মেসি মাদাগাস্কারে গেলেও এরকমই খেলবে
লিওনেল মেসি বার্সেলোনায় যতটা স্বচ্ছন্দে খেলতে পারছেন, পিএসজিতে সেভাবে পারছেন না। বার্সেলোনা ছেড়ে মেসির পিএসজিতে যাওয়ার প্রায় পাঁচ হয়ে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত এটি সত্যি বলে মেনে নেবেন প্রায় সবাই-ই।
কেন পারছেন না আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড? সে ব্যাখ্যায় তাঁর ২১ বছরের ‘ঘর’ বার্সা ছাড়া, ৩৪ বছর বয়সে এসে ক্লাব-শহর বদলে পিএসজিতে যাওয়ার কথা আসবে। এত বছর পর এই বয়সে এসে নতুন ক্লাবে মানিয়ে নেওয়া কঠিনই! তারওপর চোট আর আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচও মেসিকে স্বস্তিতে খেলতে দেয়নি পিএসজিতে।
সব মিলিয়েই মেসি এখনো পিএসজিতে ‘বার্সেলোনার মেসি’ হয়ে দেখা দিতে পারেননি। এখন পর্যন্ত ১৬ ম্যাচে গোল করেছেন ৬টি, করিয়েছেন আরও ৫টি।
তবে পিএসজিরই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আন্দের এরেরা তা মানতে রাজি নন। তাঁর চোখে, মেসি যেভাবে খেলছেন, সেটি ঠিকই আছে। শুধু বার্সেলোনা বা পিএসজি কেন, মেসি যেখানেই যাবেন সেখানেই এভাবেই খেলতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে এরেরার।
তবে মেসি থাকার কারণেই পিএসজি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে যাবে, এমন ভাবনাকেও নিরুৎসাহিত করছেন তিনি।
স্প্যানিশ সংবাদপত্র মুন্দো দেপোর্তিভোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে পিএসজিতে মেসির মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল এরেরাকে। তাতে স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের উত্তর, ‘মেসির মানের খেলোয়াড়দের মানিয়ে নিতে সময় কম লাগে। ফ্রান্সে হোক, স্পেনে হোক বা জাপান কিংবা মাদাগাস্কারেই হোক, ও এরকমই খেলতে পারবে।’
অনুশীলনে প্রতিদিন মেসিকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে এরেরা বলছেন, ‘মাত্রই ও সপ্তম ব্যালন ডি’অর জিতল। কিন্তু এখনো ও যেভাবে অনুশীলন করে, সেটা উপভোগও করে, দেখে মনে হয় ওর ক্যারিয়ার মাত্রই শুরু হয়েছে! অনুশীলনে কোনো কাজই হালকাভাবে নেয় না।’
অনুশীলন ছেড়ে যখন মাঠের প্রশ্ন আসে, সেদিক থেকে পিএসজিতে মেসি একেবারে আহামরি কিছু করে ফেলেছেন, এমন দাবি এরেরা করছেন না। তবে মেসির সেরা ছন্দ ফেরাতে তাঁর পিএসজি সতীর্থদের দায়িত্বও মনে করিয়ে দিয়েছেন এরেরা, ‘এরই মধ্যে কিন্তু মাঝে মাঝে লিওর সেরা ফর্ম আমরা দেখেছি, যেমন ধরুন (ম্যানচেস্টার) সিটির বিপক্ষে ঘরের মাঠের ম্যাচটিতে। তবে আমার মনে হয়, ওকে ভালোভাবে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বটা ওর আশপাশে থাকা সবারও। ওর সেরাটা বের করে আনতে হলে আমাদের ওর চাওয়া বুঝতে হবে।’
এখানে ক্লাবে নতুন আসা কোনো সাধারণ খেলোয়াড়ের সঙ্গে মেসির পার্থক্যটাও বুঝিয়ে দিলেন এরেরা, ‘সাধারণত নতুন পরিস্থিতিতে খেলোয়াড় নিজেই মানিয়ে নেয়। কিন্তু এখানে ব্যাপারটা অনেক আলাদা। আমরা এখানে সর্বকালের সেরা ফুটবলারকে নিয়ে কথা বলছি!’
পিএসজিতে কিলিয়ান এমবাপ্পের কারণে মেসি আড়ালে পড়ে যাচ্ছেন কি না, এ নিয়ে প্রশ্নও হলো এরেরাকে। তাতে পিএসজির স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের উত্তর, ‘সামনে অনেক বছর পর্যন্ত বিশ্বের সেরা ফুটবলার হয়ে থাকবে কিলিয়ানই। তবে আমরা সবাই জানি এখন লিও-ই নাম্বার ওয়ান। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। লিওর কাছ থেকে শেখার মতো বিনয় আর ইচ্ছাও কিলিয়ানের ভালোভাবেই আছে।’
সাক্ষাৎকারে মেসির পাশাপাশি পিএসজির ড্রেসিংরুমের বড় অন্য তিন মহাতারকা—নেইমার, এমবাপ্পে আর রামোসকে নিয়েও প্রশ্ন হয়েছে এরেরাকে। কথা হয়েছে পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগের সম্ভাবনা নিয়েও।
এমবাপ্পেকে নিয়ে প্রশ্ন ছিল পিএসজিতে তাঁর চুক্তি নবায়নের ব্যাপারে। পিএসজিতে ফরাসি স্ট্রাইকারের চুক্তির আর ছয় মাস বাকি, চুক্তি শেষে তাঁর রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার গুঞ্জন ইউরোপে বিকোচ্ছে চড়া দরে। তবে এরেরা আশাবাদী, ‘এমবাপ্পের চুক্তি নবায়নের তো এখনো আরও সময় হাতে আছে। অনেক ফুটবলারই (চুক্তির শেষ মৌসুমে) ফেব্রুয়ারি, মার্চ এমনকি এপ্রিলে চুক্তি করার উদাহরণও আমরা দেখেছি। এখনো সময় আছে।’
কদিন আগে এমবাপ্পের ২৩তম জন্মদিনে পিএসজির সতীর্থরা তাঁকে পিএসজির একটা জার্সি উপহার দেন, যেখানে লেখা ছিল ‘এমবাপ্পে ২০৫০।’ সাধারণত চুক্তি নবায়নের সময় এমন জার্সি পরে ছবি তোলেন খেলোয়াড়েরা।
সেটি নিয়ে প্রশ্নে এরেরা বললেন, ‘ও অনেক খোলা মনের, বন্ধুভাবাপন্ন, মজার একজন মানুষ। জীবনের মজার দিকটা ও বোঝে, আমাদের মধ্যে এরকম স্বাস্থ্যকর কৌতুকগুলোর কারণেই আমরা একটা দল হয়ে উঠতে পেরেছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা একে অন্যকে কখনো চাপ দিই না। মিথ্যা বলছি না, ড্রেসিংরুমে আমরা কেউই কারও চুক্তিগত ব্যাপার নিয়ে কথা বলি না।’
নেইমারকে নিয়ে প্রশ্নগুলো ছিল মূলত নেইমারকে ঘিরে চলতে থাকা সমালোচনা নিয়ে। অমিত প্রতিভাধর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড যে এই ২৯ বছর বয়সে এসেও মেসি-রোনালদোর সারিতে যেতে পারেননি, সেটির পেছনে ফুটবলের চেয়েও অন্য অনেক কিছুতে নেইমারের মনোযোগ বেশি থাকার কথা বলেন অনেকে। নৈশক্লাব, পার্টির কথা তো সব সময়ই আসে নেইমারের সমালোচনায়!
তবে এরেরার চোখে, ‘নেই-কে নিয়ে কে কী বলল তাতে কিছু যায়-আসে না। আমি ওকে খুব ভালোভাবে চিনি, ও আমার বন্ধু। ওর মনটা অনেক বড়। ফুটবলার হিসেবে ও কেমন সেটা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না—ও এক কথায় অসাধারণ! ওকে না চেনা এমন কোটি মানুষ ওকে নিয়ে কী বলল তাতে ওর ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা তো বদলে যাবে না। আমার এখানে আমার বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যরা যাঁরা এসেছেন, ওকে দেখেছেন, তাঁরাও মানেন সেটি (নেইমারের ভালো দিকগুলোর কথা)।’
এই মৌসুমেই রিয়াল মাদ্রিদ থেকে পিএসজিতে যাওয়ার পর থেকে চোটের সঙ্গে যুঝতে থাকা রামোসের ক্ষেত্রে এরেরার বিশ্বাস, স্প্যানিশ ডিফেন্ডার দ্রুতই সেরা ছন্দে ফিরবেন। তবে এরপর প্রশ্ন যখন হলো মেসি-রামোসদের নিয়ে পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে, এরেরার সেখানে দ্বিমত আছে।
‘আমরা খুব করেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাই এবং সেজন্য আমরা সবটুকু দিয়ে ঝাঁপাব। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তবে আমাদের দলে মেসি আছে বলেই আমরা অন্য যে কারও চেয়ে শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে গেছি, ব্যাপারটা এমন নয়। বুঝতে পারি মানুষ আমাদের কাছ থেকে সব সময় সেরাটাই চায়। কিন্তু ইউরোপে এমন আরও আট-দশটি দল আছে যাদের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা আমাদের সমানই’—এরেরার বিশ্লেষণ খুব একটা ভুলও নয়।