মেসি-রামোসকে নিয়ে দল গড়ার স্বপ্ন নেইমারের পিএসজির

এ দুজনকে এক করে দেবে পিএওসজি?ফাইল ছবি: এএফপি

এ সুবাদে যদি বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকেরা একই পতাকাতলে হাজির হন!
গত পরশুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সের্হিও রামোসের পিএসজি-যাত্রা নিয়ে। এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কিন্তু আস্থা রাখা যায়—এমন সব সাংবাদিকের দাবি, এরই মধ্যে পিএসজিকে পাকা কথা দিয়ে ফেলেছেন রামোস।

এখন শুধু শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে ব্যাপারটার আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া বাকি। এর মধ্যেই আবার স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএস বোমা ফাটিয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক অধিনায়ককে নিয়েও নাকি সন্তুষ্ট হচ্ছে না পিএসজি, এবার বার্সেলোনার অধিনায়ককেও পেতে চায় তারা!

বার্সেলোনায় আর দেহা যাবে মেসিকে?
ফাইল ছবি: এএফপি

চাইলে মেসির পাশেও বার্সেলোনার ‘সাবেক অধিনায়ক’ শব্দ ব্যবহার করা যায়। কারণ, গত ৩০ জুন বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে গেছে মেসির। এখন আক্ষরিক অর্থেই মুক্ত মেসি। চাইলেই যেকোনো দলে যোগ দিতে পারবেন, কথা বলতে পারবেন বেতন-ভাতা ও চুক্তির অন্য সব খুঁটিনাটি নিয়ে। অবশ্য যেকোনো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করা নিয়ে কথা বলার স্বাধীনতা জানুয়ারিতেই পেয়েছেন তিনি। চুক্তির আর মাত্র ৬ মাস বাকি থাকা অবস্থায় এটা করতে কোনো বাধা থাকে না ফুটবলারের।

এ কাজ রামোসের সঙ্গে করেছে পিএসজি। জানুয়ারিতে এ ব্যাপারে আগ্রহ না দেখালেও এপ্রিলের দিকে যখন রিয়াল মাদ্রিদের চিন্তাধারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, তখন থেকেই নাকি পিএসজির প্রস্তাব ভেবে দেখতে শুরু করেছিলেন। ওদিকে গত মৌসুমেই দল ছাড়তে চাওয়া মেসি অপেক্ষা করছিলেন মৌসুম শেষ হওয়ার। এর মধ্যে ক্লাবের পরিস্থিতি বদলে গেলে যে থেকে যাবেন, এ ইঙ্গিত দিয়েছেন জানুয়ারির আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।

বার্সেলোনায় যখন একসঙ্গে খেলতেন মেসি ও নেইমার।
ফাইল ছবি

মাঝে বার্সেলোনায় অনেক রদবদল এসেছে। পছন্দের হোয়ান লাপোর্তা সভাপতি হিসেবে ফিরেছেন। মেসিও মনখুলে খেলেছেন মৌসুমের শেষ দিকে। বার্সেলোনাকে কোপা দেল রে এনে দিয়েছেন। কিন্তু চুক্তি আর নবায়ন করা হয়নি। আর্থিকভাবে দেউলিয়া হতে বসা বার্সেলোনা সে সম্ভাবনা কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু ক্লাবের আয় কমে যাওয়ায় খেলোয়াড়দের বেতন কমাতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এ অবস্থায় মেসির জন্য বার্ষিক ১০ কোটি ইউরোর বেশি খরচ করার জন্য নতুন আয়ের উৎস খুঁজতে ব্যস্ত ক্লাবটি। আর এর মধ্যেই বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার অধিনায়কের।

বর্তমানে কোপা আমেরিকা খেলতে ব্রাজিলে আছেন মেসি। দেশের হয়ে খেলার সময়ে বার্সেলোনা তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। মেসিকে যেকোনোভাবেই হোক ধরে রাখতে চাইছে তারা। কাজটা বেশ কঠিন। এরই মধ্যে জানা গেছে, মেসিকে ধরে রাখতে হলে অন্তত ২০ কোটি ইউরো জোগাড় করতে হবে বার্সেলোনাকে। মেসির মতো তারকার জন্যও লিগের আর্থিক সংগতিনীতিতে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস।

এ সুযোগই নিয়েছে পিএসজি। নেইমারের বেতন বাবদ জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ হচ্ছে পিএসজির। প্রায় একই পরিমাণ বেতন দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে রেখেছে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। বেশ উচ্চ বেতন ও চুক্তি সাক্ষরের জন্য বোনাসের কথা বলে দলে টানা হয়েছে মিডফিল্ডার জর্জিনিও ভাইনালডাম ও গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মাকে। এদিকে ইন্টার মিলানকে ৭ কোটি ইউরোর বেশি দিয়ে আনা হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমিকে।

পচেত্তিনো মেসির কোচ হওয়ার স্বপ্নের কথা অনেকবারই শুনিয়েছেন।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রক্ষণে রিয়াল দুই সাবেক সতীর্থকে জুড়ে দিয়ে এবার আক্রমণে বার্সেলোনার স্বাদ আনতে চাইছে পিএসজি। আর্থিক সংগতির নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেওয়া এক ঘটনাই ঘটাচ্ছে। ৩৪ বছর বয়সী মেসির জন্য বেতন বাবদ ১০ কোটি ইউরোর বেশি খরচের জন্য তারা যে এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সেটা মেসি-সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছে।

এমনিতেই গত মৌসুমের মাঝপথে মেসিকে পিএসজিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন নেইমার। মেসির জাতীয় দল সতীর্থ আনহেল ডি মারিয়া ও লিয়ান্দ্রো পারেদেস প্রকাশ্যেই বলেছেন মেসির সঙ্গে খেলতে চান। জানুয়ারির পর এ ব্যাপারে কথা বলেছেন ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দোও। মেসির প্রতি আগ্রহ লুকানোর কোনো চেষ্টা করেননি তিনি, ‘মেসির মতো সেরা খেলোয়াড়েরা সব সময় পিএসজির তালিকায় থাকবেন।’ ক্লাবের কোচ হিসেবে যোগ দিয়েই মেসির প্রতি মুগ্ধতা জানিয়ে দলবদলের গুঞ্জন উসকে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন মরিসিও পচেত্তিনো।

কিন্তু এরপর মেসি বার্সেলোনাতে থেকে যাওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়ায় পিএসজি একটু পিছু হটেছিল। এরই মধ্যে নেইমার রামোসকে পিএসজিতে ডেকে পাঠিয়েছেন। তাঁকে নাকি বলেছেন, রামোস এলেই তিনি ও এমবাপ্পে চুক্তি নবায়ন করবেন। আর রামোসকে পেলেই নাকি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবে পিএসজি। এরই মধ্যে রামোসকে পেয়ে গেছে প্যারিসের ক্লাব। এবার মেসিকেও প্রস্তাব পাঠিয়েছে তারা। গত মৌসুমে মেসিকে পেতে আগ্রহ দেখালেও এবার আর ম্যানচেস্টার সিটির পক্ষ থেকে কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। ফলে, পিএসজিই এগিয়ে আছে। রামোসের পর যদি মেসিকেও নিয়ে নিতে পারে তারা, তাহলে চ্যাম্পিয়নস লিগের সম্ভবত পিএসজির হাতে ধরা না দিয়ে উপায় নেই!