেকে সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন তিনি। কিন্তু বার্সার কাছে মেসির এই দাবি ভিত্তিহীন।

বার্সার দাবি, মেসির ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছে কথা জানানোর শেষ সময় ছিল ১০ জুন, সেটা ১০ জুনই থাকবে। করোনার কারণে মৌসুম আগস্ট পর্যন্ত পেছালেও মেসির চুক্তির শর্তের সে মেয়াদ তো পেছানো হয়নি। ফলে মেসি এখনো বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এবং তাঁকে নিতে চাইলে অন্য ক্লাবকে অর্থ খরচ করেই নিতে হবে। আর বার্সেলোনার অনিচ্ছায় নিতে চাইলে সে অঙ্কটা হতে হবে ৭০ কোটি ইউরো।