মেসির ‘সর্বনাশ’টা করে গেছেন রোনালদোই?

চ্যাম্পিয়নস লিগে মঙ্গলবার ফেরেনৎসভারোসের বিপক্ষে ম্যাচের একটি মুহূর্তে মেসি।ছবি: রয়টার্স

বিরহ? ফুটবলের রোমান্টিকরা বলতে পারেন, সে তো বটেই। জ্বালানি না থাকলে আগুন জ্বলবে কোত্থেকে! লিওনেল মেসিও তাই নিভে আছেন। পুরোপুরি নিভে গেছেন বলা যাচ্ছে না কারণ অন্য দলগুলোর বিপক্ষে আলোটা এখনো ঠিকরে বেরোয়। শুধু রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই জাল খুঁজে পাওয়ার জ্বালানি বা প্রেরণা যা–ই বলুন না কেন, সেটুকু পাচ্ছেন না মেসি। সর্বনাশটা কি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই করে গেছেন!

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী যেহেতু, তাই তাঁদের মধ্যে ‘সর্বনাশ’ শব্দটা কাউকে তেমন একটা চমকে দেবে না। লা লিগায় মৌসুমের পর মৌসুম তো এটাই দেখা গেছে। দ্বৈরথে একজন আরেকজনকে হারানোর পণ করে মাঠে নামতেন। কেউ যেন কাউকে ছাপিয়ে যেতে না পারেন সেই চেষ্টা দেখা গেছে নিয়ত।

২০১৮ সালে রোনালদো রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার পর এই ‘সর্বনাশ’টুকু অন্য অর্থে বুঝিয়েছিলেন মেসি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা অন্য চোখে মাঠে প্রতিনিয়ত ভালো করার প্রেরণাও। এই প্রেরণাটুকু যেহেতু দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে স্পেনের মাঠে মেসির সামনে নেই, সে কারণেই কি না, রিয়ালের বিপক্ষেও জাল খুঁজে পাননি মেসি।

হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য লাগলেও তথ্যটা নির্ভুল। রেকর্ড ভাঙার কারিকুরি অন্য যে কারও চেয়ে খারাপ জানা নেই মেসির। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে তো এটাই করে আসছেন। তবে এমন কিছু ‘অনাকাক্ষিত’ রেকর্ডও আছে, যেগুলো খেলোয়াড়েরা পিঠ থেকে বোঝার মতো নামিয়ে ফেলতে চান। মেসির সামনে আজ এমনই এক নজিরের আরও বেড়ে ওঠা থামিয়ে দেওয়ার সুযোগ। আজ ‘এল ক্লাসিকো’—যা করার করতে হবে আজই!

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি: যখন রাঙাতেন এল ক্লাসিকো।
এএফপি ফাইল ছবি

ক্যাম্প ন্যু–তে আজ এই মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোয় মুখোমুখি হচ্ছে বার্সা–রিয়াল। স্বাভাবিকভাবেই মেসির সামনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের জালে গোল করার সুযোগ। কিন্তু রোনালদো চলে যাওয়ার পর থেকে রিয়ালের বিপক্ষে এই কাজটা করতে ভুলে গেছেন ক্লাসিকোর সর্বোচ্চ গোলদাতা।

রোমান্টিক সমর্থকদের কাছে এই তথ্যটুকু রোনালদোর জন্য মেসির ‘বিরহ দহন’ লাগে? সেটি যে যাঁর মতো ভেবে নিতে পারেন। তবে পরিসংখ্যান বলছে ৬ মে, ২০১৮—এর পর রিয়ালের বিপক্ষে প্রথম গোলের খোঁজে আজ মাঠে নামবেন বার্সা তারকা।

দুই বছর আগের সেই দিনে রিয়ালের হয়ে সর্বশেষ ক্লাসিকোয় মাঠে নেমেছিলেন রোনালদো। সে ম্যাচে রিয়াল তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে যেমন জিততে পারেনি (২–২), তেমনি রোনালদো–মেসিও কেউ কাউকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি। গোল পেয়েছিলেন দুজনেই।

এরপর রোনালদো রিয়াল ছাড়লেন। দিনপঞ্জির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে কেটে গেল ৯০০ দিন। এ সময় রিয়ালের বিপক্ষে ৬ ম্যাচ খেলেছে বার্সা—যার মধ্যে একটিতে খেলেননি আর্জেন্টাইন তারকা। সময়ের হিসেবে ৪৪০ মিনিট। মেসি গোল পাননি!

কিন্তু রিয়ালের জন্য কি এটা ভালো খবর? অন্তত গত কয়েক মাসে মেসির ফেলে আসা পথটা বিবেচনা করে? গত আগস্টেও ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন মেসি। নানা ঘাটে বহু জল গড়ানোর পর সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন তিনি। ক্লাবের প্রতি আগের মতোই প্রতিশ্রুতিশীল—সে কথাও বলেছেন। এই মৌসুমে মাঠে এখন পর্যন্ত তা ভালো প্রমাণ করে চলছেন মেসি।

চ্যাম্পিয়নস লিগে ফেরেনৎসভারোসের মুখোমুখি হওয়ার আগে ৪ ম্যাচে ১ গোল করেছিলেন তিনি। হাঙ্গেরিয়ান ক্লাবটির বিপক্ষে গোল পেয়েছেন পেনাল্টি থেকে। এ ছাড়া মাঠের খেলায় দ্যূতি ছড়াচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু মেসির মতো খেলোয়াড়ের ‘ওপেন প্লে’ থেকে গোল করার খিদে সবচেয়ে বেশি থাকার কথা। আর প্রতিপক্ষ যদি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, তাহলে ক্লাবের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে গোল ছাড়া উপায় কি!

অন্যভাবেও ভাবা যায়। জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর শিবিরের কেউ বার্সার নতুন সভাপতি হিসেবে এলে ক্লাবটির ঘরের মাঠে এটাই হতে পারে মেসির শেষ ক্লাসিকো।
এমন উপলক্ষ কেউ হাতছাড়া করে!