মেসির ব্যালন ডি’অর না জেতা হবে কেলেঙ্কারি
চেলসি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতল। অনেকের কণ্ঠেই আওয়াজ উঠল—এবারের ব্যালন ডি’অর জিততে পারেন চেলসি দলের প্রাণভোমরা জর্জিনিও।
কিন্তু লিওনেল মেসি কোপা আমেরিকা জিতে আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাঁর শিরোপা–খরা কাটানোর পর সুরটা আবার বদলে গেল। প্রায় সবার কণ্ঠেই তখন এক সুর—মেসি ছাড়া এবারের ব্যালন ডি’অর আর কার হাতে উঠতে পারে! কিন্তু ১৯ ঘণ্টা পর জর্জিনিওর ইতালি আবার জিতে গেল ২০২০ ইউরোর শিরোপা। এবার শুরু হয়ে গেল দ্বিধাদ্বন্দ্ব। বিশ্বের তাবৎ ফুটবলপ্রেমী নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করতে শুরু করলেন—কে জিতবেন এবারের ব্যালন ডি’অর, মেসি নাকি জর্জিনিও!
প্রশ্নটা সহজ, কিন্তু এর উত্তর দেওয়া একটু কঠিনই। অবশ্য ব্যালন ডি’অর কার পাওয়া উচিত, এ নিয়ে বিতর্ক হয়নি, এমন বছর তো খুব বেশি যায়নি! তবে আপনার ভাবনা যদি হয় আন্তোনিও কাসানোর মতো, তাহলে উত্তর নিয়ে কোনো সংশয়ই থাকার কথা নয়। ইতালির সাবেক ফরোয়ার্ডের চোখে, মেসি ছাড়া আর কেউ এবারের ব্যালন ডি’অর জিতলে তা হবে কেলেঙ্কারি। এমনকি এ ব্যাপারে জর্জিনিও-ও তাঁর সঙ্গে একমত বলে জানিয়েছেন কাসানো!
শুধু যদি কে কোন শিরোপা জিতেছেন, সেটির বিচারেই দেওয়া ব্যালন ডি’অর, তাহলে জর্জিনিও এগিয়ে থাকবেন। বার্সেলোনার হয়ে গত মৌসুমে শুধু কোপা দেল রের শিরোপাই জিতেছেন মেসি। তবে কোপা আমেরিকায় খেলেছেন দুর্দান্ত। আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা–খরা কাটাতে ৪টি গোল করে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ৫টি গোল করিয়েছেন। সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও গেছে তাঁরই অধিকারে। দুর্দান্ত এই মেসিকে ব্যালন ডি’অরের ভোট না দিয়ে উপায় কী!
লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিতলেও বার্সেলোনার হয়ে অবশ্য বছরের শুরু থেকে দুর্দান্ত মেসি ২৮ ম্যাচে গোল করেছেন ২৭টি, করিয়েছেন আরও ৯টি। জানুয়ারিতে যে বার্সেলোনা লিগ শিরোপাদৌড়ে ১০ পয়েন্টের মতো পিছিয়ে ছিল, মেসির কারণেই মার্চ-এপ্রিলে সেই বার্সেলোনা দারুণভাবে ফিরেছিল শিরোপাদৌড়ে।
কিন্তু শিরোপা তো জেতেনি! জর্জিনিও সেখানে এগিয়ে। একই সঙ্গে যে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মালা গলায় পরেছেন চেলসি ও ইতালির মিডফিল্ডার। ইউরোর পর এ নিয়ে তাই জর্জিনিও নিজেই বলেছিলেন, ‘(বর্ষসেরা হওয়ার) স্বপ্ন তো সবাই-ই দেখে। তবে সত্যি বললে, এটা নির্ভর করে ব্যালন ডি’অরে কোন কোন দিক বিবেচনায় নেওয়া হবে সেটি। প্রতিভার বিচারে গেলে আমি জানি, আমি বিশ্বের সেরা নই। কিন্তু শিরোপার হিসাব করলে আমার চেয়ে বেশি শিরোপা এই মৌসুমে আর কেউ জেতেনি।’
কাসানোর কাছে অবশ্য এসব পাত্তাই পাচ্ছে না। কদিন আগে কাসানো বলেছিলেন, ব্যালন ডি’অরে কোনো সাংবাদিক জর্জিনিওকে ভোট দিলে তাঁর সাংবাদিকতার লাইসেন্সই কেড়ে নেওয়া উচিত! সাবেক আরেক ইতালিয়ান স্ট্রাইকার ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরির সঙ্গে ভিডিও সম্প্রচারমাধ্যম টুইচে সে প্রসঙ্গ টেনে এনে কাসানো বললেন, ‘মনে আছে, আমি বলেছিলাম যেকোনো সাংবাদিক ব্যালন ডি’অরে জর্জিনিওকে ভোট দিলে তাঁর লাইসেন্স সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নেওয়া উচিত?’ কিন্তু তাঁর এই মন্তব্যে জর্জিনিও উল্টো একমত হয়েছেন বলেই দাবি কাসানোর।
খেলোয়াড়ি জীবনে রিয়াল মাদ্রিদ, মিলান, ইন্টার, রোমার মতো ক্লাবে খেলা ফরোয়ার্ড ভিয়েরির সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে তা-ই বলেছেন, ‘আমি আমার পরিবার নিয়ে ফরমেনতেরাতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নিরিবিলি একটা জায়গায় বসে ছিলাম। হঠাৎ একটা স্পর্শ অনুভব করলাম। একই সঙ্গে কেউ একজন বলল, “আন্তোনিও, তুমি অসাধারণ!” ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “কে আপনি?” লোকটি তাঁর রোদচশমা আর মাস্ক খোলার পর দেখি, জর্জিনিও!’
সেই সময়েই দুজনের সঙ্গে এবারের ব্যালন ডি’অর নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানান কাসানো। কী সেই কথা, তা শোনা যাক কাসানোর কণ্ঠেই, ‘আমি ওকে বললাম, “জর্জি, ওরা যদি ব্যালন ডি’অর মেসিকে না দিয়ে তোমাকে দেয়, তাহলে এটা যে একটা কেলেঙ্কারি হবে, সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ?” জর্জিনিও আমাকে বলেছে সে এ ব্যাপারে একমত। বলেছে, মেসিরই এটা জেতা উচিত।’
জর্জিনিওর এই উপলব্ধি তাঁকে কাসানোর কাছে আরও ভালো মানুষ বানিয়ে দিয়েছে! ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া ইতালিয়ান ফুটবলারকে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘জর্জিকে এখন আমি আগের চেয়েও বেশি সম্মান করি। ৯০ মিনিটের মতো আমরা কথা বলেছি। ও অসাধারণ একজন মানুষ। খুব বুদ্ধিমান, বিনয়ী আর ভদ্র।’