মেসিকে জোর করে রেখে দেওয়ার কারণ বললেন বার্তোমেউ

অন্তত এ মৌসুমে বার্সেলোনাতেই থাকছেন মেসি।ছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনায় আর খেলবেন না, সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেছিলেন লিওনেল মেসি। আর যদি খেলেনও সেটা, বর্তমান সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ ও তাঁর বোর্ডের অধীনে নয়। এবারের দলবদলের মৌসুমের শুরুটা এমন এক চমক দিয়েই শুরু হয়েছিল। কিন্তু দশদিন ধরে চলা দলবদলের নাটক শেষে বার্সেলোনাতেই থেকে গেছেন আর্জেন্টাইন তারকা, ইচ্ছের বিরুদ্ধেই। মূলত আইনি মারপ্যাঁচের কারণেই। ক্লাব থেকে বিনা মূল্যে বের হতে হলে মামলা করতে হতো। প্রিয় বার্সেলোনার বিপক্ষে সে কাজটা করতে চাননি মেসি।

মেসিকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ক্লাবে রেখে দেওয়ায় অনেক সমালোচনা হয়েছে বার্তোমেউর। এক বিশাল সাক্ষাৎকারে এভাবে থেকে যেতে বাধ্য হওয়ায় ক্লাব সভাপতিকে ধুয়ে দিয়েছিলেন মেসি। সেখানে বার্তোমেউর বিরুদ্ধে কথা দিয়ে কথা না রাখার অভিযোগ তুলেছিলেন। এরপর কেটে গেছে আরও দেড় মাস। বার্তোমেউর মেসির অভিযোগের কোনো জবাব দেননি। অবশেষে মুখ খুলেছেন কাতালান ক্লাবের প্রধান। জানিয়েছেন, বার্সেলোনার কথা ভেবেই মেসিকে ছাড়তে রাজি হননি।

বার্তোমেউ বলেছেন, তিনি জানতেন তাঁর সমালোচনা হবে। বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলে উড়ে যাওয়ার পর ক্লাব-ব্যবস্থাপনার ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন মেসি। দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রকল্প নেই; বোর্ডের অধীনে বার্সেলোনার কোনো ভবিষ্যৎ দেখছেন না—ক্লাব ছাড়াতে চাওয়ার কারণ হিসেবে বলেছিলেন এসবই। মেসির চুক্তিতে একটা শর্ত ছিল, মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছের কথা জানালে এমনিতেই তাঁকে যেতে দেবে ক্লাব। মেসি সেটাই করেছিলেন। কিন্তু চুক্তির শর্ত ছিল ১০ জুনের মধ্যে সেটা জানাতে হবে। এ মৌসুমে করোনার কারণে জুনে লিগ শেষ হয়নি বলে এ কাজ তখন করেননি মেসি। আর সে সুযোগটাই নিয়েছেন বার্তোমেউ।

ক্লাবের সভাপতির পদ ছাড়বেন না বার্তোমেউ।
ছবি: টুইটার

কোনো ক্লাবের পক্ষেই ৭০ কোটি ইউরো (মেসির বাই আউট ক্লজ) দিয়ে খেলোয়াড় কেনা সম্ভব নয়, মেসিও ক্লাব ছাড়তে না পারার বড় সেটিও। গতকাল বার্তোমেউ জানিয়েছেন এত সহজে মেসিকে ছাড়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল মেসিকে নতুন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা। তাই আমি কোনো আলোচনায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে আমি নাকি আর্থিক সামঞ্জস্য আনার জন্য তাঁর বিদায় নিশ্চিত করতে চেয়েছি। কিন্তু সেটা ঠিক না। আমি ক্লাবের প্রয়োজনটাকেই গুরুত্ব দিয়েছি এবং প্রতিপক্ষকে (ম্যানচেস্টার সিটি) শক্তিশালী করতে চাইনি। আমরা জানতাম এ সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের সমালোচনা হবে। তবু সেটা করেছি।’

তাঁর এমন সিদ্ধান্তে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে সেটা জানা ছিল বার্তোমেউর। মেসি কেন ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন সেটাও কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছেন সভাপতি, ‘আমি সবার অবস্থান বুঝতে পারছি, এটা বোঝাটা জরুরি। লিওর ক্ষেত্রে, সে যে রেগেছে সেটা ভালো লক্ষণ। কারণ হার মেনে নেওয়া ঠিক না এবং আমাদের সবার রাগ হয়েছে (ওই হারে)। কিন্তু সে থাকবে কি থাকবে না সেটা জানানোর একটা নির্দিষ্ট দিন ছিল। সে তখন জানায়নি, আর ব্যাপারটি ওখানেই শেষ। আমরা চাই সে বার্সেলোনা থেকেই অবসরে যাক।’

মেসির দিক থেকে ঝড়টা আপাতত থামলেও অন্য এক ঝড় চলছে বার্সায়। ক্লাব সভাপতির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এরপরই অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব দিয়েছে ক্লাব সমর্থকেরা। তিন ধাপ পেরিয়ে এখন গণভোট আয়োজনের পর্যায়ে চলে গেছে সে প্রস্তাব। দেড় লাখ সদস্যের ভোটে যদি দুই-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি বার্তোমেউর বিপক্ষে ভোট দেন তাহলে সভাপতিত্ব হারাবেন তিনি। এ কারণে শোনা গিয়েছিল এভাবে অপমানিত না হয়ে পদত্যাগ করতে পারেন সভাপতি। কিন্তু কাল পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন এমন কোনো ইচ্ছে তাঁর নেই, ‘মেসির ঘটনার কারণে আমার কখনো মনে হয়নি পদত্যাগ করব। বার্সেলোনার জন্য, ক্লাবের জন্য, দলের জন্য, মেসিকে রাখা এবং তাঁর এখানেই অবসর নেওয়া নিশ্চিত করাই ছিল সবার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত। নতুন প্রকল্পটা বেশ দারুণ হবে, তরুণ খেলোয়াড় ও মেসির মতো অভিজ্ঞদের মিশেলে। আর সে যেহেতু আছে, আমরা এ মৌসুমে একটা হলেও শিরোপা জিতব।’

পদত্যাগ যে করতে চান না বার্তোমেউ সেটা অবশ্য গতকালই নিশ্চিত হয়েছে।। গণভোট যেন আয়োজন করা না যায় সেটা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের সাহায্য চেয়েছেন ক্লাব সভাপতি। করোনাভাইরাসকে দোহাই দিয়ে এ সময় অনাস্থা ভোট আয়োজন বন্ধ করতে চান বার্তোমেউ।