মেসিদের দুর্নাম ঘোচাতে গিয়ে চাকরি হারালেন মেয়েটি

বার্সেলোনার অভ্যন্তরীণ তদন্তের সঙ্গে ছিলেন নোয়েলিয়া রোমেরোছবি: টুইটার

‘বার্সাগেট কেলেঙ্কারি’ কী, তা এত দিনে সবারই জানা। জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউকে নিয়ে নতুন যে খবর মিলেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কেলেঙ্কারিটা আবারও স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায়।

বার্তোমেউ বার্সেলোনার সভাপতি থাকতে ক্লাবের সাবেক ও বর্তমান তারকাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্নাম ছড়াতে বাইরের একটা প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছেন। তারকাদের মধ্যে ছিলেন লিওনেল মেসি, পেপ গার্দিওলা, জেরার্ড পিকেসহ অনেকে।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছিল ক্যাম্প ন্যুতে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কাতালান পুলিশ বিভাগ ‘মোসোস দেসকাদ্রা’ মনে করছে, বার্তোমেউ এই তদন্ত থামানোর চেষ্টা করেছিলেন।

সেই তদন্তের সূত্র ধরেই কিছুদিন আগে বার্তোমেউকে গ্রেপ্তার করেছিল কাতালান পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বার্সার অভ্যন্তরীণ এই তদন্তের বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছিল স্প্যানিশ রেডিও কাদেনা সার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আই থ্রি’ নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে ২০১৭ সালে গোপন চুক্তি করেছিল বার্সা। বার্তোমেউ তখন ক্লাবটির সভাপতি। ছয়টি আলাদা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আই থ্রি প্রতিষ্ঠানটি বার্সার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও খেলোয়াড়দের দুর্নাম করত। বলা বাহুল্য, এসব ব্যক্তি ও খেলোয়াড় বার্তোমেউর পক্ষের লোক ছিলেন না। মেসি ও পিকে তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

এ খবর জনসমক্ষে আসার পর বার্সার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নোয়েলিয়া রোমেরোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বার্তোমেউ। রোমেরোকে একটি মেইল পাঠান তিনি। সেখানে এই তদন্তের লক্ষ্য, কারা এটা পরিচালনা করছে—বার্তোমেউ এসব জানতে চাওয়ার পাশাপাশি রোমেরোর ‘নিরপেক্ষ থাকার বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন’ বলেও মনে করছে কাতালান পুলিশ। বার্তোমেউ বার্সার এ কর্মকর্তাকে মেইল পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন, কারণ ফোনে তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি আর বার্সা থেকে ফিরতি ফোনও তিনি পাননি।

বার্সার সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ
ছবি: টুইটার

রোমেরোকে পাঠানো বার্তোমেউর মেইলের তথ্য প্রকাশ করেছে পুলিশ। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কাও প্রকাশ করেছে সেই মেইল, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি নিয়ে যে তদন্ত চলছে, তার কী অবস্থা এবং লক্ষ্য কী, এসব আমাকে জানানোর নির্দেশ দিচ্ছি তোমাকে।’

বার্তোমেউর মেইলের প্রথম অংশ এ কথাগুলো লেখা হয়। রোমেরোকে তিনি মেইলে সরাসরি বলেন, ‘জেনে ভীষণ আশ্চর্য হয়েছি যে তদন্তের স্বার্থে ক্লাবের কয়েকজন কর্মীকে তুমি ডেকেছ, কিন্তু এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কমিটির অন্য সদস্যরাও জানে বলে মনে করি না।’

মেইলে বার্তোমেউ স্পষ্টভাবে বলেন, ‘যে বিষয়ে তদন্ত করতে আমরা সম্মত হয়েছি, তুমি শুধু এটুকু বলো মারিয়া ভালেস (বার্সেলোনা ফাউন্ডেশন সভাপতি) ও র‌্যামন-গোমেজ-পন্তির (আইনি বিষয়ের প্রধান) সঙ্গে কথা না বলে কিছু করবে না। তুমি তো জানো বোর্ডের অনুরোধে এটার তদন্ত করছে প্রাইস ওয়াটারহাউসকুপারস। আমরা এর বাইরে কিছু করায় সম্মত হইনি। এ কারণে কাল তুমি আমাকে জানাও, তদন্তের কী অবস্থা এবং লক্ষ্যই–বা কী। আর তুমি নিজে যদি এসব সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকো, তাহলে কাদের নির্দেশে এসব করছ, সেটাও জানাও।’

বার্সা তারকা লিওনেল মেসি ও জেরার্ড পিকে।
ছবি: টুইটার

গত বছরের ৩১ মার্চে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষ করেন রোমেরো। তার আগপর্যন্ত বার্তোমেউকে তিনি কিছুই জানাননি। কিন্তু বোর্ডের সামনে রোমেরোর তদন্তের নথিপত্র বার্তোমেউ পেশ করতে দেননি। শেষ পর্যন্ত ২ জুন বার্সা পরিচালকদের সব নথিপত্র মেইল করেন রোমেরো। এর কিছুদিন পর কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই রোমেরো সাসপেন্ড হন। ছাঁটাই করা হয় তাঁকে।

পরে বার্তোমেউর সঙ্গে কী হয়েছে, সেটাও সবার জানা এখন। ক্লাবের সভাপতির ওপর বিরক্ত হয়ে ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন ক্লাবের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি। বিধ্বংসী এক সাক্ষাৎকারে বার্তোমেউ-গংয়ের সব গুমর ফাঁস করে দিয়েছিলেন কয়েক মাস আগে। পরে ক্লাব সভাপতির দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হন বার্তোমেউ। আর দুদিন আগে ‘বার্সাগেট’ কেলেঙ্কারির দায়ে তো গ্রেপ্তারই হয়েছেন। যদিও এখন জামিনে মুক্ত আছেন বার্তোমেউ।