মেসিকে ছাড়া ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলতে হবে না আর্জেন্টিনাকে

৩০ মার্চ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল।ফাইল ছবি

দুশ্চিন্তা ছিল ব্রাজিল-কলম্বিয়া ম্যাচ নিয়ে। ব্রাজিলে করোনা পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে দেশটির ফুটবল তারকাদের সুস্থতা নিয়েও সন্দিহান ছিল কলম্বিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ব্রাজিল থেকে যাওয়া কোনো উড়োজাহাজ নিজেদের দেশে অবতরণ করাতে রাজি ছিল না তারা। ফলে ২৬ মার্চের এই ম্যাচ কোথায় হবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছিল। ব্রাজিল ও কলম্বিয়া দলকে সে দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করেছে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (কনমেবল)। মার্চে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সব ম্যাচই স্থগিত করে দিয়েছে কনমেবল।

দক্ষিণ আমেরিকার ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চার রাউন্ডের খেলা হয়েছে। প্রথম চার ম্যাচেই জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে ব্রাজিল। তিন জয় ও এক ড্রয়ে ২ নম্বরে আছে আর্জেন্টিনা। মার্চে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলেরই বেশ কঠিন পরীক্ষা ছিল। দুই ম্যাচের একটিতে একে অন্যের মুখোমুখিও হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল কনমেবল মার্চের দুই রাউন্ডে যে ১০ ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল, সবই স্থগিত করেছে। কারণ, লিওনেল মেসি, নেইমারদের মতো ইউরোপে খেলা দক্ষিণ আমেরিকান তারকাদের পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা। মেসিকে ছাড়া ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলার সম্ভাবনা জেগেছিল আর্জেন্টিনার। সে সম্ভাবনা আপাতত দূর হয়েছে।

ইউরোপে খেলা মেসি-দিবালা-লাওতারোদের ছাড়াই ব্রাজিল-উরুগুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
ফাইল ছবি : রয়টার্স

ইউরোপিয়ান ফুটবলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় শুরু হয়েছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো চলছে। এরপরই ঘরোয়া লিগগুলোর রেসের শেষ পাল্লা শুরু হবে। এ অবস্থায় অনেক দলই তাদের তারকাদের জাতীয় দলের খেলার জন্য ছাড়তে রাজি হচ্ছিল না। এমনিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বসহ ফিফার কোনো টুর্নামেন্টের ম্যাচের জন্য ক্লাবগুলো খেলোয়াড় ছাড়তে বাধ্য। কিন্তু করোনা মহামারি সে বাস্তবতা বদলে দিয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ দেশেই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার লাল তালিকায় বাছাইপর্বে অংশ নেওয়া ১০টি দেশই আছে।

এই ১০ দেশ থেকে কেউ যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করলেই ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন পর্ব কাটাতে হবে। ইউরোপের অন্য লিগগুলোতেও অন্তত সাত দিনের কোয়ারেন্টিন পর্ব। কোয়ারেন্টিন পর্ব কাটিয়ে ছন্দে ফেরার ব্যাপারটাও ঝামেলা সৃষ্টি করছে। মৌসুমের এত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কোন পেশাদার ক্লাব এমন ঝুঁকি নিতে চায়? ওদিকে ইউরোপিয়ান লিগগুলোতেই দক্ষিণ আমেরিকার সেরা তারকারা খেলছেন। তাঁদের ছাড়া অনেক দলের পক্ষেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো দল মাঠে নামানো কঠিন। কনমেবলও বিষয়টা বুঝতে পেরেছে। কাল তাই এক বিবৃতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ‘কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের মার্চের ম্যাচগুলো স্থগিতের ঘোষণা দিচ্ছে কনমেবল। দক্ষিণ আমেরিকার সব খেলোয়াড়কে সময়মতো পাওয়া অসম্ভব বলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

ম্যাচ স্থগিত করে দেওয়ার পরই প্রশ্ন উঠেছে, কবে হবে এই ম্যাচগুলো। আরেকটি টুইটে কনমেবল সে ব্যাপারে আশা দেখিয়েছে, ম্যাচগুলো কবে হবে, সে ব্যাপারটা ফিফা পর্যালোচনা করছে। কনমেবল এবং অন্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে তারা। খুব শিগগির ম্যাচগুলো কীভাবে আয়োজন করা যায়, সেটা ভেবে দেখা হবে।

বাছাইপর্বে শীর্ষে আছে ব্রাজিল।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

কনমেবলের এ টুইটের পরও ম্যাচের নতুন সূচি নিয়ে পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না। চলতি ইউরোপিয়ান মৌসুমে সূচিতে মার্চের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্য আর কোনো ‘ফিফা উইন্ডো’ নেই। একেবারে মৌসুম শেষ হওয়ার পরই খেলোয়াড়দের ছুটি মিলবে। ওদিকে জুনেই ২০২০ কোপা আমেরিকা হওয়ার কথা, গত বছর করোনার কারণে যেটি এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই যদি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ আয়োজন করতে চায় কনমেবল, সেটা মে মাসের শেষ থেকে জুনের শুরুতেই করতে হবে।

কিন্তু সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠবে। এমনিতেই টানা ফুটবল খেলার ধকল সামলাতে না পেরে এ মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চোটে পড়তে দেখা যাচ্ছে ফুটবলারদের। সেখানে ক্লাব মৌসুম শেষ করেই জুনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ ও কোপা আমেরিকা খেলা ‘অমানুষিক’ ধকলই হয়ে যাবে খেলোয়াড়দের জন্য। তার ওপর করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা এক মহাদেশে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোপা আমেরিকা আয়োজন করা হবে কিংবা এর আগে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ১০ ম্যাচ খেলা হবে, সে নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

এমনিতেই খেলোয়াড়দের নিয়ে ক্লাবগুলো কোনো ঝুঁকি যে নিতে রাজি নয়, সেটা এবারই বোঝা গেছে। অন্য দলগুলো সরাসরি না বললেও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের গত দুবারের দুই চ্যাম্পিয়নের আপত্তি জানাতে বাধেনি। লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ ও ম্যানচেস্টার সিটির পেপ গার্দিওলা বারবারই খেলোয়াড় না ছাড়ার ব্যাপারে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছেন। গার্দিওলা বলেই দিয়েছেন কাউকে যেতে দেবেন না, ‘গুরুত্বপূর্ণ সব খেলোয়াড় সম্ভবত ৬, ৭, ৮ বা ৯ দিন, কেউ ১০ দিন খেলতে পারবে না; এটার কোনো মানে হয় না। ওরা যাবে না।’

মার্চে খেলা হলে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের পরিচিত কাউকেই হয়তো দেখা যেত না।
ফাইল ছবি: এএফপি

করোনার কারণে খেলা না হওয়ায় লাতিন ফুটবলপ্রেমী দর্শক অবশ্য হতাশ হবেন। মার্চে যে দুর্দান্ত কিছু ম্যাচ অপেক্ষা করছিল সবার জন্য! ২৬ মার্চ কলম্বিয়ার সঙ্গে ম্যাচ ছিল ব্রাজিলের। অর্থাৎ হামেস রদ্রিগেজ বনাম নেইমার! ওদিকে মেসির আর্জেন্টিনার ম্যাচ ছিল লুইস সুয়ারেজের উরুগুয়ের বিপক্ষে। আর ৩০ মার্চের জন্য অপেক্ষা তো বেশ কয়েক মাস ধরেই। সেদিন যে ব্রাজিলের আতিথ্য নেওয়ার কথা ছিল আর্জেন্টিনার।

একদিক থেকে একটি লাভও হচ্ছে। কোয়ারেন্টিনের কারণে এই ম্যাচে মেসি যাবেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরশু পর্যন্ত আর্জেন্টিনা রাজি ছিল, মেসিসহ ইউরোপিয়ান ফুটবলারদের না পেলে প্রয়োজনে দক্ষিণ আমেরিকায় খেলা ফুটবলারদের নিয়েই ব্রাজিলের বিপক্ষে নামবে। ব্রাজিল অবশ্য শুরু থেকেই মার্চের ম্যাচগুলো পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে এসেছে। মৌসুম শেষে মেসিকে নিয়েই ব্রাজিলের মুখোমুখি হতে পারবে আর্জেন্টিনা।