মেসির কারণে ফুটবলই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন তাঁর সতীর্থ

মেসিকে অনুশীলনে দেখে ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার কথাই ভেবেছিলেন কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং
ছবি: রয়টার্স

কেভিন প্রিন্স বোয়াটেংয়ের কথাটার আগে-পরের কিছু না শুনলে মনে হতে পারে, লিওনেল মেসি বুঝি আবার কোনো ঝামেলা বাধিয়েছেন! কিংবা পুরোনো কোনো ঝামেলা নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসছেন বোয়াটেং।

গত কয়েক দিন যেভাবে একের পর এক নেতিবাচক খবরের শিরোনামে আসছেন মেসি, তাতে এমন কিছু ভাবা হয়তো অপ্রাসঙ্গিকও নয়। বার্সেলোনার ৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ফর্ম একটু খারাপ যাচ্ছে। বার্সেলোনায় খুব একটা স্বস্তিতেও নেই তিনি।

এর মধ্যে তাঁর ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন যেমন ভাসছে বাতাসে, তেমনি নামটা জড়িয়ে যাচ্ছে অযাচিত-উপযাচিত বিতর্কেও। কখনো কোনো সতীর্থের সঙ্গে তাঁর কল্পিত দ্বন্দ্বের খবর আসছে, তো কখনো শোনা যায় ক্লাবের বোর্ডের সঙ্গে মেসির শীতল যুদ্ধের কথা।

এর মধ্যে প্রিন্স বোয়াটেং যখন বলেন, মেসির কারণে ‘ ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম’, তখন মেসির নতুন কোনো বিতর্কের ঘ্রাণ পাওয়া বিচিত্র নয়। তবে বিতর্ক নয়, জার্মানিতে জন্ম নেওয়া কিন্তু ঘানার হয়ে খেলা ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড কথাটা বলেছেন মেসির প্রতি মুগ্ধতা বোঝাতেই।

ছয় মাস মেসির সতীর্থ ছিলেন তিনি। ২০১৮-১৯ মৌসুমে জানুয়ারিতে লুইস সুয়ারেজের বিকল্প একজন স্ট্রাইকারের খোঁজে কাউকে আনতে না পেরে শেষমেশ ইতালিয়ান ক্লাব সাসসুয়োলো থেকে বোয়াটেংকে ধারে নিয়ে আসে বার্সা। বেশ চমকই জাগিয়েছিল সে দলবদল।

বার্সায় আসার আগে ২০১৬-১৭ মৌসুমেও স্পেনে খেলে গিয়েছিলেন প্রিন্স বোয়াটেং, লাস পালমাসের জার্সিতে তখন বেশ আলোও ছড়িয়েছেন। ২৮ ম্যাচে করেছিলেন ১০ গোল।

বার্সার অনুশীলনে একসঙ্গে মেসি ও বোয়াটেং
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু সেখান থেকে প্রথমে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট ও পরে সাসসুয়োলোতে খুব একটা ভালো কিছু করতে পারেননি বায়ার্ন মিউনিখ ও জার্মানি ডিফেন্ডার জেরোম বোয়াটেংয়ের এই ভাই।

কিন্তু জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর বোর্ডের আর্থিক দৈন্যের কারণে বার্সার তখন দামি কাউকে দলে টানার অবস্থা নেই। মৌসুমের মাঝপথে ভালো স্ট্রাইকার পাওয়াও কঠিন। অগত্যা প্রিন্স বোয়াটেংকে নিয়ে আসা। যেটি বোয়াটেং নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি প্রথমে।

বর্তমানে ইতালির দ্বিতীয় বিভাগ সিরি ‘বি’র দল মনজায় খেলা স্ট্রাইকার জার্মান সাময়িকী ডিএজেডএনে বললেন, ‘বার্সেলোনায় ছয় মাস অবিশ্বাস্য ছিল! (বার্সেলোনার আগ্রহের কথা শুনে) প্রথমে তো নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছিলাম (বার্সেলোনা শহরের আরেক ক্লাব) এসপানিওল আমাকে চাইছে, বার্সেলোনা চাইছে ভাবতেই পারিনি।’

অভাবনীয় ব্যাপারটা যখন সত্যি হলো, বোয়াটেংয়ের মুগ্ধ হওয়ার পালা। এসি মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে, লাস পালমাসের জার্সিতে স্প্যানিশ লিগে মেসি ও বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলেছেন। কিন্তু বার্সেলোনার ট্রেনিং গ্রাউন্ডে অনুশীলনের সুবিধা কিংবা প্রতিদিন মেসির সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ বোয়াটেংয়ের মনে গভীর ছাপই ফেলে গেছে।

‘মেসির সঙ্গে অনুশীলন আমাকে বিবশ করে রেখেছিল। ক্যারিয়ারে প্রথমবার নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। (বল পায়ে) অবিশ্বাস্য সব কাণ্ড করছিল ও। আমার তখন বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল, আমি শেষ! খেলাই ছেড়ে দিচ্ছি আমি!’—বোয়াটেংয়ের স্মৃতিচারণা।

মেসির সঙ্গে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর তুলনাও না চাইতেই টেনে আনলেন বোয়াটেং, ‘আমি সব সময়ই বলতাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু মেসি আরও বিশেষ কিছু। ও সাধারণ কেউ নয়।’

এসি মিলানে থাকতে মেসির বিপক্ষে খেলেছেন বোয়াটেং
ছবি: টুইটার

বার্সেলোনার জার্সিতে সেই মৌসুমে স্প্যানিশ লিগ জিতলেও মাঠে অবশ্য সেভাবে নামা হয়নি বোয়াটেংয়ের। সব মিলিয়ে খেলেছিলেন ৫ ম্যাচে, গোল–টোল কিছু পাননি। মাঠে সেই ছয় মাস যেমনই হতাশাজনক হোক, বার্সা নামটা প্রিন্স বোয়াটেংয়ের বিচিত্র ক্যারিয়ারের উজ্জ্বলতমই বটে।

জার্মানির হার্থা বার্লিনের যুব একাডেমি থেকে মূল দলে সুযোগ পেয়ে ২০০৫ সালে শুরু ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ১৪টি ক্লাবে ঘুরেছেন বোয়াটেং! তাঁর নিজেরও কি এ নিয়ে একটু আক্ষেপ আছে?

বোয়াটেংয়ের কথায় মনে হতেও পারে, আবার না-ও পারে, ‘সব সময় আমি আমার প্রতিভার ওপরই শুধু নির্ভর করেছি। আর আমার যে প্রতিভা ছিল, অহংকার না করেই বলি, ওই প্রতিভা দিয়ে আরও বেশি কিছু করা উচিত ছিল আমার। যদিও আমার যে ক্যারিয়ার কেটেছে, সেটিও খুব সুন্দর।’