মেসির বার্সার সামনে রোনালদোহীন জুভেন্টাস সাদামাটাই

জুভেন্টাসকে সাদামাটাই মনে হলো বার্সেলোনার সামনে।ছবি: রয়টার্স

মঙ্গলবারই পদত্যাগ করেছেন বার্সেলোনা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ। লিওনেল মেসিসহ বার্সা ফুটবলারদের অনেকেই সদ্য বিদায়ী সভাপতির কর্মকাণ্ডে ছিলেন বিরক্ত। সে হিসেবে ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই চ্যাম্পিয়নস লিগে জুভেন্টাসের বিপক্ষে মাঠে নামার সুযোগ হয়েছিল তাদের। ম্যাচ শেষেও ফুরফুরে তারা। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ছাড়া খেলতে নামা জুভেন্টাসের বিপক্ষে বার্সেলোনা জিতেছে ২-০ গোলে। তবে স্কোরলাইন ঠিক ম্যাচের সঠিক চিত্রটা দিচ্ছে না। ফরোয়ার্ডরা গোলের সুযোগ নষ্ট না করলে আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত মেসির দল।

এই ম্যাচটা দীর্ঘদিন পর মেসি-রোনালদো দ্বৈরথই হওয়ার কথা ছিল। ২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে চলে যাওয়ার পর যে মাঠে আর তাদের দেখা হয়নি। কিন্তু সে সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল সপ্তাহ দুই-এক আগেই, রোনালদো কোভিড পজিটিভ হওয়ায়। তবে ম্যাচের আগে রোনালদো আবারও কোভিড পজিটিভ হওয়ায় সেই ক্ষীণ সম্ভাবনাটুকুও বিলীন হয়ে যায়। কাল চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠের লড়াইয়ে একটা জিনিস পরিষ্কারভাবেই বোঝা গেছে রোনালদোকে ছাড়া জুভেন্টাস কতটা সাদামাটা।

দেম্বেলের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সা।
ছবি: রয়টার্স

জুভেন্টাসের সমর্থকেরা অবশ্য মন খারাপ করতেই পারেন। প্রিয় দলের হার দেখেছেন বলে নয়, ভাগ্যও যে তাদের বড় একটা সহায় হয়নি। নয়তো আলভারো মোরাতার তিনটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যাবে কেন! প্রথমে বার্সেলোনা গোলরক্ষক নেতোকে একা পেয়ে গোল করে উদ্‌যাপনে মেতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই আশাহত হয়েছেন। প্রথমার্ধেই আরও একবার তাঁর গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। তবে ৫৫ মিনিটে যে গোলটি ভিএআর বাতিল করে দেয়, সেটি দেখে আক্ষেপে পুড়তেই পারেন মোরাতা। অল্পের জন্যই যে অফসাইডের ফাঁদে পড়ে গেছেন তিনি।

এই তিনটি গোল বাতিল হওয়ার বাইরে জুভেন্টাস গোটা ম্যাচেই ছিল বেশ সাদামাটা। বার্সেলোনা দিয়েছে গোল মিসের মহড়া। শুরুতেই জুভেন্টাস থেকে বার্সায় আসা মিরালেম পিয়ানিচের শট ঠেকিয়ে দেন জুভ গোলরক্ষক সেজনি। এর পরপরই আতোঁয়ান গ্রিজমানের শট বার কাঁপিয়ে ফেরত আসে। তবে জুভেন্টাসের তরুণ উইঙ্গার দেয়ান কুলুসেভস্কি পিয়ানিচের এক ভুল ব্যাক পাস ধরেও কাজে লাগাতে পারেননি।

আলভারো মোরাতার তিনটি গোল অফসাইডে বাতিল হয়েছে।
ছবি: রয়টার্স

কাল বার্সেলোনার প্রথম একাদশে গ্রিজমানকে রেখেছিলেন কোচ রোনাল্ড কোমান। ফিলিপে কুতিনিও চোটের কারণে খেলতে পারবেন না—এটা জানাই ছিল। কোমান বার্সার আক্রমণ সাজিয়েছিলেন গ্রিজমান-মেসি আর দেম্বেলেকে দিয়ে। এঁদের পেছনে রেখেছিলেন পেদ্রি। আনসু ফাতিকে খেলাননি। ১৪ মিনিটেই দেম্বেলের গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। এ গোলের সহায়তা এসেছে মেসির কাছ থেকেই। বাঁ দিক থেকে তাঁর পাসে বল ধরেই দেম্বেলে বক্সের একটু বাইরে থেকে কোনাকুনি শট নেন গোল লক্ষ্য করে। তবে তাঁর গোলটি হয়েছে জুভেন্টাস ডিফেন্ডারের শরীরে লেগেই।

জুভেন্টাসের রক্ষণে দুর্বলতাও ছিল প্রচুর। জর্জো কিয়েল্লিনি খেলতে পারেননি, ছিলেন না মাটাইস ডি লিখটও—চোটের কারণেই খেলেননি। ডেমিরেল, দানিলোর সঙ্গে বোনুচ্চিদের দিয়ে গড়া জুভেন্টাস রক্ষণ বারবারই খাবি খেয়েছে মেসি-গ্রিজমানদের ঠেকাতে গিয়ে। গ্রিজমানের একটি শট তো বারে লেগেছেই। আরও একটা শট অল্পের জন্য হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। দ্বিতীয়ার্ধে মেসিও একটা শট বাইরে মারেন।

ডেমিরেলকে ম্যাচের শেষের দিকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে বেরিয়ে যেতে হয় মাঠ থেকে।
ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ডেমিরেল। যোগ করা সময়ে গ্রিজমানের বদলি হিসেবে নামা আনসু ফাতিকে বক্সের মধ্যে ফাউল করলে বার্সেলোনা পেনাল্টি পেয়ে যায়। সেটি কাজে লাগিয়ে স্কোরলাইন ২-০ করেন মেসি।

এই জয়ে বার্সেলোনা গ্রুপ ‘জি’র শীর্ষে উঠে গেল ৬ পয়েন্ট নিয়ে (২ ম্যাচে)। জুভেন্টাসের পয়েন্ট ৩। আগামী ৮ ডিসেম্বর ন্যু ক্যাম্পে আবার মাঠে মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা-জুভেন্টাস।

বার্সার দ্বিতীয় গোলটা পেনাল্টি থেকে করেছেন মেসি।
ছবি: রয়টার্স

জয় পেয়ে দারুণ খুশি বার্সা কোচ কোমান জুভেন্টাসের বিপক্ষে জয়টিকে মৌসুমের সেরাই বলছেন, ‘এটা এ মৌসুমে আমাদের সেরা ম্যাচ। ইউরোপের বড় একটা ক্লাবের বিপক্ষে এ জয়টা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ ম্যাচে যেভাবে চেয়েছি, খেলেছি সেভাবেই। এই ম্যাচে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স, তাদের মানসিকতায় আমি খুশি।’

আন্দ্রেয়া পিরলো জুভেন্টাসের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচটি খেলেছিলেন ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগে, এই বার্সেলোনার বিপক্ষেই। সে ম্যাচে হেরেছিল তাঁর দল। কাল কোচ হিসেবেও নিজের ভাগ্যটা বদলাতে পারেননি তিনি। জুভেন্টাসের কোচ হিসেবে কালই প্রথম হারের স্বাদ পেলেন। তবে কালকের ম্যাচে প্রতিপক্ষের শ্রেষ্ঠত্ব তিনি স্বীকার করেছেন অকপটেই, ‘আমরা জানতাম ম্যাচটা কঠিন হবে। তারা অনেকটাই এগিয়ে শক্তিতে। এ ধরনের বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন খেলোয়াড় বার্সেলোনার বেশি। জুভেন্টাসকে আমরা এ মুহূর্তে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলছি। আমরা কিছুটা সময় চাই।’