মেসিদের বলির পাঁঠা বানাতে গিয়ে বার্তোমেউ নিজেই গ্রেফতার

বার্তোমেউর সঙ্গে দ্বন্দ্বও গত আগস্টে মেসির ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার একটা কারণ ছিল।ছবি: রয়টার্স

অকল্পনীয় ব্যাপারই বটে! একটা ক্লাবের সভাপতি তাঁরই ক্লাবের সাবেক ও বর্তমান তারকাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্নাম ছড়াতে বাইরের একটা প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছেন। এই তারকাদের মধ্যে ছিলেন লিওনেল মেসি, পেপ গার্দিওলা, জেরার্ড পিকেসহ অনেকে। ভাবা যায়!

বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগই উঠেছিল। বার্তোমেউ সে অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু বার্সেলোনার পুলিশ ফোর্স ‘মোসোস দেসকাদ্রা’ সে অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করেছে এত দিন। তদন্তের সূত্র ধরেই আজ বার্তোমেউকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বার্তোমেউর পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে বার্তোমেউর বোর্ডে বার্সেলোনার মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করা অস্কার গ্রাউ ও সে বোর্ডেই আইনি সেবার দায়িত্বে থাকা রোমান গোমেজ পন্তিকে।

স্প্যানিশ রেডিও কাদেনা সের নিশ্চিত করেছে, আজ সকালে বার্সেলোনার অফিসে অভিযান চালিয়েছে মোসোস দেসকাদ্রা। পাশাপাশি বার্তোমেউ, গ্রাউ ও পন্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত বছরের শুরুর দিকে অভিযোগ ওঠে, বার্তোমেউ ‘আই থ্রি’ নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছেন। উদ্দেশ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-টুইটারে বার্সার সমর্থকদের কাছে বার্তোমেউর সুনাম বাড়ানো আর তাঁর সমালোচনা করা সাবেক ও বর্তমান তারকাদের নিয়ে দুর্নাম ছড়ানো। সে জন্য ফেসবুক-টুইটারে অসংখ্য অ্যাকাউন্ট তৈরি করে অনেক পোস্ট ও মন্তব্য করতে থাকে ‘আই থ্রি’।

মেসি সে সময় বার্তোমেউর বোর্ডের অধীন চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হয়েছিল। মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোকে নিয়েও উল্টাপাল্টা পোস্ট-কমেন্ট করা হতো বলে জানায় স্প্যানিশ রেডিও কাদেনা সের। আর জেরার্ড পিকের সমালোচনা করা হতো তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য। বার্সেলোনার আগামী সভাপতি নির্বাচনে প্রার্থী হোয়ান লাপোর্তার সঙ্গে মেসি-পিকের ভালো সম্পর্কই হয়তো বার্তোমেউর গাত্রদাহের কারণ ছিল।

জাভি-গার্দিওলা-ইনিয়েস্তা-পুয়োলদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি। আর ‘আই থ্রি’ কোম্পানির সঙ্গে এ কাজের জন্য বার্সার বোর্ডের অন্য অনেককে ফাঁকি দিয়ে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ডের গোপন চুক্তি করেন বার্তোমেউ।

কিন্তু কাদেনা সেরে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম এই গোপন চুক্তির কথা ফাঁস হলে ক্লাবের আটজন সদস্য পুলিশের কাছে বার্তোমেউর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। দুর্নীতি ও তহবিল নয়ছয়ের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এই কলঙ্কের নাম তখন স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম দিয়েছিল ‘বার্সাগেট’। এই কলঙ্কের কথা জানতে পেরে বার্তোমেউর অধীন বোর্ডের ছয়জন পরিচালক একসঙ্গে তখন বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন।

বার্তোমেউ-মেসির এই সম্পর্ক শেষ দিকে থাকেনি।
ছবি: সংগৃহীত

বার্তোমেউ অবশ্য তখন সরেননি। কিন্তু বার্সেলোনার সদস্যরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আয়োজন করলে গত ২৭ অক্টোবর সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। তাঁর বদলে ক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পান কার্লেস তুসকেতস।

যদিও তিনিও বার্তোমেউর ‘ভাবশিষ্য’ বলেই গুঞ্জন স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে। তাঁর মূল দায়িত্ব ছিল, যত শিগগির সম্ভব বার্সেলোনার সভাপতি নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু করোনাভাইরাস আর নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়াকে কারণ দেখিয়ে বারবার নির্বাচন পিছিয়েছেন তুসকেতস।

পেছাতে পেছাতে ৭ মার্চ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। যে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী তিনজন। বার্তোমেউ ও তাঁর ‘গুরু’ সান্দ্রো রোসেলের আগে যিনি বার্সেলোনার সভাপতি ছিলেন, ২০০৩ সাল থেকে সাত বছর বার্সার সভাপতি থাকা হোয়ান লাপোর্তা আবার দাঁড়াচ্ছেন নির্বাচনে। এখন পর্যন্ত তাঁর জয়ের সম্ভাবনাই বেশি বলে জানাচ্ছে স্প্যানিশ পত্রিকাগুলো।

তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সায় নতুন দিনের স্বপ্ন দেখানো ভিক্তর ফন্ত ও টনি ফ্রেইসা। এই ফ্রেইসাও রোসেল-বার্তোমেউ ‘গং’–এর সদস্য বলেই শোনা যায়।