মেসি–রোনালদোর স্বপ্নের দলে এই আর্জেন্টাইনকেও চাইতেন ফার্গুসন

১৯৭৮ বিশ্বকাপ শিরোপা হাতে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক দানিয়েল প্যাসারেলা
ছবি: টুইটার

তিনি অনেকের কাছে কোচিংয়ের শেষ কথা। এক কথায় ‘রেফারেন্স পয়েন্ট’। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ। এতটুকু বললেই তো তাঁকে চেনার কথা!

আরেকটু সাহায্য করা যায়। ফুটবলের ইতিহাসে শিরোপা জয়ের সংখ্যায় অন্যতম সফল কোচ। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ক্লাবটিতে ২৬ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে জিতেছেন ৩৮টি শিরোপা। এর মধ্যে ১৩টি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ছাড়াও আছে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ–মুকুট।

২০১৩ সালে ইউনাইটেডকে লিগ শিরোপা জিতিয়ে অবসর নেন কোচিং থেকে। ডাগআউটে তাঁকে সারাক্ষণ দেখা যেত অস্থিরচিত্তে চুইংগাম চিবাতে।

নামটা কি এখনো বলতে হবে!

সৌজন্যের খাতিরে বলে রাখাই ভালো—স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। কিংবদন্তি এ কোচকে বিশেষ এক ‘দায়িত্ব’ দিয়েছে ‘ফ্রান্স ফুটবল’ সাময়িকী।

বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবল একাদশ কোনটা, সেটা জানতে সারা বিশ্বের ফুটবলভক্তদের কাছে ভোট চেয়েছিল তারা। সেই ভোটাভুটিতে কাল চূড়ান্ত হয়েছে ব্যালন ডি’অর ‘ড্রিম টিম’—স্বপ্নের দল।

ভক্তদের ভালোবাসা একই কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছে মেসি-রোনালদো, পেলে-ম্যারাডোনাকে। ফ্রান্স ফুটবল এই স্বপ্নের দলের একাদশ সাজিয়েছে ৩-৪-৩ ছকে। আর এই দলেরই কোচ হিসেবে ফার্গুসনকে বেছে নিয়েছে ফ্রান্স ফুটবল।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন
ফাইল ছবি: এএফপি

স্বপ্নের এই একাদশের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারেননি কিংবদন্তি এই স্কটিশ কোচ। তবে কাকে বাদ দেবেন, সেটিও তিনি ঠাহর করতে পারেননি।

‘ফার্গি’ নামে খ্যাত এ কোচ রসিকতাও করেছেন পেনাল্টি নেওয়া নিয়ে, ‘জানি না পেনাল্টি কে নেবে!’ নিজের ৩৯ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে অনেক বড় বড় দলের মুখোমুখি হয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এ কোচ।

রিয়াল মাদ্রিদের ‘গ্যালাকটিকোস’ কিংবা আর্সেনালের ‘ইনভিন্সিবলস’ ছাড়াও এসি মিলান ও বায়ার্ন মিউনিখের ডাকাবুকো সব দলের বিপক্ষে কৌশল আঁটতে হয়েছে ফার্গুসনকে। কখনো জিতেছেন, কখনো হেরেছেন।

সাক্ষাৎকারে ফ্রান্স ফুটবল জিজ্ঞাসা করেছিল, তাঁর মুখোমুখি হওয়া কোন দলকে সেরা কিংবা স্বপ্নের দলের কাছাকাছি বলে মানেন?

ফার্গুসন বেছে নিয়েছেন পেপ গার্দিওলার বার্সাকে। ২০০৯ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে গার্দিওলার যে বার্সার কাছে হেরেছিল ফার্গির ইউনাইটেড—সেই দলটি নয়।

এর দুই বছর পর ২০১১ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে গার্দিওলার বার্সাকে বেছে নিয়েছেন ইউনাইটেডের সাবেক এ কোচ। সেবারের ফাইনালে বার্সার কাছে ৩–১ গোলে হেরেছিল ফার্গির ইউনাইটেড।

ওয়েন রুনি, পার্ক জি সুং, মাইকেল ওয়েন, ন্যানি, রায়ান গিগস, নেমানিয়া ভিদিচ, রিও ফার্দিনান্দ ও এয়ুইন ফন ডার সারদের নিয়েও ফাইনাল জিততে পারেননি ফার্গি।

অন্যদিকে গার্দিওলার বার্সায় একটি প্রজন্ম ছিল তাঁদের সেরা ফর্মে—লিওনেল মেসি, জাভি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জেরার্ড পিকে, কার্লোস পুয়োল, দানি আলভেজ, ডেভিড ভিয়া, সার্জিও বুসকেটসদের নিয়ে তখন ‘টিকিটাকা’র ছন্দের স্বপ্নের ফুটবল খেলেছে বার্সা।

সেই রাতে মাঠে নামা বার্সার একাদশের সাত খেলোয়াড়ের উঠে আসার ঠিকানা ছিল ক্লাবটির ফুটবলার গড়ে তোলার ‘খামার’—লা মাসিয়া। বেঞ্চে ছিলেন আরও চার ফুটবলার।

গার্দিওলার এই দল নিয়ে ফার্গির ভাষ্য, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলা দলটি হলো, ওয়েম্বলিতে ২০১১ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে যে বার্সার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাদের হারানো অসম্ভব ছিল।’

ফ্রান্স ফুটবলের স্বপ্নের দল নিয়ে ফার্গির তেমন কোনো আপত্তি নেই। তবে আর্জেন্টিনাকে ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক দানিয়েল প্যাসারেলাকে এই দলে নিতে চান তিনি।

যদিও তিনি বলতে পারেননি ঠিক কাকে বাদ দিয়ে এই সংযোজন করা হবে, ‘আমার কাছে মনে হয় একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার প্রয়োজন। সমস্যা হলো, আমি জানি না কাকে বাদ দিয়ে জায়গা খালি করব। ব্যক্তিগতভাবে আমি প্যাসারেলাকে নিতে চাই। সে অসাধারণ। আক্রমণাত্মক ও গতিশীল। মূল রক্ষণে সে বেকেনবাওয়ারকে নিখুঁত সঙ্গ দিতে পারত।’

ফ্রান্স ফুটবলের স্বপ্নের এই দলের রক্ষণে লেফটব্যাকে আছেন পাওলো মালদিনি, সেন্ট্রাল ডিফেন্ডিংয়ে ‘কাইজার’খ্যাত বেকেনবাওয়ার ও রাইটব্যাক হিসেবে জায়গা পেয়েছেন কাফু।

ফুটবলের আধুনিক যুগে ‘সুইপার’ বা ‘লিবেরো’ পজিশন আবিষ্কার করা বেকেনবাওয়ার আক্রমণেও উঠতেন। ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক কাফু ছিলেন ভীষণ আক্রমণাত্মক। মালদিনি ট্যাকলে নিখুঁত হলেও ওপরে উঠে খেলেছেন।

এই তিনজনই আক্রমণে উঠলে প্রতিপক্ষ যদি পাল্টা আক্রমণ করে তখন তো বিপদ! এমন পরিস্থিতিতে রক্ষণ সামলাতে তো একজন লাগবেই—প্যাসারেলা সম্ভবত ফার্গির সেই সমাধান।