মেসিকে ছাড়া কেমন খেলে বার্সেলোনা?

মেসিকে দিনামো কিয়েভের বিপক্ষে স্কোয়াডে রাখেনি বার্সা।ছবি: রয়টার্স

বয়স হয়ে গেছে ৩৩। ক্যারিয়ার এখন আর সেই মধ্যগগনে নেই। বয়সী মেসিও বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না থাকলেও, দিন শেষে তিনিও তো মানুষ। তাঁরও বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় এক-দুই ম্যাচে দলের বাইরে থেকে নিজেকে ঝালাই করে নেওয়ার। অন্যথায় এই বয়সে চোটে পড়লে তাড়াতাড়ি মাঠে ফেরাও কঠিন। বার্সার বর্তমান কোচ নিজেও ছিলেন দুর্দান্ত একজন খেলোয়াড়, তিনি এসব বেশ ভালোই বোঝেন। তাই চ্যাম্পিয়নস লিগে দিনামো কিয়েভের বিপক্ষে ম্যাচে মেসিকে স্কোয়াডেই রাখেননি, বিশ্রাম দিয়েছেন। কিন্তু মেসিকে ছাড়া বার্সেলোনা কিয়েভ-বাধা পেরোতে পারবে তো?

এর আগে মেসিকে ছাড়া যে ১০টা ম্যাচ খেলেছে বার্সেলোনা, তাতে তাদের সফলতার হার ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ ১০ ম্যাচের ঠিক অর্ধেক, ৫টায় জিতেছে বার্সা। এই বছরের শুরুর দিকে কোপা দেল রে’র তৃতীয় রাউন্ডে ইবিজার বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল বার্সা। প্রথমে পিছিয়ে পড়লেও আতোয়ান গ্রিজমানের জোড়া গোলে বিপদ কাটায় ক্লাবটা। সে ম্যাচে স্কোয়াডেই ছিলেন না মেসি। ২০১৯-২০ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের একদম শেষ ম্যাচেও ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ছিলেন না মেসি, দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত দেখে কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে স্কোয়াডেই রাখেননি এই আর্জেন্টাইন তারকাকে। কার্লেস পেরেজ ও আনসু ফাতির নৈপুণ্যে সে ম্যাচে জিততে সমস্যা হয়নি বার্সার।

মেসিকে ছাড়া গ্রিজমান দলকে টানতে পারবেন তো?
ছবি : রয়টার্স

এর আগে চোটে পড়ে হেতাফের বিপক্ষে লিগ ম্যাচ খেলেননি মেসি। সে ম্যাচেও হেসেখেলেই জিতেছিল বার্সেলোনা, গোল করেছিলেন লুইস সুয়ারেজ আর লেফটব্যাক জুনিয়র ফিরপো। পায়ের চোটে পড়ে তার আগে চারটি ম্যাচ খেলা হয়নি মেসির। চার ম্যাচের একটায় ওসাসুনার সঙ্গে ড্র করে বার্সেলোনা, আনসু ফাতি আর জর্দি আলবার গোল যথেষ্ট ছিল না জেতার জন্য। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে অবশ্য বেশ দাপট দেখিয়েই জিতেছিল বার্সেলোনা। সুয়ারেজের জোড়া গোলের পাশাপাশি একটি করে গোল করেছিলেন জেরার্ড পিকে, ফাতি ও ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং। বেতিসের বিপক্ষে ম্যাচের স্কোরলাইনও ছিল একই। সে ম্যাচে জোড়া গোল ছিল গ্রিজমানের, একটি করে গোল করেছিলেন পেরেজ, আলবা ও আর্তুরো ভিদাল। তবে অ্যাথলেটিক বিলবাও ঠিকই হারিয়েছিল বার্সাকে ১-০ গোলে।

২০১৮-১৯ মৌসুমের শেষ যে তিন ম্যাচে মেসি স্কোয়াডে ছিলেন না, দল হেরেছিল দুটিতেই, ড্র একটিতে। সেলতা ভিগো, সেভিয়া আর উয়েস্কার বিপক্ষে সেই তিন ম্যাচে জয় তো দূর, গোলই করতে পারেনি বার্সেলোনা।

মেসি ছাড়া বার্সেলোনার জয়ের হার ৫০ শতাংশ।
ছবি: রয়টার্স

মৌসুমে এখন পর্যন্ত বার্সেলোনার হয়ে ১১টি ও আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৪টি ম্যাচ খেলেছেন মেসি। এর মধ্যে গত এক মাসে ধকলটা একটু বেশিই গেছে তাঁর ওপর। এই বার্সার জার্সিতে খেলছেন, তো দক্ষিণ আমেরিকায় উড়ে গিয়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে পুরো ৯০ মিনিট খেলছেন। এর মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে তিন হাজার মিটার উচ্চতার বলিভিয়ার মাঠে আর্জেন্টিনার হয়ে ৯০ মিনিট খেলার তিন দিন পরই আবার বার্সার জার্সিতে হেতাফের মাঠে পুরো ৯০ মিনিট খেলেছিলেন। সে সময় মেসিকে পুরো ম্যাচ খেলানোয় কোমানের বেশ সমালোচনা হয়েছিল। এবার মেসিকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোমান তাই হচ্ছেন আরও সতর্ক। আর্জেন্টাইন তারকাকে দলে না রাখাটা অন্তত সেই বার্তাই দেয়।

এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলেছে বার্সেলোনা, তিনটিতেই জিতেছে। গোল করেছে ৯টি, খেয়েছে ২টি। ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে বার্সা, ৬ পয়েন্ট নিয়ে ২ নম্বরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাস। ৩-এ থাকা দিনামো কিয়েভ ও ৪-এ থাকা ফেরেনৎসভারোসের পয়েন্ট ১, গোল ব্যবধানে এগিয়ে ৩-এ কিয়েভ। কাল জিতলেই শেষ ১৬-তে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যাবে বার্সেলোনার। প্রতিপক্ষ যখন কিয়েভ, এমন ম্যাচে মেসিকে বিশ্রাম তো দিতেই পারেন বার্সা কোচ!