মেসির বার্সা ছাড়ায় বাধা: তাঁর বেতন কত, চুক্তির খুঁটিনাটি কী বলে?

বার্সা ছাড়তে চান মেসিছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনার ইতিহাসে এমন দিন সম্ভবত আর আসেনি। কদিন আগে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে যে টুর্নামেন্টটা থেকে বাদ পড়েছে কাতালান ক্লাবটি, সেটিও যেন এখন ফিকে মনে হচ্ছে ক্লাবটার সমর্থকদের কাছে। ক্লাবের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় নিজে থেকে ক্লাব ছাড়তে চান—এমন দিন আসবে, তা যে বার্সা সমর্থকেরা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। মেসি বার্সেলোনা ছাড়ছেন—এমনটা যে জীবনে বিরলতম ঘটনাগুলোর একটি!

চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে এবার এভাবে বাদ পড়া গত কয়েক বছরে বার্সার বোর্ডের একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্তেরই ফল। আগের তিন মৌসুমেও ইউরোপের ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বসূচক টুর্নামেন্টটি থেকে লজ্জায় বিদায় হয়েছে বার্সার। কিন্তু সেটি ঢাকতে বার্সেলোনার বোর্ড একের পর এক ভুল দলবদল করেছে। দলের কী প্রয়োজন, কোচ কী চান, সেটি মাথায় না রেখে একের পর এক তারকার দিকে ছুটেছে। বড় অঙ্কে, বিশাল বেতনে কিনেও এসেছে। ফল? বার্সার আর্থিক সঙ্গতি তো হুমকিতে পড়েছেই, মাঠেও বার্সেলোনা হয়ে পড়েছে ভারসাম্যহীন এক দল। এত তারকা থাকার পরও যে দল ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতিতে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মেসির দিকেই তাকিয়ে থেকেছে সব সময়।

মাঠের এসব ঝামেলা তো আছেই, সঙ্গে মাঠের বাইরেও বোর্ডের নানা কাজে বিরক্ত ছিলেন মেসি। সব মিলিয়েই ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের এই সিদ্ধান্ত। কাল ‘বুরোফ্যাক্সে’র (প্রত্যায়িত পত্র) মাধ্যমে মেসি ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছেন, অপ্রত্যাশিত ঘটনাটিই ঘটছে।
তা মেসি যদি বার্সেলোনা ছাড়েনই, তাঁকে পেতে আগ্রহী ক্লাবের তো আর অভাব হবে না! কিন্তু তাঁকে পেতে গেলে কিছু সমস্যাও যে আছে। একে তো তর্কসাপেক্ষে সময়ের তো বটেই, অনেকের চোখে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের বেতন আকাশছোঁয়া, তারওপর বার্সেলোনার সঙ্গে তাঁর চুক্তিতে খুঁটিনাটি কিছু বিষয় আছে, যেগুলো তাঁর চাইলেই ক্লাব ছাড়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেকের চোখে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দলবলের পথে বাধাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে স্প্যানিশ দৈনিক এএস।

মেসির রিলিজ ক্লজ কত?
বার্সেলোনার বর্তমান সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর অধীনে মেসির সর্বশেষ চুক্তিতে ‘রিলিজ ক্লজ’ (বার্সেলোনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো ক্লাব মেসিকে কিনতে চাইলে যে টাকা বার্সেলোনাকে দিতে হবে) ৭০ কোটি ইউরো। এই অঙ্কে মেসিকে কোনো ক্লাব কিনতে পারবে, সে চিন্তা করাই বাতুলতা। তারওপর মেসির বয়স যেখানে ৩৩, বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তিতে যেখানে আর মাত্র এক বছর বাকি আছে তাঁর। ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দামি দলবদলটাই এর তিন ভাগের এক ভাগ! ২০১৭ সালের আগস্টে বার্সেলোনা থেকেই নেইমারকে নিয়ে যেতে পিএসজি খরচ করেছিল ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো।

তাঁর চুক্তি বাতিলের ধারাটি কি?
তবে মেসির চুক্তিতে একটি ধারা আছে, যেটি কার্যকর হলে তাঁকে পেতে আগ্রহী ক্লাবকে এক ইউরোও খরচ করতে হবে না! ধারাটি এই, মেসি চাইলে প্রতি মৌসুমের শেষে ক্লাব ছেড়ে যেতে পারবেন, সেটিও বিনামূল্যে। তবে সেই ধারাটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে ঝামেলা আছে বলেই মেসির বার্সেলোনা ছাড়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। চুক্তিতে বলা আছে, সেই ধারাটি কার্যকর করতে হলে মেসিকে সেটি জুনের মধ্যে, অর্থাৎ একটা মৌসুম শেষ হয়ে নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে জানাতে হবে। ২০২০ সালের ক্ষেত্রে বার্সাকে মেসির সিদ্ধান্ত জানানোর শেষ সময়টা ছিল ১০ জুনের ২০ দিন আগে।

কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার স্বাভাবিকভাবে চলেনি ফুটবল। মাঝে তিন মাস বন্ধ ছিল ফুটবল। যে মৌসুম শেষ হওয়ার কথা ছিল মে মাসে, সেটি শেষ হয়েছে আগস্টে। সেটি নিয়েই এখন জটিলতা। মেসি চুক্তির সে ধারাটি কাজে লাগিয়ে ক্লাব ছাড়তে চাচ্ছেন। তাঁর আইনজীবীর যুক্তি, করোনার কারণে এবার মৌসুম শেষ হয়েছে আগস্টে। আর মেসি নতুন মৌসুম শুরুর আগেই ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। তাই চুক্তির ধারাটি কাজে লাগাতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বার্সার পাল্টা যুক্তি, মেসির সিদ্ধান্ত জানানোর শেষ সময় ছিল জুন মাসে, সেটি পার হয়ে গেছে। তাই চুক্তির এ ধারা কাজে আসবে না। সে ক্ষেত্রে দুই পক্ষের ঝামেলা মিটমাট হতে পারে আদালতে।

মেসির বেতন কত?
মেসিকে পেতে আগ্রহী ক্লাবগুলোর জন্য একটা বড় বাধা তাঁর বেতনও। এই মুহূর্তে বিশ্বে খুব অল্প কয়েকটি ক্লাবই আছে, যারা মেসির বেতনের ভার বইতে পারবে। কয়েক মাস আগে বিখ্যাত ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে’কিপ জানিয়েছিল, বর্তমান সময়ে বেতনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করা ফুটবলার মেসি। কর কেটে নেওয়ার আগে তাঁর বেতন মাসে ৮৩ লাখ ইউরো! সে হিসেবে বছরে ৯ কোটি ৯৬ লাখ ইউরো! প্রায় দশ কোটি!
তাঁর বেতন, চুক্তির ঝামেলা মেটানো, তাঁর রিলিজ ক্লজ...সব মিলিয়ে মেসির বার্সা ছাড়ার নাটকে অনেক অধ্যায়ই এখনো বাকি।