মেয়েদের ফুটবল লিগে সাবিনার গোলের ‘সেঞ্চুরি’

লিগে ১০০ গোলের রেকর্ড গড়লেন সাবিনা খাতুনছবি: প্রথম আলো

ম্যাচ শেষ হতে না হতেই মারিয়া মান্দা, মণিকা চাকমারা এসে জড়িয়ে ধরলেন সাবিনা খাতুনকে। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বৃষ্টিভেজা দুপুরে সাবিনা আরেক প্রস্থ ভিজলেন অভিনন্দনবৃষ্টিতে। ক্লাব কর্মকর্তা আগে থেকেই সাবিনার জন্য বানিয়ে এনেছিলেন বিশেষ জার্সি। যে জার্সিতে লেখা, ‘সাবিনা-১০০ গোল’। শুধু সাবিনা নয়, পুরো মাঠেই সব খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কোচেরাও একে একে পরে নেন নীল রঙের বিশেষ এই জার্সি। বসুন্ধরা কিংসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বায়েজিদ আলম যোবায়ের নিপু সাবিনার হাতে তুলে দেন শততম লোগো আঁকা একটি ক্রেস্ট। মাইলফলক ছোঁয়ার এমন আয়োজন ঘরোয়া ফুটবলে খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু মেয়েদের ফুটবল লিগে সাবিনার শততম গোল করার দিনে বসুন্ধরা কিংস যেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।

সাবিনার অর্জনে বসুন্ধরা কিংসের উদ্‌যাপন।
ছবি: প্রথম আলো

মেয়েদের ফুটবল লিগের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে আজ। প্রথম ম্যাচেই চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের মুখোমুখি হয়েছে সদ্য পুষ্করণী যুব স্পোর্টিং ক্লাব। এই ম্যাচ খেলার আগে সাবিনা আরেকটি বড় মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেয়েদের লিগে ক্যারিয়ারের শততম গোল পেতে মাত্র ২ গোল পেছনে ছিলেন সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা। সদ্য পুষ্করণী যুব স্পোর্টিং ক্লাবকে ৫-০ গোলে হারানোর ম্যাচে ২০ ও ৩১ মিনিটে পরপর দুই গোল করে সাবিনা ছুঁয়ে ফেলেন শততম গোলের মাইলফলক। এরপর ৭৮ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাবিনা। ৬৬ ও ৬৮ মিনিটে ম্যাচের অন্য দুই গোল করেছেন আঁখি খাতুন ও মারিয়া মান্দা।

২০১১ সালে সাবিনা মেয়েদের লিগে প্রথমবার শেখ জামালের জার্সিতে করেন ২৫ গোল। এরপর ২০১৩ সালে মোহামেডানের হয়ে খেলা সাবিনা প্রতিপক্ষের জালে দিয়েছিলেন ২৮ গোল। গত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে ৩৫ গোল করে জিতে নেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার। এবারের চলমান লিগে হয়ে গেল গোলের সেঞ্চুরি। চলতি লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা সাবিনা ৮ ম্যাচে করেছেন ১৩টি গোল। সবচেয়ে বেশি গোল সাবিনার সতীর্থ কৃষ্ণা রানী সরকারের। টাঙ্গাইলের তরুণীর গোলসংখ্যা ১৭।

মাঠে নামলেই মুড়িমুড়কির মতো গোল করেন। অনেক আগেই সাবিনা পেয়ে গেছেন ‘গোলমেশিন’ উপাধি। বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাবিনার নাম। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে দেশের বাইরে খেলেছেন পেশাদার লিগে।

দেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন সাবিনা।
ছবি: প্রথম আলো

২০১০ সাল থেকে টানা জাতীয় দলে খেলছেন সাবিনা। ছয় বছর ধরে জাতীয় দলের অধিনায়ক। এসএ গেমস, সাফ, এএফসি, ফুটসাল, প্রীতি টুর্নামেন্ট ও ক্লাব ফুটবল মিলিয়ে খেলেছেন ১৩৩টি ম্যাচ। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর খেলা ম্যাচ ৩৪। গোল ১৮টি। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে গোল করেছেন ৩৭১টি। এর মধ্যে ঘরোয়া ফুটবলে তাঁর গোল ২৭৯টি। বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে যা এক বিরল রেকর্ড। সর্বশেষ বসুন্ধরা কিংসের হয়ে দুই মৌসুমে করলেন ৪৮ গোল।

যখন যে দলের জার্সি পরেন, মাঠে অপ্রতিরোধ্য সাবিনা। নিশ্চিন্তে দলকে জেতানোর দায়িত্ব নেন। সাবিনার মুভমেন্ট, পাসিং, ড্রিবলিং একসময় মুগ্ধ করেছিল সাতক্ষীরা জেলা দলের কোচ আকবর আলীকে। এরপর সাতক্ষীরার পলাশপোল থেকে তুলে এনে ছেড়ে দেন জাতীয় দলের মঞ্চে। এরপর মাতিয়ে চলেছেন ক্লাব ফুটবলও।

১০০ গোল করার পর সাবিনার হাতে স্মারক তুলে দিল বসুন্ধরা কিংস
ছবি: প্রথম আলো

শততম গোলের পর উচ্ছ্বসিত সাবিনা বলছিলেন, ‘নিজের কিছু কিছু রেকর্ড আমি মনে করি বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের জন্য একরকমের অনুপ্রেরণা। কারণ, আমার পরে যেসব মেয়ে আসবে, তারা এই রেকর্ড অনুসরণ করে সেটা অতিক্রম করার চেষ্টা করবে। আমার ক্যারিয়ার আরও শক্তিশালী করে রেখে যেতে চাই। এটা আমার জন্য বড় একটা পাওয়া। আমি যত দিন ফুটবলে আছি, ধারাবাহিকভাবে গোল করে যেতে চাই। গোলের মাইলফলকের এই রেকর্ডটা এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যেন অন্য কোনো মেয়ের তা ভাঙতে অনেক কষ্ট হয়।’