মেসির রেকর্ডের রাতে বার্সার ‘রিয়াল’ প্রস্তুতি

মেসির গোলের পর বার্সার উচ্ছ্বাস। এরপর আরও চার গোল করেছে বার্সা।ছবি: রয়টার্স।

রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচের প্রস্তুতিটা তাহলে গোল উৎসবেই সেরেছে বার্সেলোনা!

আগামী শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় স্প্যানিশ লিগে মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। বার্সেলোনার মাঠে হবে বার্সা-রিয়াল দ্বৈরথ। মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোর আগে লিগে দুই দলের প্রস্তুতিটা মোটেও ভালো হয়নি। গত রোববার লা লিগায় রিয়াল-বার্সা দুই দলই হেরেছে ১-০ গোলে। রিয়াল নিজের মাঠে কাদিজের কাছে, বার্সা হেরেছে হেতাফের বিপক্ষে।

চ্যাম্পিয়নস লিগে কাল সেই হারের দুঃখ তো ভুলেছেই, রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচের আগে গোল-উৎসবে নিজেদের ঝালাইও করে নিয়েছেন মেসিরা। ২৪ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে আসা ফেরেনৎভারোসের বিপক্ষে বার্সার জয় নিয়ে সংশয় ছিল সামান্যই। নিজেদের মাঠে বার্সা কত গোলে জিতবে, তা নিয়েই বরং ছিল আলোচনা। বার্সা জিতেছে ৫-১ গোলে। গোল করেছেন বার্সার পাঁচ ভিন্ন খেলোয়াড়। বার্সার একমাত্র অপ্রাপ্তি, ম্যাচের ৬৮ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে। আগামী সপ্তাহে জুভেন্টাসের মাঠে তাঁকে পাচ্ছে না বার্সা।

পেনাল্টি থেকে গোল করেই রেকর্ড গড়লেন মেসি।
ছবি: রয়টার্স

মৌসুমের শুরু থেকে দারুণ ঝলক দেখিয়ে চলা ১৭ বছরের তরুণ আনসু ফাতি কালও গোল পেয়েছেন, করিয়েছেন আরেকটি। বায়ার্ন মিউনিখে এক মৌসুম ধারে খেলার পর এই মৌসুমে বার্সায় ফিরে নিজেকে ফিরে পাওয়া ফিলিপ কুতিনিও-ও গোল পেয়েছেন। তরুণ মিডফিল্ডার পেদ্রি বার্সার জার্সিতে করেছেন নিজের প্রথম গোল। চোট কাটিয়ে ফেরা উইঙ্গার উসমান দেম্বেলেও করেছেন গোল। আর মেসি? দেম্বেলের গোলটি গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি পেনাল্টি থেকে দলের প্রথম গোলটি করে গড়েছেন রেকর্ড!

রেকর্ডটা চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে বেশি মৌসুমে গোল করার। চ্যাম্পিয়নস লিগের ৬৪ বছরের ইতিহাসে এ নিয়ে দুজন খেলোয়াড় চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৬ মৌসুমে গোল পেয়েছেন। আগে রেকর্ডটি ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি রায়ান গিগসের দখলে, কাল সেটিতে ভাগ বসালেন মেসিও। তবে একটা দিক থেকে মেসি অনন্য—টানা ১৬ মৌসুমে গোল করা একমাত্র ফুটবলার ৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।

বার্সার আনন্দের মধ্যে পিকের লাল কার্ড দেখার অস্বস্তি।
ছবি: রয়টার্স

রেকর্ড গড়ার মুহূর্তটা এসেছে ম্যাচের ২৭ মিনিটে। পেনাল্টি থেকেই এসেছে, তবে পেনাল্টির আগে ঠিকই দেখা মিলল মেসি ঝলকের। মাঝমাঠের একটু ওপরে ডানদিকে বল পেয়ে সেই চেনা আঁকাবাঁকা দৌড় শুরু মেসির—যেন তরুণ মেসি! প্রথমে এক খেলোয়াড়কে এড়িয়ে গেলেন, এরপর বক্সে ঢুকে ফেরেনৎসভারোসের দুই খেলোয়াড়ের মধ্য দিয়ে বল দারুণভাবে কাটিয়ে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে এক ডিফেন্ডারের ট্যাকলে পড়ে যান। পেনাল্টি! সেটি থেকে গোল করতে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি বার্সা অধিনায়ককে।

মেসির গোলের আগে অবশ্য বার্সাকেই দুবার কাঁপিয়ে দিয়েছিল ফেরেনৎভারোস। একবার বল জালে জড়ায়, কিন্তু গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। এর কিছুক্ষণ পর ফেরেনৎসভারোসের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ইসায়েল বারবোসার শট কাঁপিয়ে দিয়েছিল বার্সার গোলবার। কিন্তু মেসির গোলে স্বস্তি ফিরে পাওয়া বার্সাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৪২ মিনিটে গোল ফাতির। ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের দারুণ লবে ভলি করে মৌসুমে বার্সার হয়ে নিজের চতুর্থ গোলটি করেন ফাতি। প্রথমার্ধের শেষদিকে ফেরেনৎসভারোস গোলকিপার দিবুশ দারুণ দুটি সেভে প্রথমে ফাতি ও পরে ত্রিনকাওকে ‘না’ করলে বার্সা প্রথমার্ধেই আরও এগিয়ে যেত।

দারুণ ছন্দ নিয়ে অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে বার্সা। ৫২ মিনিটে মেসি, ফাতি ও কুতিনিওর দারুণ সমন্বয়ের পর গোল কুতিনিওর। দারুণ ফ্লিকে ব্রাজিলিয়ান প্লেমেকারের গোলটি গড়ে দেন ফাতি। ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়াতেই কি না, বার্সা একটু গা এলিয়ে দিয়েছিল! বার্সা কোচ রোনাল্ড কোমানও ম্যাচের পর এ নিয়ে বলছিলেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ২৫ মিনিট দারুণ খেলেছি আমরা। তবে আমার যেটা খুব একটা ভালো লাগেনি, যে দিকটাতে আমাদের উন্নতি করা উচিত, যে দিকটা আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত, সেটি হলো ম্যাচে আমাদের গা এলিয়ে দেওয়ার মুহূর্তগুলো। আমরা যদি পুরো ম্যাচই একই তীব্রতা নিয়ে খেলতে পারি, বল পায়ে গতি ও ছন্দটা ধরে রাখতে পারি, তাহলে আমরা আসলেই খুব ভালো একটা দল।’

কোমানের ওই কিছু মুহূর্ত পছন্দ না-ই হওয়ার কথা। বার্সার গা এলিয়ে দেওয়ার সুযোগটা যে নিয়েছে ফেরেনৎসভারোস। ৬৮ মিনিটে বার্সা বক্সে গোলমুখে ছুটতে থাকা ফেরেনৎসভারোসের এনগুয়েনের জার্সি টেনে ধরেন পিকে। পেনাল্টি তো বটেই, নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করায় পিকেকে লাল কার্ডও দেখান রেফারি। যদিও লাল কার্ড নিয়ে কোমানের বিশ্লেষণ, ‘সত্যি বলতে একটু বেশিই হয়ে গেছে সাজাটা।’

গোলের পর ফেরেনৎসভারোস আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। চ্যাম্পিয়নস লিগে পাঁচ বদলির সুযোগ আছে, আগেই তিনটি বদলি করে ফেলা কোমান তখন তাই শেষ দুটি বদল আনেন। রক্ষণাত্মক বদলই—কুতিনিওর বদলে নামান সেন্টারব্যাক রোনাল্ড আরাউহোকে, আর পিয়ানিচের বদলে সের্হিও বুসকেতস। ফেরেনৎসভারোসের ফেরার আশা যদি জেগেও থাকে, শেষ দশ মিনিটে সেটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে পেদ্রি ও দেম্বেলের গোল।

৮২ মিনিটে রাইট উইং ধরে দারুণ আঁকাবাঁকা দৌড়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দেম্বেলে বক্সে পাস বাড়ান পেদ্রিকে, ১৭ বছর বয়সী পেদ্রির সেটি থেকে গোল করতে কোনো ঝামেলাই হয়নি। সাত মিনিট পর স্কোরশিটে দেম্বেলে। এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে মেসি বলটা বাড়িয়ে দেন দেম্বেলের দিকে, সেটি থেকে মৌসুমে নিজের প্রথম গোল করেন ফরাসি উইঙ্গার। বড় জয়ের তৃপ্তি তাই কোমানের কণ্ঠে, ‘যখন আপনি একটা ম্যাচ জিতবেন, পাঁচটি গোল করবেন, খুশি তো হওয়ারই কথা!’