মেসি–রোনালদোর ‘মর্ম’ হাড়ে হাড়ে টের পেল বার্সা–ইউনাইটেড

মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোছবি: রয়টার্স

একজনের বয়স ৩৬ বছর, আরেকজনের ৩৪। ত্রিশের ওপাশে গেলেই বেশির ভাগ ফুটবলার শেষের প্রহর দেখে ফেলেন। তবে নাম দুটো যখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি, প্রচলিত হিসাব–নিকাশ তখন না মেলাই স্বাভাবিক।

মাঠে এখনো কী দাপট তাঁদের, কী ভীষণভাবেই না প্রাসঙ্গিক তাঁরা! দুজনের অনুপস্থিতি কতটা ভোগান্তির, কাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বার্সেলোনা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

ভ্রুকুটির আগে পুরোটা পড়ুন। হ্যাঁ, মেসি এখন বার্সেলোনায় নেই, তিনি এখন পিএসজির। চ্যাম্পিয়নস লিগে আজ রাতে পিএসজির হয়ে মাঠে নামবেন আর্জেন্টাইন তারকা।

ওদিকে কাল রাতে মেসিকে ছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বার্সা। বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ঘরের মাঠে ৩–০ গোলে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণসূচক হারই বলে দেয় কতটা ভুগেছে কাতালান ক্লাবটি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তারা বায়ার্নের এমন দলের বিপক্ষে পর্যুদস্ত হয়েছে, যারা নিজেদের সেরা ফর্মেও ছিল না।’ তবে বার্সা মেসির অভাব কীভাবে টের পেয়েছে, সেটি বুঝতে গেলে আরেকটু গভীরে তাকাতে হবে।

হারের পর নিচু মাথায় মাঠ ছাড়ছেন খেলোয়াড়েরা
ছবি: রয়টার্স

বার্সার হয়ে এত দিন গোল করার পাশাপাশি গোল বানানোর দায়িত্ব পালন করেছেন মেসি। বক্সের আশপাশে এত দিন আর্জেন্টাইন তারকা ছিলেন বার্সার ‘সকল কাজের কাজি’। গোলপোস্টে শট নেওয়ার কাজটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁর কাছ থেকে দেখা গেছে। মেসি পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁকে ছাড়া বার্সার এই প্রথম ম্যাচে কী দেখা গেল—বায়ার্নের গোলপোস্ট তাক করে একটি শটও নিতে পারেনননি রোনাল্ড কোমানের শিষ্যরা।

মেম্ফিস ডিপাই, লুক ডি ইয়ং এবং কুতিনিওরা এ কাজে পুরোপুরি ব্যর্থ। ২০০৩–০৪ মৌসুমের পর এই প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের কোনো ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নিতে ব্যর্থ হলো বার্সা। পরের মৌসুমেই বার্সার মূল দলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষিক্ত হন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড রোনালদোর অভাব টের পেয়েছে অন্যভাবে। কাল সুইস ক্লাব ইয়ং বয়েজের বিপক্ষে ২–১ গোলে হেরেছে ১০ জনে পরিণত হওয়া ম্যান ইউনাইটেড। ১৩ মিনিটে রোনালদোর গোলে এগিয়েও গিয়েছিল ওলে গুনার সুলশারের দল।

দ্বিতীয়ার্ধের ৬৬ মিনিটে সমতায় ফেরার পর যোগ করা সময়ের ৫ মিনিটের মাথায় জয়সূচক গোল তুলে নেয় ইয়ং বয়েজ। ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে, গোটা সময়ে মোট ১৯টি শট নিয়েছে সুইস ক্লাবটি। এর মধ্যে ইউনাইটেডের গোলপোস্ট বরাবর ছিল ৫টি শট। বোঝাই যাচ্ছে, ইউনাইটেডের রক্ষণ ও গোলকিপার ডেভিড দা হিয়াকে মোটেও স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি ইয়ং বয়েজ। যদিও একদম শেষ মুহূর্তে খাওয়া গোলটিতে রোনালদোর বদলি জেসে লিনগার্ডের প্রত্যক্ষ ‘অবদান’ (!) ছিল।

রোনালদোকে তুলে নেওয়ার পর তাঁর সঙ্গে কথা বলেন ইউনাইটেড কোচ সুলশার
ছবি: এএফপি

গোটা ম্যাচে মাত্র দুটি শট নিতে পেরেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দুটি শটই ইয়াং বয়েজের গোলপোস্টে ছিল এবং তা এসেছে রোনালদোর কাছ থেকে ১৩ ও ২৫ মিনিটে। ৭২ মিনিটে তাঁকে মাঠ থেকে তুলে নেন ইউনাইটেড কোচ সুলশার। তখন পর্তুগিজ তারকার মুখ দেখেই বোঝা গেছে, কোচের সিদ্ধান্তে খুশি নন তিনি। ইউনাইটেডে প্রত্যাবর্তনের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে এটাই ছিল তাঁর প্রথম ম্যাচ। টিভিতে দেখা গেছে রোনালদো উঠে আসার পর সুলশার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁকে তুলে আনার কারণটা বোঝাচ্ছিলেন কি না, কে জানে!

তবে রোনালদোকে তোলার কৌশলটা যে বুমেরাং হয়েছে, সেটি তো পরিসংখ্যানই বলে দেয়। ইউনাইটেডের আর কেউ গোল করা দূরে থাক, ইয়াং বয়েজের গোলপোস্টে শটই নিতে পারেননি! রোনালদো থাকলে অন্তত সুইস ক্লাবটির গোলকিপারের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ পেত ইউনাইটেড, তাতে কে জানে হয়তো গোলও মিলত!