মেসিকে ছাড়া জয়ের হ্যাটট্রিক বার্সেলোনার

বার্সার প্রথম গোলটি করেন ডি ইয়ং।ছবি: রয়টার্স

তিনটি ভিন্ন টুর্নামেন্ট। স্প্যানিশ সুপার কাপ, কোপা দেল রে এবং লা লিগা। দুই সপ্তাহের মধ্যে ভিন্ন তিন টুর্নামেন্টে মেসিকে ছাড়া খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে গেল বার্সেলোনার। কোচ রোনাল্ড কোমানের জন্য স্বস্তির খবর, তিন ম্যাচেই জয় পেয়ে মেসিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার বার্তা দিয়েছে তাঁর দল।

ঘরোয়া ফুটবলে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া মেসিকে ছাড়াই আজ লা লিগায় খেলতে নেমেছিল বার্সেলোনা। এলচের বিপক্ষে আজ ২-০ ব্যবধানে জয় পেয়েছে কাতালানরা। দুই মিডফিল্ডার ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং ও রিকি পুচের গোলে এলচেকে হারিয়ে লিগে দুইয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান আবার ৩-এ নামিয়ে এনেছে বার্সা। ১৯ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট বার্সার, রিয়ালের পয়েন্ট ১৯ ম্যাচে ৪০। মেসিনির্ভরতা কমিয়ে আনার কথাটা তাই চাইলেই বলতে পারেন কোমান।    

স্কোর দেখলে সেটাই মনে হতে পারে। মেসিকে ছাড়া নেমে টানা তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে দল। কিন্তু মাঠের চিত্র বলবে ভিন্ন কথা।

সুপার কাপের সেমিফাইনালে মেসিকে ছাড়া নেমে জয় পেলেও সেটা এসেছে পেনাল্টি শুটআউটে। এবং গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে-টের স্টেগেন সেদিন ফর্মের চূড়ান্তে না থাকলে ফলটা অন্য কিছু হতে পারত।

সুপার কাপের ফাইনালে মেসি লাল কার্ড দেখায় এই সপ্তাহে কোপা দেল রে-র ম্যাচে নামা হয়নি তাঁর। তৃতীয় বিভাগের দল কর্নেয়ার বিপক্ষে সে ম্যাচেও জয় পেতে অতিরিক্ত সময়ে মাঠে নামতে হয়েছিল বার্সেলোনাকে। আজও এলচের মাঠে জয় নিশ্চিত করতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে কোমানের শিষ্যদের। ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ন্যূনতম ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় পয়েন্ট খোয়ানোর ভয় ছিল দলটির।

বার্সার দ্বিতীয় গোলটি করেন পুচ।
ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট ছিল বার্সেলোনার। কিন্তু ওসমান দেম্বেলে, আঁতোয়ান গ্রিজমান ও মার্টিন ব্রাথওয়েটদের যেন কোচের দুশ্চিন্তা বাড়াতেই ভালো লাগছিল। একের পর এক সুযোগ এসেছে, আর আক্রমণের এই ত্রয়ী সেসব সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন। সুযোগ নষ্টের এ খেলায় বুসকেতস, আরাউহোরাও যোগ দিয়েছিলেন। বার্সার গোল পেতে তাই ৩৯ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো।

বাঁ প্রান্ত থেকে ব্রাথওয়েটের ক্রস দুই এলচে ডিফেন্ডারের মাঝেই খুঁজে নিয়েছিলেন গ্রিজমান। গোলরক্ষক ও দুই ডিফেন্ডারের মাঝেই আলতো ছোঁয়ায় বলটা জালের দিকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। বলটা নিশ্চিতভাবেই গোল হচ্ছিল, গোললাইন পার হওয়ার আগে তাতে পা লাগিয়ে শুধু গোলদাতার নামটা বদলে দিয়েছেন ডি ইয়ং। পরের মিনিটে গোল শোধের সুযোগ পেয়েছিলেন এলচের জোসান। কিন্তু টের স্টেগেনের গায়ের দিকে মারা সে শট কোনো ভয় জাগায়নি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে খেলায় প্রাণ ফিরেছে। প্রথমার্ধে বার্সার দাপট সহ্য করা এলচে আক্রমণে মন দিয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। ৫৫ মিনিটে বার্সা গোলরক্ষকে একা পেয়েও গিয়েছিলেন এমিলিয়ানো রিগোনি। কিন্তু টের স্টেগেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্নায়ুর লড়াইয়ে হার মানেননি। রিগোনির শটা পা দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন। প্রতি আক্রমণে ওঠা বার্সা ব্যবধান বাড়িয়ে ফেলার সুযোগ পেয়েছিল। দেম্বেলের দারুণ শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন এলচে গোলরক্ষক বাদিয়া।

বার্সেলোনা এরপর আক্রমণের ধার বাড়িয়েছে আরও। কিন্তু কখনো স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতা কখনো বাদিয়ার দুর্দান্ত সব সেভ তাদের হতাশ করেছে। ৮৫ মিনিটে প্রায় ফাঁকায় দাঁড়ানো গ্রিজমান হেড নিয়েছিলেন। কিন্তু আবারও দারুণ এক সেভে এলচের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বাদিয়া।

৮৯ মিনিটে বাদিয়া আর পারেননি বার্সেলোনার আক্রমণ ঠেকাতে। ক্লান্ত এলচের রক্ষণকে দর্শক বানিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন ডি ইয়ং। বাঁ পোস্টের কাছে ভিড় করা এলচে রক্ষণকে বোকা বানিয়ে ডি ইয়ং ক্রস করেন দূরের পোস্টে। মাত্রই মাঠে নামা রিকে পুচের হেড আটকানোর জন্য লাফানোর কথা মাথায় আসেনি কারও।